দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৪ সেপ্টেম্বর: আশ্বর্িনের অঝোর ধারার বৃষ্টি ও যানজটে থমকে গেছে রাজধানীর জনজীবন৷ একদিন বিরতী দিয়ে বুধবার দুপুরে রাজধানীতে আবার শুরু হয়েছে অবিরাম বৃষ্টি৷ ফলে রাজধানীর অনেক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে৷ রাজধানীতে বৃষ্টির কারনে যানজটে পড়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হলেন নগরবাসী৷ বুধবার বৃষ্টিতে রাজধানীর সব এলাকার রাস্তায় পানি জমে যায়৷ যে কারনে অফিস থেকে বাসায় ফিরতে অসহনীয় যানজটের কবলে পড়তে হয়৷এমনিতেই ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের জন্য রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা৷ মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, মতিঝিল, শান্তি নগর আর মৌচাক এলাকা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে৷ খানা খন্দরে ভরে গেছে রাজধানী ঢাকার রাজপথ৷ এমন কোন দিন নেই যে ছাত্রছাত্রী বা বৃদ্ধরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন৷ এরই মাঝে বুধবারের প্রবল বর্ষনে যানজট প্রকট আকার ধারন করে৷
সাধারণত আশ্বিন মাসে খুব একটা বৃষ্টি হয় না৷ কিন্তু এবার বর্ষার চেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত হচ্ছে অসময়ে৷ সেপ্টেম্বর মাসে দফায় দফায় প্রবল বর্ষনে দেশের ১৬ জেলায় বন্যা হয়েছে৷ আর বুধবারের বৃষ্টি রাজধানীর মানুষের জন্য চরম দুর্ভোগ ডেকে আনে৷ যাত্রাবাড়ী, কারওয়ান বাজার, ফকিরাপুল, মালিবাগ, খিলগাঁও, নয়াবাজার, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, মহাখালী, বনানী, গুলশান, মগবাজার এলাকায় বৃষ্টি জমে যায়৷বর্ষায় পানি না জমলেও পুরান ঢাকার বনগ্রাম, শশীমোহন বসাক লেন, উত্তর মৈশন্ডি, লালবাগ, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, ধলপুর এবং হাজারীবাগের অনেক রাস্তায় হাটু পানি জমে যায়৷ মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, ডেমরা, শ্যামপুর, মাতুয়াইল, শনির আখড়াসহ নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে যায়৷ ফলে দেখা দেয় তীব্র যানজট৷এক ঘন্টার রাস্তা যেতে তিন ঘন্টা সময় লেগে যায়৷
দুপুরের পর স্কুল কলেজ ও অফিস ছুটির পর বাড়ি ফিরতে কর্মজীবীদেও প্রচন্ড দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে৷ সড়কগুলোতে পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে বিপত্তি ঘটে৷ বৃষ্টির কারণে রাস্তায় গণপরিবহণ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ পরিবহণের জন্য অপেক্ষা করতে হয়৷ তীব্র যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশকে অসহায় মনে হয়েছে৷বৃষ্টির সঙ্গে ঈদ-পূজায় বিকি-কিনি রাজধানীবাসীর ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ৷ ফলে রাজধানীর ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষসহ সাধারণ নাগরিকদের দুর্ভোগের অন্ত নেই৷ যানজটের কারণে যথাসময়ে কর্মস্থলে পৌঁছানোই ছিলো রাজধানীবাসীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ৷ অফিস শেষে বৃষ্টি ও অসহনীয় যানজটে আবার শুরু হয়েছে বাসায় ফেরার যুদ্ধ৷
অব্যাহত বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে গেছে৷ঢাকা মহানগরীর কিছু সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি৷ পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে চলছে একই কাজ৷মালিবাগের বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, বর্ষা শুরু হলেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ৷ আর দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে৷ সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীর সড়কগুলো জলাশয়ে পরিণত হয়৷ পানি ওঠে ঘরে৷ঢাকার প্রধান এলাকাগুলোর পাশাপাশি নিম্নাঞ্চলের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে৷ রাস্তায় রিকশা-গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে৷ ময়লা পানির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে৷
রামপুরা এলাকার ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন বলেন, কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে রাস্তার সংস্কার এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করার কারণেই পানি সরতে পারছে না৷ ফলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে৷রাজধানীর শান্তিনগরের রসূল আলী জানান, বৃষ্টির সময় দোকানের ভেতরে পানি ওঠে৷ রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ এ সময় ফুটপাত দিয়েও মানুষ হাঁটতে পারে না৷ রাস্তায় সিটি করপোরেশনের ময়লা-আবর্জনাগুলো পানিতে ভেসে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷মালিবাগ মোড় থেকে কাকরাইল, শান্তিনগর, রাজারবাগে ফুটপাতে হকারদের পণ্যের বজর্্যগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়৷ বৃষ্টি হলে আবর্জনায় ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে যায়৷রামপুরায় গৃহিণী আনোয়ারা বলেন, রাস্তা সংস্কারের কাজ ও বৃষ্টির কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে৷ঈদ-পূজার বিকি-কিনির কারণে অনেকে মার্কেটগুলোর সামনে রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ী পাকিং করে রাখায় যানজট আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে৷
বৃষ্টিতে হাজারীবাগের নিম্নাঞ্চল, পুরান ঢাকা, পীরেরবাগ, সেনপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া, আদাবর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, মিরপুর, টিকাটুলি, বাসাবো, মুগদা, মধুবাজার, শ্যামলী, রামপুরা, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে৷
প্রতিদিন এই যানজট ও জলাবদ্ধতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে নগরবাসীর৷ দুর্ভোগের অবসান হবে কত দিনে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানে না নগরবাসী৷ এদিকে, বর্ষা মৌসুম বিদায়ের আগে আরো দুদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে৷গত কয়েক দিনের মতো বুধবারও রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়েছে৷আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে৷ আর রাজধানীতে বৃষ্টি ঝরেছে ১৭ মিলিমিটার৷
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, এমন আবহাওয়া শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে৷ এরপর দুয়েক দিন রোদেলা আবহাওয়ার ফাঁকেই বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে৷তিনি জানান, বর্ষা মৌসুম বিদায়ের প্রাক্কালে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে৷ অক্টোবরের প্রথমার্ধে বিদায় নেবে বর্ষা৷ এর আগ পর্যন্ত মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হতে পারে৷আবহাওয়ার ২৪ ঘন্টার পূর্বাভাসের বিষয়ে অধিদপ্তর জানায়, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে৷ সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে৷
বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়, আগামী দুই দিন আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হতে পারে৷ তবে পরের পাঁচ দিন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই৷অক্টোবর মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়, মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুপ্রবাহ (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে পারে৷ স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি এ সময় বঙ্গোপসাগরে দুয়েকটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে; যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে৷