দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর: মুক্তিযুদ্ধের সনদ বাতিল হওয়া চার সচিবের বিরুদ্ধে উচ্চতর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত৷তিনি বলেন, সনদ বাতিল হওয়া একজন সচিব নাকি নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন৷ আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য দিনরাত কাজ করছেন৷ আর আপনারা (আমলারা) মজা নেবেন, তা হয় না৷ এঁদের শক্ত হাতে দেখা দরকার৷
মঙ্গলবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমির এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান৷সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আমাদের গর্ব করার মতো দুটি জিনিস্তমুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতা৷ চারজন আমলা রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায় থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, তামাশা করেছেন৷ তাঁদের শুধু সনদই বাতিল নয়, উচ্চতর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে৷
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অযোগ্য, সুবিধাবাদী ও অপদার্থ লোকজন রয়েছে, এদের বের করে দিতে হবে’ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের এমন মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন সুরঞ্জিত বলেন, এই সব পদার্থ, অপদার্থরা যখন ব্যাংকের পর্ষদে ঢুকল, তখন কী আপনার অনুমোদন প্রয়োজন হয়নি? আপনি দেখেননি?’ব্যাংকের পর্ষদের পরিচালক কারা হবেন, মন্ত্রীর মামা-ভাগনে না যোগ্যরা হবেন, সে ব্যাপারে ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীল ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি৷
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী প্রসঙ্গে সংসদের আইন, বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত বলেন, সংসদ আইন পাস করতে পারে৷ কিন্তু সেটা যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করতে পারেন৷যাঁরা এ সংশোধনী নিয়ে আপত্তি করছেন, তাঁরা হরতাল না দিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন৷তিনি দাবি করেন, বাহাত্তরের সংবিধানে যা ছিল, ষোড়শ সংশোধনীতে তা-ই আনা হয়েছে৷ একটি দাঁড়ি কিংবা কমা বেশি সংযোজন করা হয়নি৷
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি দেশের স্বার্থবিরোধী হরতাল ডেকে ঘরে বসে থাকাকে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন৷সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, দেশের মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে হরতাল আহবান করলে তাতে জনগণ সাড়া দেবে না৷ বিএনপির হরতালেও মানুষ সাড়া দেয়নি৷ তিনি বলেন, বিএনপি খোকাকে (সাদেক হোসেন খোকা) বাদ দিয়ে কিশোরকে (মির্জা আব্বাস) দিয়ে কমিটি গঠন করলেও সে কিশোরকে-ও মাঠে দেখা যায়নি৷ জনগণের স্বার্থের বাইরে কর্মসূচি দিলে কিশোর কেন কোন যুবককে দিয়ে কমিটি দিলেও কোন লাভ হবে না৷
তিনি বলেন, দেশে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে৷ এ সরকারের মেয়াদ শেষে নির্বাচনের মাধ্যমে অপর একটি সরকার দায়িত্ব নিলে দেশের জন্য মঙ্গল হবে৷ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কীনা তা দেখার দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টের৷ সংসদ কেবল আইন প্রণয়ন করতে পারে৷ এ আইন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কীনা- তা তার (সংসদের) দেখার দায়িত্ব নয়৷
তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যদি কোন বক্তব্য থাকে তাহলে তাদের সুপ্রিমকোর্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷তিনি বলেন, বিচারপতিদের অপসারণের বিষয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানে যে বিধান ছিল কেবল মাত্র তাই ফিরিয়ে আনা হয়েছে৷ তার বাইরে কোন কিছু পরিবর্তন করা হয় নি৷ দেশের বিশিষ্ট পার্লামেন্টেরিয়ান সুরঞ্জিত দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আমলাদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়া এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের ব্যাপারে কঠোর সমালোচনা করেন৷
সংগঠনের উপদেষ্টা হাজী মো. সেলিম এম পি’র সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি৷এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হারম্নন চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দৰিণ যুবলীগের সাবেক আহবায়ক মিনহাজ্ব উদ্দিন মিন্টু, ধানমন্ডি থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দা রাজিয়া মোস্তফা ও সংগঠনের মহাসচিব হুমায়ুন কবির মিজি প্রমুখ৷