দৈনিকবার্তা-মৌলভীবাজার, ১৯ সেপ্টেম্বর: দেশের দশটি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এক বৈশিষ্ট্যময় মিশ্র চির হরিত বর্ষারন্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান৷ আর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শুধু একটি সংবেদনশীল বনই নয়, এটি বিশ্বের দুর্লব আর বিলুপ্ত প্রায় অনেক উদ্ভিদ ও প্রানীর আবসস্থল হিসেবে স্বীকৃত থাকলেও দিন দিন ছোট হয়ে আসছে এই বনটির আয়তন৷ দখল হয়ে গেছে বনটির বিশাল অংশ৷ এই দখল পক্রিয়া অব্যহৃত থাকায় ধংশের মুখে পড়ছে বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য৷ দেড় বছরেও শুরম্ন হয়নি লাউয়াছড়া বনাঞ্চলের তদনত্ম কাজ৷
জানা যায়, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের আওতাধীন মৌলভীবাজার রেঞ্জের অধিনে রয়েছে চাউতলী, কালাছড়া ও লাউয়াছড়া বনবিট৷ দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগের কতিপয় অসাধূ কর্মকর্তার সহায়তায় বিভিন্ন রাজনৈতীক দলের প্রভাবশালীরা সংরক্ষিত বনের কালাছড়া ও লাউয়াছড়া বনবিটের প্রায় ৭০০ একর জমি দখল করে রেখেছেন৷ দখলকৃত জমির প্রাকৃতিক বন উজার করে তারা গড়ে তুলেছে লেবু, আনারস ও কাঠাল বাগান৷ ১৯৯৬ সালে এই বনের কমলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ভানুগাছ অংশের ১২৫০ হেক্টর এলাকাকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়েছিল৷
ওই বছর ইউএসএইডের অর্থায়রে নিসর্গ সাপোর্ট প্রজেক্ট জাতিয় উদ্যানে এক জরিপ পরিচালনা করে বনাঞ্জলের লংগুরপাড়, বাগমারা, ছাতকছড়া এলাকায় ৫৫৬ একর বনভূমি দখল হয়ে গেছে বলে তাদের দেওয়া তথ্যে জানিয়েছিল৷ বর্তমানে দখলদাররা প্রতিনিয়তই বন উজার করে তাদের দখলপ্রকৃয়া অব্যহৃত রখেছে৷ যার কারনে দিনে দিন ছোট হয়ে আসছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্দ্যানের পরিধি৷ এই দখল পক্রিয়া অব্যহৃত থাকায় বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ধংশের মুখে পড়ছে৷ পাশাপাশী বন্যপ্রানীরা হারাচ্ছে তাদের নির্ঝঞ্জাট জীবনযাপনের পরিবেশ৷ ইতিমধ্যে বন্যপ্রানীর অভয়াশ্রম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে খাদ্য সংকট দেখা দেয়ায় লোকালয়ে বেরিয়ে পড়েছে বন্যপ্রাণীরা৷ গত পাচঁ বছরে লোকালয়ে ধরা পরা এক হাজার ছয়শত বায়াত্তরটি বন্যপ্রাণী লাউয়াছড়া বনে ছাড়া হয়েছে৷ মিশ্র-চিরহরিত্ লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্টে রয়েছে প্রায় ৪০৭ প্রজাতির জীব ও কীট-পতঙ্গ-অনুজীব, ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষ-গুল্ম-লতা, ৬ প্রজাতির বানরসহ ২০ প্রজাতির বন্যপ্রানী, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ৪ প্রজাতির উভচর এবং ৬ প্রজাতির সরীপৃক প্রাণী৷
এদিকে দেড় বছরেও শুরু হয়নি লাউয়াছড়া ও কালাছড়া বনাঞ্জলের তদনত্ম কাজ৷ সরজমিনে তদনত্ম পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য ২০১৩ ইং এর ১৬ আক্টোবর মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দেত্তয়া হয়েছিল৷ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই দীর্ঘ সময়ে এ বিষয়ে একটি অনানুষ্টানিক বৈঠক হয়েছে মাত্র৷
তত্কালিন সময়ে লাউয়াছড়া জাতিয় উদ্দ্যানের আইপ্যাক প্রজেক্টে এর দায়িত্ব প্রাপ্ত নজরম্নল ইসলাম জানান, ওই সময় এ বিষটি নিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকাশ কানত্মি চৌধুরী উনার দফতরে একটি অনানুষ্টানিক বৈঠকে করেছিলেন৷ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের এসিএফ রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আজহারম্নল ইসলাম৷ বৈঠক থেকে প্রকাশ কানত্মি চৌধুরী এ বিষয়টি তদনত্ম পূবর্ক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপস্থিত বন বিভাগের কর্মকর্তাদেরকে বলেছিলেন৷
তত্কালিন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আজহারম্নল ইসলাম বলেন, বৈঠকে ইউএনও সাহেব লাউয়াছড়া বনাঞ্জল জরিপ কারর জন্য বলেছিলেন৷ কিন্তু জরিপ করা হয়নি বলে তিনি জানান৷ তত্কালিন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমানে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (রাজস্ব) প্রকাশ কানত্মি চৌধুরী বলেন, ওই বিষয়টি তদনত্ম করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা জন্য বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বলেছিলাম৷
দেশের বিলুপ্ত প্রায় উলস্নুক তাদের শেষ আশ্রয় স্থল হিসাবে বেঁচে নিয়েছিল এই বনাঞ্চলকেই৷ সমপ্রতি মার্কিন বন্যপ্রানী গবেষক ড.এলিয়ট হাইমফ লাউয়াছড়ার উপর একটি তথ্য চিত্র নির্মান করে গেছেন৷ এ সময় তার সঙ্গে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশ, জাপান, ও যুক্তরাজ্যর বন্যপ্রানী গবেষক ও পরিবেশবীদরা তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এটি এমন একটি বন, যেখানে রয়েছে বিশ্বের বিপন্ন ও বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র৷ তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, দিন দিন বন উজার, শব্দ দুষনে লাউয়াছড়া উদ্ভিদ প্রানী বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে৷