দৈনিকবার্তা-গৌরনদী, ২৩সেপ্টেম্বর: নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক সংসদ সদস্যের অনুকুলে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচীর গত অর্থ বছরের আওতায় বরাদ্দসহ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় প্রায় ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়৷ বরাদ্ধকৃত টাকা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে হরিলুট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
সরেজমিনে গিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট লোকজন, এলাকাবাসী, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের জন্য কাজের বিনিময় টাকা (কাবিটা) বিশেষ ও সাধারন প্রকল্পে ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ১ শত ২৫ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়৷ আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের অধীনে আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ে ২৩ লাখ ৬২ হাজার ৫শত টাকায় ১৪ টি ও সাধারন বরাদ্দে ১১ লাখ ২৫ হাজার ৬শত ২৫ টাকায় আরো ৬টি প্রকল্প গ্রহন করা হয়৷ স্থানীয় লোকজন ও গ্রামবাসি জানান, কাগজে কলমে প্রকল্প দেখানো হলেও বাস্তবে তেমন কোন কাজ করা হয়নি৷ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে অধিকাংশ প্রকল্প কমিটির কর্মকর্তারা কাজ না করে, কোথাও কোথাও নামেমাত্র কাজ করে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত পুরো টাকা আত্মসাত করেছে৷
আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পাশ্বর্ে রাস্তা থেকে গবিন্দ মন্দির পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণ প্রকল্পে (বি ঃ প্রকল্প নং ৪) ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ করা হয়৷ গ্রামবাসীর অভিযোগ প্রকল্প চেয়ারম্যান বাকাল ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের সভাপতি রাজেশ্বর রায় কাজ না করে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাত্ করেছে৷ বাকাল গ্রামের সুধীর দাস, পরিতোষ দাস, নরেন্দ্র নাথ রায় অভিযোগে করেন, কাজ না করে প্রকল্প চেয়ারম্যান রাজেস্বর রায় প্রকল্পের পুরো বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাত করেছে৷ একইভাবে রাজেশ্বর বাকাল ইউনিয়নের গবিন্ন্দরের ইটের মাথা হইতে নওয়াপাড়া হয়ে বাকাল সিমানা পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মান প্রকল্পের ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন৷ অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রকল্প চেয়ারম্যান রাজেশ্ব রায় বলেন, অভিযোগের কোন সত্যতা নাই, কাজ করার পর বৃষ্টিতে মাটি ধুয়ে গেছে৷
আগৈলঝাড়ার রাজিহার ইউনিয়নের বাসাইল শুভুদের আকরা হইতে জিতেন হালদারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পের জন্য (বিশেষ প্রকল্প নং ১) ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়৷ এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রকল্প চেয়ারম্যান রাজিহার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসম্পাদক ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মলিনা রানীর স্বামী রাম কৃঞ্চ হালদার কোন কাজ না করে সমুদয় অর্থ আত্মসাত করেন৷ আকরার পুরোহিত সুবোধ চন্দ্র মজুমদার অভিযোগ করেন, আকরার সামনে থেকে কাজ শুরু করার কথা কিন্তু প্রকল্প চেয়ারম্যান কোন কাজ না করে বরাদ্দ পকেটে পুরেছেন৷ অভিযোগ সম্পর্কে প্রকল্প চেয়ারম্যান রাম কৃঞ্চ হালদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে নারাজ৷ তার স্ত্রী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মলিনা রানী বলেন, পুরোপরি কাজৃ করা হয়েছে, অতি বৃষ্টিতে হয়েতো কিছু ধুয়ে যেতে পারে৷
এ ছাড়া গৈলা ইউনিয়নের নগরবাড়ি আনোয়ার বিশ্বাসের বাড়ি হইতে বুদ্ধি বালার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নিমর্ান প্রকল্পের জন্য ( বিঃ প্রকল্প নং ৯) ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়৷ স্থানীয়রা জানান, প্রকল্প চেয়ারম্যান এক বিন্দু কাজ করেননি৷ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আনোয়ার বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বুদ্ধি বালার বাড়ি পর্যন্ত কোন রাস্তা নেই৷ নগর বাড়ি গ্রামের মজিবর খান, আনু বিশ্বাসসহ বিশ্বাস বাড়ির অনেকেই জানান, এখানে কোন রাস্তা নেই, কাগজে রাস্তা দেখিয়ে বরাদ্দ আত্মসাত করেছে৷
প্রকল্প চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. এনায়েত হোসেন অভিযোগ সম্পকের্ বলেন, অভিযোগ সত্য নয়, রাস্তাটি করতে বরাদ্দের চেয়ে আরো বেশী ৫৭ হাজার টাকা খরচ হয়৷ এ ছাড়া আগৈলঝাড়ার অন্যান্য অধিকাংশ প্রকল্পে গিয়েও কাজ করার নমুনা পাওয়া যায়নি৷ ওই সব প্রকল্পের চেয়ারম্যানরা দাবি করেন, কাজ করার পর বৃষ্টিতে মাটি ধুয়ে গেছে৷
আগৈলঝাড়া প্রকল্প কর্মকর্তা শচীন্দ্র নাথ বৈদ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন অনিয়ম দূর্নীতি হয়নি, যথাযথভাবে প্রকল্প বাস্থবায়ন করা হয়েছে৷উপজেলা প্রকল্প কমিটির সভাপতি আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মূর্তজা খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেক আগে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে অতি বর্ষনে মাটি ধুয়ে গেছে৷ আত্মসাতের আভিযোগ সঠিক নয়৷প্রকল্প অফিস সুত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন কাজ শেষে এসব প্রকল্পের বিল পরিশোধ করা হয়৷