দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম,২৩ সেপ্টেম্বর: বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রদলের অতীত সুনাম থাকলেও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্ব তা ডুবাতে বসেছে। পুলিশের পিটুনি থেকে বাঁচতে ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজের হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনাকে লজ্জাজনক ও দলের মর্যাদা ক্ষুণ্ণকারী বলে মন্তব্য করেছেন নগর ছাত্রদলের সাবেক দুই সভাপতি।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপির প্রথম হরতালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজের একটি আলোকচিত্র নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ওই ছবি ছাত্রদলের অতীত ঐতিহ্য ও আপোষহীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ছাত্রদলের মিছিলে পুলিশের ধাওয়া থেকে বাঁচতে গাজী সিরাজ উল্লাহর হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ছবিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ছাত্রদলের তৃণমূল থেকে সাবেক নেতাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ ও প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার ২০ দলীয় জোটের হরতালের দিন সোমবার দুপুরে নগরীর কাজীর দেউড়ির নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে একটি মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ছাত্রদলকর্মীরা ইটপাটকেল ছুঁড়লে পুলিশ লাটিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এসময় মিছিলকারীরা যে যেভাবে পেরেছে পালিয়ে গেলেও পুলিশের সামনে পড়ে যান ছাত্রদল সভাপতি গাজী সিরাজ। এক পুলিশ সদস্য লাঠি নিয়ে তেড়ে আসতে থাকলে লাঠিপেটা থেকে বাঁচতে গাজী সিরাজ ছাত্রদলের মানমর্যাদার মাথা খেয়ে পুলিশের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চান।
এই ছবি নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করে একে লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি।
প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনের এ নেতা ফেসবুকে লেখেন, ‘দুঃখিত, নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজউল্লাহ ভাই। দেখুন, আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশবাহিনী কত সহনশীল। বিনা উসকানিতে আপনার নেতাকর্মীরা যখন পুলিশকে ইট পাটকেল ছুঁড়ে মারে আজ এবং পরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে খোদ আপনাকেই একা ফেলে তারা দৌড়ে পালালেও পুলিশ কিন্তু আপনাকে গ্রেপ্তার করতে পারত। কিন্তু পুলিশ আপনাকে গ্রেপ্তার করে নাই এমনকি কোনো প্যাদানিও দেই নাই আজ।’
রণি আরো লেখেন, ‘যদিও আপনার হাতজোড় করা আকুতি নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করার দৃশ্যটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে স্মরণকালের লজ্জার চিহ্ন হয়ে থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এরপরেও আপনার অন্যসব নেতাকর্মীদের মতো আপনিও অ্যাথলেটিকস্ এর কৌশলটি আপনাদের কঠোর আন্দোলন কর্মসূচীর পূর্বেই ভালভাবে রপ্ত করতে পারবেন এই আশাবাধ ব্যক্ত করলাম।’
সিরাজের এমন কাণ্ড নিয়ে ছাত্রদলের সাবেক দুই সভাপতিও লজ্জিত হয়েছেন। এমনকি তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী এনিয়ে ব্যাপক হাসাহাসির পাশাপাশি তার নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে এনিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তারা নগর ছাত্রদল সভাপতির এটি আন্দোলন ও আপোষহীনতার বাস্তব নমুনা (?) বলে উল্লেখ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও নগর বিএনপির বর্তমান কমিটির সহসভাপতি আবু সুফিয়ান দৈনিকবার্তাকে বলেন, ‘ওই সময় আমি সেখানে ছিলাম না। পরে গিয়ে পুলিশ ছাত্রদলের মিছিলে ধাওয়া দেয়ার কথা শুনেছি। পুলিশের লাঠিপেটা কিংবা ধাওয়ার ভয়ে একজন ছাত্রদল নেতার এই ধরনের আচরণ করা উচিৎ হয়নি। এটি যদি সত্যি হয়, তাহলে সেটি ছাত্রদলের জন্য খুবই লজ্জাজনক ও ভয়াবহ। অতীতে আমরাও আন্দোলন সংগ্রাম করেছি তবে পুলিশের সামনে এরকম আচরণ করেনি।’
এরপরও বিষয়টিকে মিডিয়ায় প্রচার না করার জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন বিএনপির এ নেতা।
নগর ছাত্রদলের আরেক সাবেক সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম ইকবাল দৈনিকবার্তাকে বলেন, ‘আন্দোলন করতে গিয়ে জেল-জুলুম কীভাবে সহ্য করতে হয় সেগুলো আমরা দেখিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে নেতারা ঘরে আর গাড়িতে বসে সময় ব্যয় করে। উপর থেকে নেতৃত্ব পাওয়া নেতাদের আচরণ এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। পুলিশের লাঠিপেটার ভয়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি কোনভাবেই ছাত্রদলের ইমেজের সাথে যায় না। নেতৃত্ব ও জ্ঞানের অভাবেই সে এরকম একটা লজ্জাজনক কাজ করতে পেরেছে। নেতৃত্ব দিতে হলে আপোষহীন ও সাহসী ভূমিকা নিয়ে সামনে থেকে দিতে হবে। হাতজোড় করে পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে কিংবা পালিয়ে নয়।’
তবে হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ দৈনিকবার্তা কে বলেন, ‘হরতালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মিছিলের সময় পুলিশ বিনা উসকানিতে আমাদের মিছিলে লাঠিপেটা করেছে। এরপরও সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা রাজপথে ছিলাম। আমি তখন পুলিশকে বলেছি, আমার নেতাকর্মীদের নয়, প্রয়োজনে আমাকে মারো। এছাড়া সেখানে মহিলা দলের কিছু কর্মী ছিল তাদের লাঠিপেটা না করতেই পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম।’
তার এরকম আচরণ ছাত্রদলের ইমেজের সাথে যায় কি না এমন প্রশ্নে গাজী সিরাজ বলেন, ‘না না আমি পুলিশের কাছে ক্ষমা চাইনি। আমি মহিলা দলের নেত্রীদের কাছে হাতজোড় করে বলেছিলাম, তারা যাতে কোনো ঝামেলা না করে রাস্তায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়।’