দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৩ সেপ্টেম্বর: দেশে ফলমূলে ফরমালিন শনাক্তে ব্যবহৃত যন্ত্র (ফরমালডিহাইড মিটার জেড ৩০০) সঠিক নয় বলে প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার পরিষদ (বিসিএসআইআর)৷মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনকারীর আইনজীবীর কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় বিসিএসআইআর৷
এক রিটের প্রেক্ষিতে গত ২১ জুলাই ফরমালিন পরীক্ষণ যন্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট৷ এক মাসের মধ্যে বিসিএসআইআর ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক এবং ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরোটরির পরিচালককে ওই যন্ত্র পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলেন আদালত৷এ নির্দেশনা অনুসারে বিসিএসআইআর’র প্রতিবেদন পান বলে জানান রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ৷প্রতিবেদন পাওয়ার পর মনিজল মোরসেদ সাংবাদিকদের জানান, এ যন্ত্রটি ফলমূল পরীক্ষণ যন্ত্র নয়৷ অর্থাত্ ফরমালিন পরীক্ষণ যন্ত্রটি সঠিক নয়৷গত ১৩ জুলাই বাংলাদেশ ফ্রেশ ফুড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাধন চন্দ্র দাশ ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম হাইকোর্টে এ রিট আবেদনটি করেন৷
বিসিএসআইআর- এর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধানে যন্ত্রটি বাজার থেকে সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি৷সংশ্লিষ্ট রিটের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তিনি বিসিএসআইআর ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. হারুন স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন৷
প্রস্তুতকারক কোম্পানির ব্যবহারবিধি ও ওয়েবসাইটের তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এনভায়রনমেন্টাল সেন্সর নামের এক কোম্পানির তৈরি করা জেড ৩০০ মডেলের ফরমালডিহাইড ভ্যাপর মিটার যন্ত্রটি পরিবেশ ও বাতাসে ফরমালডিহাইডের বাস্প মাপার সংবেদনশীল যন্ত্র৷ এর মাধ্যমে বাতাসে ফরমালডিহাইড গ্যাসের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব৷ওই যন্ত্র ব্যবহার করে খাদ্যে ফরমালডিহাইডের পরিমাণ জানার কোনো অ্যাপ্লিকেশন নোট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দেয়নি বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়৷
বিসিএসআইআর জানিয়েছে, নমুনা হিসাবে বাজার থেকে আম, মাল্টা, লাল আঙুর,খেঁজুর ও আপেল সংগ্রহকরেও তারা পরীক্ষা করে দেখেছে৷এতে বলা হয়, সংগ্রহ করা ফলের নমুনা ৫ শতাংশ ফরমালডিহাইড এর দ্রবনে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে কক্ষ তাপমাত্রায় শুকানো হয়৷ তারপর দ্রবণ মেশানো ফল এবং ফ্রেস ফল পলিথিন ব্যাগে ভরে কিছুক্ষণ রেখে ব্যাগের ভেতরের বাতাসে ফরমালডিহাইড পরীক্ষা করা হয়৷ জেড ৩০০ ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতেই বাজারের ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত৷
নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, এই যন্ত্রটি ভেজানো ফল ও ফ্রেশ ফলের ফরমালডিহাইডের যে পরিমাণ দেখায় তা সময়, তাপমাত্রা ও আদর্্রতার উপর নির্ভরশীল৷ উষ্ণ তাপমাত্রায় ফ্রেশ ফলেও অধিক ফরমালডিহাইডের পরিমাণ দেখায়৷ তাই ফল উষ্ণ থাকলে এই যন্ত্র ফরমালডিহাইডের পরিমাণ সম্পর্কে ভুল তথ্য নির্দেশ করতে পারে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসিটোন, ফরমিক এসিড, এসিটিক এসিড ও মিথানলের উপস্থিতিতেও যন্ত্রে ফরমালডিহাইডের উপস্থিতি দেখাতে পারে৷ এসব রাসায়নিক প্রাকৃতিকভাবেই ফরমালডিহাইডের মতো রাসায়নিক উপাদান তৈরি করতে পারে৷ এ কারণেও ওই যন্ত্র ভুল তথ্য দেখাতে পারে৷এই যন্ত্র ব্যবহার করে খাদ্যের ফরমালডিহাইড পরিমাপ করতে হলে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ্লিকেশন ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে যন্ত্রটির উন্নয়ন ঘটিয়ে ফুড অ্যাপ্লিকেশন নোট সরবরাহ করা প্রয়োজন৷
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফুড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি সাধন চন্দ্র দাশ ও সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম গত ১৩ জুলাই হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন৷ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি পর গত ২১ জুলাই বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. হাবিবুল গণির বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেয়৷
আদেশে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক এবং ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরোটরির পরিচালককে ওই যন্ত্র পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়৷মনজিল মোরসেদ বলেন, আমরা কেবল বিসিএসআইআর এর প্রতিবেদন পেয়েছি৷ বাকিদের প্রতিবেদন হাতে পাইনি৷
রিট আবেদনে অভিযোগ করা হয়,ফরমালডিহাইড মিটার জেড ৩০০ নামের যে যন্ত্রটি দিয়ে বাংলাদেশে ফলে ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা হয়েছে বাতাসে ফরমালিন মাপার জন্য৷
এই মামলার শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, ফলে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ জঘন্য অপরাধ এবং তা বন্ধ করা প্রয়োজন৷ কিন্তু এই সুযোগে যদি সঠিক যন্ত্র ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ফরমালিন পাওয়ার অজুহাতে হাজার হাজার টন ফল ধ্বংস করা হয়, তা ব্যবসায়ী, কৃষি ও ভোক্তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ৷ যেহেতু যন্ত্র নিয়েই প্রশ্ন উঠছে, তাই এর পরীক্ষা করা প্রয়োজন৷এর আগে একটি মামলার রায়ে ফল পাকাতে এবং তাজা রাখতে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেয় হাই কোর্ট৷
ওই রায়ে বলা হয়, ছয় মাসের মধ্যে দেশের সব স্থল ও সমুদ্র বন্দরে দকেমিকাল টেস্ট ইউনিট স্থাপন করতে হবে, যাতে আমদানি করা ফল রাসায়নিক পরীক্ষা করে বাজারে ছাড়া হয় এবং রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো কোনো ফল দেশের প্রবেশ না করতে পারে৷এছাড়া রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে কেউ যাতে ফল বিক্রি করতে না পারে সেজন্য কমিটি করে সারা বছর সব ফলের বাজার ও সংরক্ষণাগারে পর্যবেক্ষণ চালানোরও নির্দেশ দেয়া হয়৷
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ, ফল, সবজিসহ খাদ্যপণ্যে ফরমালিন শনাক্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ফরমালডিহাইড মিটার জেড ৩০০ ব্যবহার করা হচ্ছে৷