Mowdut

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর: সরকারের মনরক্ষার জন্য নয়, সংশোধনের জন্য নিজের লেখা সামপ্রতিক বইয়ে বিএনপির ব্যর্থতা ও ভুলগুলো তুলে ধরেছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ৷দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সমালোচনার জবাবে মওদুদ বলেন, বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময়ের ওই ভুলগুলো সংশোধন করে নিলে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় যেতে পারব বলেই তার বিশ্বাস৷

সোমবার সুপ্রিম কোর্ট এনেঙ্ ভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক চার দলীয় জোট সরকারের আইন মন্ত্রী মওদুদ বলেন, সরকারের মন রক্ষা কিংবা বাড়ি রক্ষার সঙ্গে এই বইয়ের কোনো সমর্্পক নেই৷ এই বইতে ওই সময়ে আমাদের দলের নানা ব্যর্থতা ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের পরাজিত হওয়ার কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে৷সদ্য লেখা বই নিয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মন্তব্যে দুঃখ পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ৷

মওদুদ আহমদ বলেন, আমি খুব দুঃখ পেলাম৷ কারণ,রিজভীকে আমি আমার ছোটো ভাইয়ের মতে মনে করেছি৷ তার অনেক লেখাপড়া আছে৷ তাকে অনেক স্নেহ করি৷ কিন্তু এখন যা শুনছি৷ তিনি যে মন্তব্য করেছেন, আমি এটাতো তার কাছে আশা করিনি৷মওদুদ বলেন, আমি যেখানে ভয় করছিলাম, সরকার অসন্তুষ্ট হবে৷সেখানে দেখছি, আমার একজন সহকর্মী আমার ওপর অসন্তুষ্ট হলেন৷ তিনি পুরো বইটি পড়লে অনুতপ্ত হবে৷

বাড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বাড়ির ব্যাপারে বলবো, বইটা লিখেছি অনেক আগে৷ আমি রাজনীতি করি৷ আমি বিরোধী দলের নেতা এবং বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আজকে আমাকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করার জন্য সরকার একটা প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে ২০১২ সাল থেকে৷ আর বইটা লেখা হয়েছে ৬/৭ বছর আগে৷ সুতরাং, এটার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই৷ বাড়ি বা সরকারকে সন্তুষ্ট করার প্রশ্নই উঠে না৷ আমার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা আছে৷

তিনি বলেন, বাড়ির মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে৷ বইয়ের কোনো মতামতের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই৷এর আগে সকালে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীনদের সন্তুষ্ট করতেই মওদুদ আহমদ সমপ্রতি বিএনপির স্বার্থবিরোধী বই (‘বাংলাদেশ: ইমারজেন্সি অ্যান্ড দি আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮’) লিখেছেন বলে মন্তব্য করেন দলটির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী৷

তার অভিযোগ, নিজের বইতে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি,দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলেকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য লিখেছেন মওদুদ আহমদ৷ নিজেকে বাঁচাতে ও বাড়ি রক্ষা করতেই তার এই ভূমিকা৷

মওদুদ আহমদ প্রেস বিফ্রিং করে বলেন, বই লেখা এক জিনিস৷ এটা একটা কঠিন কাজ৷ বিশেষ করে সমসাময়িক রাজনীতির ওপর কোনো বই লেখা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার৷ এই বই আমি লিখেছি ২০০৭-২০০৮ সালে যখন জেলখানায় ছিলাম এবং ২০০৯ সালে বইটি লেখা সম্পন্ন করা হয়৷ অনেক বছর পরে যাই হোক বইটা প্রকাশিত হয়েছে৷মওদুদ আহমদ আরো বলেন, আমি ভেবেছিলাম, আমার দল বা দলের নেতাকর্মীরা এপ্রিসিয়েট করবে এবং আমিতো ভেবেছিলাম, রিজভী আমাকে অভিনন্দন জানাবেন, ধন্যবাদ জানাবেন এ ধরনের একটি বই লেখার জন্য৷

