দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর: সুনি্ন মতাবলম্বী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) দমন করতে সিরিয়ায় বিমান হামলা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি মিত্র দেশও হামলায় অংশ নিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে৷ তবে হামলায় যোগ দেয়া অন্য কোনো দেশের নাম প্রকাশ করেনি তারা৷
সোমবার এক বিবৃতিতে পেন্টাগনের প্রেস সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল জন কিরবি বলেন, আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি যে, মার্কিন সেনাবাহিনী ও মিত্র দেশের বাহিনীগুলো সিরিয়ার ভিতরে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিচ্ছে৷জঙ্গি ও বোমারু বিমান থেকে হামলা চালানোর পাশাপাশি আইএসের স্থাপনায় টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে বলে জানান তিনি৷বিবৃতিতে কিরবি বলেন, অভিযান চলছে৷ এই মুহূর্তে আর কিছু বলার মতো অবস্থায় আমরা নেই৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান ও বাহরাইনও অভিযানে অংশ নিয়েছে৷ তবে এসব দেশ অভিযানে কী ভূমিকা রাখছে তা এখনো স্পষ্ট নয়৷বিমান হামলায় কাতার সহযোগিতা করছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান৷অন্য এক কর্মকর্তা জানান, অন্তত একটি মার্কিন জাহাজ থেকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়৷ অভিযানে মার্কিন ড্রোনও ব্যবহার করা হয়৷হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের আড়াইশ মাইল উত্তরপূর্বের রাক্কা শহরে আইএসের সদরদপ্তরও রয়েছে৷
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, রাক্কায় ইসলামিক স্টেটের উপর হামলা হতে পারে বলে সোমবার রাতে সিরিয়ার জাতিসংঘ প্রতিনিধিকে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷সিরিয়া ও ইরাকের সীমান্তবর্তী একটি বড় এলাকা দখলে নিয়ে সেখানে খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে আইএস৷ইরাকের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগ রয়েছেতাদের বিরুদ্ধে৷ এরইমধ্যে তাদের হাতে বন্দী দুই মার্কিন সাংবাদিক ও এক ব্রিটিশ ত্রাণকর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে আইএস৷
এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে দমাতে এর আগে ইরাকে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র৷ আইএসকে দমাতে ইরাক সরকার যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চাওয়ার প্রেক্ষিতে ওই হামলা হয়৷ তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি৷আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তার প্রস্তাব দিলেও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়৷ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বহু বেসামরিক নাগরিককে হত্যার অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা৷ সে কারণ দেখিয়ে বাশার সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে কোনো অভিযানে যাওয়ার বিষয়টি নাকচ করা হয়৷
এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া সিরিয়ায় কোনো ধরনের সামরিক ব্যবস্থা নিলে তা আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে বলে প্রেসিডেন্ট বাশারের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করা হয়৷চলতি মাসের শুরুর দিকে আইএসবিরোধী অভিযানের রূপরেখা তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা কোনো গ্রুপ স্বর্গরাজ্য পাবে না৷আমরা আইএসকে পর্যুদস্ত করে দেব এবং তাদের পুরোপুরি ধ্বংস করে দেব৷
তার এই বক্তব্যের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সিরিয়া সরকারের আইনগত অনুমোদন না নিয়েই সেখানে আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে সরাসরি কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট৷জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া এ পদক্ষেপ এক ধরনের আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক আইনের বড় ধরনের লঙ্ঘন৷সিরিয়ার অনুমতি ছাড়া সেখানে কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ হামলা বলেই গণ্য হবে বলে সিরিয়া সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়ে আসছে৷