651afc629115f593f9bfcaf990974aa5-09

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর: গণভোট প্রমাণ করল স্বাধীনতা চান না স্কটিশরা৷ তাঁরা থাকতে চান যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই৷ শুক্রবার গণভোটের প্রাথমিক ফলাফলে জানা গেছে এমনটাই৷ এতে করে যুক্তরাজ্য অখণ্ডই থাকল৷ তবে স্কটল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসনের দরজা একেবারে বন্ধ হয়নি৷ কারণ না ভোট জিতলেও স্কটিশদের একটা বড় অংশ হ্যাঁ ভোট দিয়েছেন বা সমর্থন করেছেন৷ তাই হ্যাঁ ভোটের সমর্থকেরা মনে করেন স্বাধীনতা লাভের ভবিষ্যত্‍ এখনো উজ্জ্বল৷যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই থাকার রায় দিল স্কটল্যান্ডের জনগণ৷ ঐতিহাসিক গণভোটে প্রত্যাখ্যাত হল ৩০৭ বছরের পুরনো ব্রিটিশ ইউনিয়ন ভেঙে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা৷

এই ফলাফল লাখ লাখ ব্রিটনের মতো প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকেও স্বস্তি এনে দিল৷ স্কটল্যান্ডের গণভোট নিয়ে ডেভিড ক্যামেরনের প্রধানমন্ত্রিত্ব হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল৷ পাশাপাশি দেশটির মিত্ররাও যুক্তরাজ্যের সম্ভাব্য ভাঙ্গনের শঙ্কায় পড়েছিলেন৷স্কটল্যান্ডের ৩২টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ইতোমধ্যে ৩১টির ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে৷ তাতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থাকতে চাওয়ার পক্ষে ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ আর স্বাধীনতাকামীরা পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ ভোট৷

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্কটল্যান্ড আত্মপ্রকাশ করবে কি না তা নিয়ে ‘হ্যাঁ’ ও না ভোটের আয়োজন করা হয়৷ বৃহস্পতিবার দিনভর ঐতিহাসিক গণভোটে ভোট দেয়ার জন্য প্রায় ৯৭ শতাংশ ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন৷না ভোট জয়ী হলে স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই থাকবে, আর হ্যাঁ জয়ী হলে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ হতো স্কটল্যান্ডের৷

কিন্তু শুক্রবার ৩১টি নির্বাচনী এলাকার ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, ‘না’ ভোটই জয়যুক্ত হয়েছে৷ অর্থাত্‍ স্কটিসরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই থাকতে চায়৷স্কটল্যান্ডের ৪২,৮৫,৩২৩ জন ভোট দেয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন যা মোট ভোটের ৯৭ শতাংশ৷ দেশটির ৩২টি কাউন্সিলের নাগরিকরা এই ভোটে অংশ নিয়েছেন৷বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়৷ শেষ হয় রাত ১০টায়৷ দেশটির ২৬০৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলে৷

স্কটিস ন্যাশনালিস্ট পাটির্র উপনেতা নিকোলা স্টারগেওন দাবি করেছেন, দেশজুড়ে হাজারো মানুষের মতো আমিও সর্বাত্মকভাবে স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছি৷ কিন্তু হতাশার সঙ্গে জানাতে হচ্ছে আমরা খুব স্বল্প ব্যবধানে হেরে যাচ্ছি৷

স্বাধীনতার পক্ষগোষ্ঠী যেখানে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন বিপরীতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থাকতে চাওয়া গোষ্ঠী ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দ আর উল্লাসে মেতে উঠছে৷আশা করা হচ্ছে যুক্তরাজ্যের রাণী এলিজাবেথ ও প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই ফলাফল উপলক্ষ্যে বিবৃতি দেবেন৷

স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষগোষ্ঠী সবচে বড় শহর গ্লাসগোতে জয় লাভ করলেও অন্যান্য নির্বাচনী এলাকায় প্রত্যাশিত ফল লাভে ব্যর্থ হয়৷ এএফপিতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, স্থানীয় ৩২টি কাউন্সিলের মধ্যে ৩১টির ফলাফলে দেখা গেছে, ‘না’ ভোট পড়েছে ৫৫.৪২ শতাংশ৷ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে ৪৪.৫৮ শতাংশ৷ ফল জানার পরে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে ‘হ্যাঁ’ ভোটের সমর্থকদের৷যেসব স্কটিশ ব্রিটিশ শাসনের অবসান চেয়েছিলেন, গণভোটের এই ফলাফলে তাঁরা অনেকটাই হতাশ৷ তবে অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা চিন্তিত ছিলেন, এই ফলাফলে তাঁরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত হয়েছেন৷

পরাজয় মেনে নিয়ে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার ও স্বাধীনতাকামী নেতা অ্যালেঙ্ স্যামন্ড এডিনবরায় জানান, বেশির ভাগ মানুষ না ভোট দিয়েছেন৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ স্কটিশ স্বাধীনতা চান না৷ এই পরিস্থিতিতে স্কটল্যান্ড স্বাধীন দেশ হতে পারবে না৷ তবে স্যামন্ড মনে করেন, এই ফলাফল স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার ভবিষ্যত্‍কে অনেকটাই উজ্জ্বল করে৷ কারণ ‘হ্যাঁ’ ভোটের সংখ্যাও কম নয়৷ অর্থাত্‍ জনগণের একটা বড় তাদেও সঙ্গে আছে৷

স্কটল্যান্ডের উপফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজেনের বাড়ি গ্লাসগোতে বড় জয় পেয়েছে ‘হ্যাঁ ভোট৷ তবে না ভোটের বন্যাকে সেটি রুখতে পারেনি৷ ধারণা করা হচ্ছে যে গ্রামাঞ্চলে ‘না ভোট বেশি পড়েছে৷ কিন্তু শহরে এবং দরিদ্র এলাকাগুলোতে ‘হ্যাঁ’ ভোটের সংখ্যা বেশি৷স্ট্রাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিষয়ক অধ্যাপক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ জন কার্টিস বলেন,এটা স্পষ্ট যে না ভোট জিতেছে৷ফলাফলের বিষয় বিবিসির পূর্বাভাস দেওয়ার পরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন টুইটারে দেওয়া বার্তায় না প্রচারাভিযানের অন্যতম নেতা অ্যালিস্টার ডার্লিংকে অভিনন্দন জানান৷

ভোটের ফলাফলে যুক্তরাজ্যের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল স্কটিশ পার্লামেন্টকে আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ একই সঙ্গে ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ স্কটল্যান্ডের ডেপুটি ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন বলেন,গণভোটে এটা প্রমাণ হয়েছে যে বড় একটা অংশ পরিবর্তন চায়৷ তাই যুক্তরাজ্যের সরকারকে জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতি পালনে আরও তত্‍পর হতে হবে৷ তিনি বলেন, স্কটল্যান্ড বদলেছে৷ এই বদলের ধারণা থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই৷