দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর:জামায়াতের সঙ্গে কখনই সমঝোতা করা হবে না্তবা আপোষ করবো না বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷ বুধবার সাঈদীর রায় ঘোষণার পর রাজধানী গুলশানে নিজের বাসায় এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন৷তিনি বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের দেয়া আমৃতু্য কারাদণ্ড রায় মেনে নিয়েছি৷ তবে যেসব অপরাধে সাঈদী খালাস পেয়েছেন তা মানতে কষ্ট হচ্ছে৷
তিনি বলেন, মানবতাবিরোধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা আশা করেছিলাম৷ সেটা না হওয়ায় মর্মাহত৷ জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কখনো কোনো অবস্থাতেই সমঝোতা যাবো না৷তিনি আরো বলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়া পর্যন্ত আমি রিভিউ সম্পর্কে এখুনি কিছু বলতে পারবো না৷ সকালে সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃতু্য কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ৷
যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়ে সাজা কমায় মর্মাহত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউশনে পরিবর্তন চেয়েছেন৷বুধবার রায়ের পর নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি একজন ব্যক্তি, সরকারের সদস্য ও নাগরিক হিসাবে সর্বোচ্চ আদালতের যে কোনো আদেশ ও রায়ের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল৷ কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মানবতাবিরোধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা আশা করি, সেটা না হওয়ায় আমি মর্মাহত৷
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে মৃতু্যদণ্ড হলেও আপিলের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বুধবার জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়৷আইনমন্ত্রী বলেন, যেটা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে.. আমি শুনেছি তিনি পিস কমিটির মেম্বার ছিলেন এবং এ বিষয়ে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে৷ স্বেচ্ছায় যারা পিস কমিটির মেম্বার হয়েছিলেন তারাতো সচেতনভাবেই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন৷
এ মামলার ক্ষেত্রে ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউশনের কোনো দুর্বলতা ছিল কি না জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, আমি রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি না দেখে কাউকে দোষারোপ করতে চাই না৷ তবে প্রসিকিউশন টিমের যা অবস্থা, সেখানে পরিবর্তন আসা উচিত্৷মন্ত্রী বলেন,ট্রাইবু্যনালে কিছু কিছু মামলা চলছে, কিছু রায় অপেক্ষমান আছে৷ প্রসিকিউশন টিমের যেন কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য আমি কোনো পরিবর্তন আনিনি৷ তবে দ্রুত এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷এই মামলায় সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষের দুটি আপিল ছিল৷ আদালত উভয়টির আংশিক মঞ্জুর করে৷
রায়ে ১০, ১৬, ১৯ নম্বর অভিযোগে জামায়াতের এই নায়েবে আমিরকে আমৃতু্য সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ আর ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৭ নম্বরের জন্য ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আপিল বিভাগ৷ ৮ নম্বর অভিযোগের অপর অংশসহ ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে৷
এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সমপ্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল একাত্তরের রাজাকার সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল৷
আপিল বিভাগের এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে কি না জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, আগামীতে রিভিউ করতে পারা যাবে কি না তা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না৷ কারণ আব্দুল কাদের মোল্লার রায় রিভিউ করার জন্য আসামিপক্ষ আবেদন করেছিল৷ তার পুরো রায় এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি৷
সকালে রায় ঘোষণার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করে শাহবাগে বিক্ষোভ শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চ৷ তাদের অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আঁতাত করে সরকার এই রায় দিয়েছে৷এ অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, প্রশ্নই আসে না৷ সমঝোতার স ও হয়নি৷ মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত শিবিরের টেরোরিস্টদের সঙ্গে সমঝোতার কোনো অবকাশ নেই৷
রায় গ্রহণ করতে হয়৷ট্রাইব্যুনালে এই রায় ঘোষণার সময় সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শফিক আহমদ৷সাঈদীর আপিলের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে রায় দেয়৷ আদালত সেই চূড়ান্ত রায় দিয়েছে৷ রায় পছন্দ হতে পারে, আবার নাও হতে পারে৷ কিন্তু সব রায়ই আমাদের গ্রহণ করতে হয়, গ্রহণ করতে হবে৷