দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর: উপকূলীয় কলাপাড়ায় লাইসেন্স ছাড়াই চলছে অনত্মত ৩০টি করাতকল৷ অবৈধ এসব করাতকলে সংরৰিত বনাঞ্চলসহ উপকূলীয় বাঁধ বাগান, সামাজিক বনায়নের গাছ অহরহ চেরাই চলছে৷ ফলে উপকূলীয় বনাঞ্চল নিধন হয়ে যাচ্ছে৷ গত ১০ বছরে এসব করাতকলের কারণে বেড়িবাঁধের বাইরের মাইলের পর মাইল বনাঞ্চল উজাড় হয়ে গেছে৷ সংরক্ষিত বাগানও এখন বিরানভূমিতে পরিণত হচ্ছে৷ এমনকি কুয়াকাটায় জাতীয় উদ্যানের আশপাশ এলাকায় বসানো হয়েছে করাতকল৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোন কতর্ৃপক্ষ নেই৷ যত্রতত্র করাতকল স্থাপন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে৷ ফলে সিডর আইলার মতো প্রাকৃতিক তান্ডবের গ্রাসে থাকা কলাপাড়া উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ ও তাদের সম্পদ এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে৷ অভিযোগ রয়েছে, বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা ও ফরেস্টগার্ডদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে বছরের পর বছর এসব করাতকল চালু রয়েছে৷
বনাঞ্চলসহ পরিবেশ রক্ষার্থে উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটি রয়েছে৷ কিন্তু এ কমিটির কার্যক্রম চলছে কাগজে কলমে৷ বহুবার সভাচলাকালে অবৈধ করাতকল বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে৷ কিন্তু কোন পদৰেপ নেয়া হয় নি৷ এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে৷ খবর সরেজমিনে অনুসন্ধানসহ নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সুত্রের৷ সরকারি নিয়ম অনুসারে পৌরএলাকা ব্যতীত সংরৰিত বনাঞ্চল রয়েছে এর ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোন ধরনের করাতকল স্থাপন করা যাবে না৷ কিন্তু এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করেই দেদার, যে যার মতো বনবিভাগের সংশিস্নষ্ট বিট ও রেঞ্জকর্তাদের ম্যানেজ করে করাতকল স্থাপন করেছে৷ চলছে কাঠ চেরাইয়ের কাজ৷ পরিবেশ অধিপ্তরের কাগজপত্র পর্যনত্ম নেই- অথচ করাতকল চলছে ফ্রি-স্টাইলে৷ অভিযোগ রয়েছে এসব করাতকল চালু রাখতে মাসোহারা গুনতে হয় করাতকল মালিকদের৷ অবস্থা এমন হয়েছে যে, বাড়িঘরের কাছে করাতকল থাকায় ছোট চারা গাছ পর্যনত্ম এখন আর নিরাপদ নয়৷
লালুয়ার চর নিশান বাড়িয়া এলাকার মহিলা মেম্বার রাবেয়া বেগম জানান, শিশুগাছ, ছইলা, কেওড়া গাছ দেদার কেটে আশপাশের করাতকলে চেরাই করা হয়৷ তাদের বেড়িবাঁধের বন উজার করে দেয়া হয়েছে৷ এখন তাদের বেড়িবাঁধটি চরম ঝুকিপুর্ণ হয়ে আছে৷ দুর্যোগকালীন লাখো মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পরেছে৷ ইউপি সদস্য নাসির তালুকদার একই ৰোভ ব্যক্ত করলেন৷ একই দৃশ্য কলাপাড়া উপজেলার সক ক’টি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের স্লোপের৷ হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে৷ রাতের বেলা কেটেই সংলগ্ন করাতকলে চেরাই করে বিক্রি করা হয়৷ আবার এসব গাছ বিভিন্ন ইটভাটায় পাচার করা হয়৷ লতাচাপলী ইউনিয়নের লক্ষ্মীর পোলের দুইদিকে দু’টি করাতকল রয়েছে৷ অথচ এখান থেকে গঙ্গামতি ও ধুলাসার সংরৰিত বনাঞ্চলের দুরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার৷ এভাবেই নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই করাত কল বসানো হয়েছে৷ চলছে গাছ চেরাইয়ের উত্সব৷ মোটকথা যে যার মতো যেখানে সেখানেই স্থাপন করেছে করাতকল৷ ইউপি চেয়ারম্যানদের দেয়া তথ্যমতে, চাকামইয়ায় একটি, টিয়াখালীতে একটি, লালুয়ায় চারটি, মিঠাগঞ্জে তিনটি, নীলগঞ্জে পাঁচটি, মহিপুরে পাঁচটি, লতাচাপলীতে পাঁচটি, ধানখালীতে সাতটি, বালিয়াতলীতে আটটি, ডালবুগঞ্জে দুইটি এবং চম্পাপুর ইউনিয়নে পাঁচটি করাত কল রয়েছে৷ এছাড়া কলাপাড়া পৌর শহরে রয়েছে ১৩ টি করাতকল রয়েছে৷
বনবিভাগ কলাপাড়ার তথ্যমতে কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নসহ পৌরসভায় মোট করাতকল রয়েছে ৫৯টি৷ যার দুই তৃতীয়াংশ অবৈধ৷ স্থানীয় বনকর্মকর্তার দাবি প্রায় ৪০টির লাইসেন্স আছে৷ তবে এর সঙ্গে বাসত্মবের কোন মিল নেই৷ কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ আছে কাদের তা নিশ্চিত করতে পারেন নি৷ কয়েক বছর আগে মহিপুর এলাকার কয়েকটি করাতকলের মালিককে নোটিশ করা হয়েছিল৷ ওই পর্যনত্মই শেষ৷ বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জের কর্মকর্তা এমদাদুল হক জানান, তার অধীনে কতগুলো করাতকল রয়েছে এর হিসাব তার কাছে আপাতত নেই৷ এ বছরের মার্চ মাসেও তিনি একই কথা বলেছেন৷ সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাদের করাতকলের তালিকা হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান৷ স্থানীয় বন পরিবেশ কমিটির সদস্য সৈয়দ হাবিবুর রহমান টিকলু জানান, এ সংক্রানত্ম সঠিক কোন তথ্য উপজেলা পর্যায়ের সভায় জানানো হয় না৷ মিটিং হয় শুধুমাত্র কাগজে-কলমে৷ বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস জানান, প্রত্যেকটি করাতকলের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থাকতে হবে৷ এছাড়া প্রতিবছর এর নবায়ন করতে হবে৷