দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ২০ সেপ্টেম্বর: গাজীপুরে শনিবার এক পোষাক কারখানার এক নারী শ্রমিক নিহত এবং অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ্য হয়েছে৷ এঘটনার পর শ্রমিক অসনত্মোষ ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই কারখানাসহ আশেপাশের কয়েক কারখানা শনিবার ছুটি ঘোষণা করেছে সংশিস্নষ্ট কারখানা কতর্ৃপৰ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কারখানা এলাকায় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ শ্রমিকদের দাবী কারখানার সরবরাহ লাইনের পানি পান করে এক নারী শ্রমিক নিহত ও শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ্য হয়েছে৷ তবে উচ্চ রক্তচাপের কারণে এক নারী শ্রমিক মারা গেছে এবং ভয়ে কয়েক শ্রমিক অসুস্থ্য হয়েছে বলে কারখানা কর্তৃপৰ দাবী করেছে৷ নিহতের নাম শাহিদা (৩৪)৷ সে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার বিয়ারা গ্রামের মো. সেলিম এর স্ত্রী৷ শাহিদা গাজীপুর মহানগরীর মোগরখাল এলাকার ম্যাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার সুয়িং সেকশনের কর্মী ছিল৷ গাজীপুরের জেলা প্রশাসন ও শিল্প পুলিশের উধর্্বতন কর্মকতর্াগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন৷
কারখানার কর্তৃপৰ, শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর মহানগরীর মোগরখাল এলাকার ম্যাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা শনিবার সকাল আটটায় কারখানায় এসে কাজে যোগ দেয়৷ স্থানীয় ঢাকা বাইপাস মোড় এলাকার হেলাল কমপেস্নঙ্ ভবনের ৫ম থেকে ৭ম তলা পর্যনত্ম ওই কারখানায় ১২’শ ৫০ শ্রমিক কাজ করে৷ শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়ার পর কারখানার সরবরাহ লাইন থেকে পানি পান করে৷ সকাল সোয়া ৮টার দিকে ওই কারখানার শাহিদা নামের এক নারী শ্রমিক হঠাত্ অসুস্থ্য হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়৷ সহকর্মীরা সুচিকিত্সার জন্য তাকে স্থানীয় বোর্ডবাজার এলাকার তায়েরম্নন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়৷ সেখানে চিকিত্সাধীন অবস্থায় সে মারা যায়৷ কারখানার সরবরাহ লাইনের পানি খেয়ে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছে এমন খবর দ্রম্নত কারখানার শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা আতংকিত হয়ে পড়ে৷ এঘটনার পর পর্যায়ক্রমে কয়েক শ্রমিক বমি করতে থাকে এবং মাথা ঘোরা, খিচুনী ও মুখ দিয়ে লালা ঝরাসহ অসুস্থ্য হয়ে পড়তে থাকে৷ এসময় কর্তৃপৰ কারখানার সরবরাহ লাইন থেকে শ্রমিকদের পানি পান না করার জন্য মাইকে ঘোষণা দেয়৷ এরপর মুহুর্তেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে৷ কিছুৰণের মধ্যেই অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে৷ সহকমর্ীরা অসুস্থ্যদেরকে রিঙ্া, কার, লেগুনা ও স্কুটারসহ বিভিন্ন গাড়ি দিয়ে গাজীপুর সদর হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিত্সার জন্য নিয়ে যায়৷ এদিকে কারখানার শ্রমিক নিহত ও অর্ধশতাধিক অসুস্থ্য হওয়ার ঘটনায় ওই ভবনের সবক’টি কারখানাসহ আশেপাশের কারখানাগুলোর শ্রমিকরা বিৰুদ্ধ হয়ে উঠে৷ তাদের দাবী কারখানার সরবরাহ লাইনের পানি পান করে এক নারী শ্রমিক নিহত ও শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ্য হয়েছে৷ এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে জয়দেবপুর থানা পুলিশ এবং শিল্প পুলিশের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে৷ শ্রমিক অসনত্মোষের কারণে এদিন স্থানীয় বিভিন্ন কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপৰ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
কারখানার ম্যানেজার (প্রশাসন) শেখ তাহমিনা পারভীন জানান, হার্ট এ্যাটাকে শাহিদা নামের এক নারী শ্রমিকের মৃতু্যর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পূর্ব থেকেই শাহিদা উচ্চ রক্তচাপের (হাই প্রেসার) সমস্যা ছিল৷ সকালে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠার পর সে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে৷ তাকে দ্রম্নত হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে সে মারা যায়৷ কারখানা কর্তৃপৰ কারখানার মাইকে ঘোষণা দিয়ে তার মৃতু্যর সংবাদ জানায় এবং তার জন্য দোয়া করতে সবাইকে অনুরোধ করে৷ মাইকে ঘোষণার পর কিছুৰণের মধ্যেই কারখানার অর্ধশতাধিক শ্রমিক পর্যায়ক্রমে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে৷ কারখানার রিজার্ভ ট্যাংকের পানি পান করে না-কি অন্য কোন কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না৷ শ্রমিকরা প্রতিদিন এ পানি পান করে, কিন্তু কোন সমস্যা হয় নি৷ অথচ আজ কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না৷ তবে গরম ও শারীরিক দুর্বলতার জন্য শ্রমিকরা সহকর্মীর মৃতু্যর সংবাদে আতংকিত হওয়ায় অসুস্থ্য হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে৷ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এদিন কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে৷
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ শাহ আলম শরীফ জানান, ওই কারখানার অসুস্থ্য অনত্মতঃ ৪৮ শ্রমিককে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যনত্ম গাজীপুর সদর হাসপাতালে আনা হয়েছে৷ এদের কয়েকজনের মধ্যে খিচুনী, মুখ দিয়ে লালা ঝরাসহ বমি ভাব রয়েছে৷ তবে অসুস্থ্য শ্রমিকদের মাঝে খাবারে বিষক্রিয়ার লৰণ দেখা যায় নি৷ ধারনা করা হচ্ছে এক নারী শ্রমিক নিহত হওয়ার খবরে এসব শ্রমিকরা ‘মাস সাইকোজেনিক ইলনেস’র কারণে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে৷
গাজীপুর সদর হাসপাতালের জরম্নরী বিভাগের চিকিত্সক মো.শাহীন জানান, হাসপাতালে আনা অসুস্থ্য শ্রমিকদের মাথা ঘোরানো, খিচুনী, মুখ দিয়ে লালা ঝরাসহ বমি ভাব ও পেটে ব্যাথার মতো লৰণ রয়েছে৷ তবে ওয়াটার পয়জনিং কি-না তা দেখা হচ্ছে৷
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন জানান, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এদিন ওই কারখানা ছাড়াও ভবনের অপর তিনটি লাজিম, নিডল টাচ ও রেড ফিউরি গার্মেন্টসসহ আশেপাশের কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপৰ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