দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর: টিভি উপস্থাপক মওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যা করেছে জঙ্গি সংগঠন। তার হত্যার পেছনে দুইটি জঙ্গি সংগঠনকে সন্দেহ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তে আহলে হাদিস ও রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) জড়িত থাকতে পারে। আহলে হাদিস অন্তত ৬ গ্রুপে বিভক্ত। এই গ্রুপগুলোর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আরএসও’র যোগাযোগ রয়েছে। আহলে হাদিস থেকে বের হয়ে জেএমবি, জেএমজেবি, শাহাদত-ই-আল হিকমা ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম গঠন করে জঙ্গি কার্যক্রম চালানো হয়।
ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আহলে হাদিসের একটি গ্রুপ গোপীবাগে কথিত পীর লুেফার রহমানসহ ৬ জনকে গলা কেটে হত্যা করে বলে গোয়েন্দা পুলিশ ধারণা করছে। একই কায়দায় গত বছর ৭ আগস্ট খুলনায় কথিত পীর তৈয়বুর রহমান ও তার ছেলে মনিরুল ইসলামকেও গলা কেটে হত্যা করে এই গ্রুপ। ১৯৮৮ সালে বাগেরহাটের কথিত পীর মজিবুর রহমান চিশতীকে গলা কেটে হত্যা করে রাজশাহীর আহলে হাদিস গ্রুপের আব্দুল মতিন সালাফী গ্রুপ। আব্দুল মতিন সালাফী গ্রুপ ভারতের বিহার রাজ্যের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। আব্দুল মতিন সালাফীর অনুসারী ছিলেন রাজশাহীর অধ্যাপক আসাদুল্লাহ আল গালিব। ১৯৯২ সালে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ শূরী রোডে একজন পীর ও তার প্রধান মুরিদকে বিষয়টিও মওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকী খুনের সঙ্গে একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছেন ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পর্কে ডিবি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, দুইটি জঙ্গি সংগঠন ফারুকীকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে ডিবি। হত্যাকাণ্ডে কারা সংশ্লিষ্ট ছিলো এখন তাদের সনাক্ত করার কাজ চলছে। এই দুইটি জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে তিনি জানান। ডিবি’র ওই তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রটি আরো জানায়, ধর্ম ভিত্তিক একটি বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন আহলে হাদিসের একটি গ্রুপের প্রধান। ওই গ্রুপের প্রধান ব্যক্তি গাজীপুরে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করেন। এছাড়া কুমিল্লার বুড়িচং ও চৌদ্দগ্রাম এলাকায় তার অনুসারীর প্রধান ঘাঁটি।
গত ২৭ আগস্ট রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর ১৭৪, পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় ঢুকে স্ত্রী ও স্বজনদের আটকে রেখে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ডিবি মাহমুদা বেগম (৪০) ও তার অনুসারী শরীফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়। এ ব্যাপারে ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, এই দুই জনের সঙ্গে হত্যার সংশ্লিষ্টতা থাকতেও পারে, আবার না থাকতে পারে। এদেরকে সন্দেহের বাইরে রাখা হচ্ছে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, তদন্তে ফারুকী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গোপীবাগের সিক্স মার্ডারের সঙ্গে ফারুকী হত্যাকাণ্ডের মিল রয়েছে। তাই দুই মামলার তদন্ত একইভাবে চলছে।
ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করার পর তার পরিবার এখন আতংকে রয়েছে। তার দ্বিতীয় স্ত্রী লুবনা বাসা থেকে বের হন না। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ফয়সাল ফারুকী তার বাবা নিহত হওয়ার পর ক্যাম্পাসে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। ফয়সাল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বারিধারায়। বাসা থেকে বের হতে ভয় করে। আতঙ্কে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে যান না তাদের পরিবারের কেউ। ব্যবসা সংক্রান্ত জরুরি কাজে বাসার বাইরে যেতে হয় ফারুকীর ছেলে আহমাদ রেজা ফারুকীকে। ফারুকীর ছোট ছেলে মোহাম্মদপুরের কাদেরিয়া তৈয়ব্যা আলিয়া মাদরাসার দাখিল পরীক্ষার্থী ফুয়াদ ফারুকী জানান, দুর্বৃত্তরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আতঙ্ক কাটবে না। তার বাবার মৃত্যুর পর থেকে তিনিও মাদ্রাসামুখী হননি।