কারণ, আমি যেটা ভয় করেছিলাম,বইটা বের হওয়ার পরে সরকার আমার ওপর অসন্তুষ্ট হবে৷ এবং হয়তো আমাকে আবার জেলখানায় যেতে হতে পারে৷ কারণ, বইটা যদি পড়া হয়, রিজভী বইটি পড়েছেন কি-না আমি জানি না৷ বইটি যদি অন্যভাবে পড়া যায়, তাহলে দেখা যাবে সেখানে রয়েছে, ২০০৭-২০০৮ সালে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার কিভাবে রাজনীতিবিদদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে৷

বিশেষ করে বইয়ে আছে,শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা ও বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার বলেও উল্লেখ করেন মওদুদ৷

তিনি বলেন, মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সহায়তার বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে৷ তারই বিবরণ বইতে দেওয়া আছে৷ এখন দেখছি, ফল হলো উল্টো৷ আমার দল সম্পর্কে বা আমার দলের যে ব্যর্থতা বা আমরা যে পরাজিত হলাম এর অনেকগুলো কারণ আমার বইতে দেওয়া আছে৷ নির্বাচন যে হয়েছে ২০০৮ সালে সেখানে বলা আছে,এটা কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি৷ কিভাবে কারচুপি হয়েছে তা আছে৷ এগুলোর বৃত্তান্ত দেওয়া আছে৷ এটাই বইটির মূল প্র্রতিপাদ্য বিষয়৷

সাবেক এ উপ রাষ্ট্রপতি বলেন,এ বইতে দল সম্পর্কে আমার যে অভিব্যক্তি আমার ব্যক্তিগত৷ এটার সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক েেনই৷ যখন আমি বই লিখি, তখন দলীয় ব্যক্তি হিসেবে বই লিখি না৷ আমি একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে বই লিখি৷ সব বইতে বস্তুনিষ্ঠভাবে দেশের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করি৷

মওদুদ বলেন, আমাদের ব্যর্থতার যেসব কারণ চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো যদি অনুসরণ করি এবং চেষ্টা করি সংশোধন করতে তাহলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আবার ক্ষমতায় আসবে৷ এটাই বইটির মূল বার্তা যেসব কারণগুলো চিহ্নিত করেছি, আমি বিশ্বাস করি, তা সংশোধন করে আগামীতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা ক্ষমতায় ফিরে আসব৷ দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে৷’

বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দি আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮ শিরোনামে মওদুদের লেখা ওই বইয়ে চারদলীয় জোট সরকারের অপশাসন ও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গে মিত্রতা, বিএনপি সরকারের কিছু মন্ত্রীর সম্পৃক্ততায় জঙ্গিবাদের উত্থান, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে হাওয়া ভবনের ক্ষমতা, প্রভাব ও দুর্নীতি এবং ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিতর্ক সমাধানে ব্যর্থ হয়ে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে দায়িত্ব দেয়ায় মতো বিষয়গুলো এসেছে৷

মওদুদের মতে, মূলত এসব কারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটাররা বিএনপির কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন৷বিগত সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাবন্দি অবস্থায় ইংরেজিতে লেখা মওদুদের ওই বই গত শনিবার ইউপিএল থেকেপ্র্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তুমুল আলোচনা শুরু হয়৷

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রিজভী সোমবার বলেন, নিজের বাড়ি রক্ষার জন্য, নাকি ক্ষমতাসীন দলের মন রক্ষার জন্য এরকম ভাষ্য তিনি দিয়েছেন তা জানি না৷ আমি মনে করি তার এহেন ভাষ্য দুর্ভাগ্যজনক৷অবৈধভাবে বাড়ি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক, যেটি ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ আদালতে বিচারাধীন৷

রোববার ওই মামলায় দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে মনজুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত৷এ প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, বইয়ের বিষয়বস্তুর সঙ্গে রিজভীর মন্তব্যের কোনো সমর্্পক নেই৷ তার মন্তব্য শুনে আমি দুঃখ পেয়েছি৷ বইটি পুরোপুরি পড়ে মন্তব্য করা উচিত্‍ ছিল৷ এরকম মন্তব্য তার কাছে থেকে আমি আশা করিনি৷

নিজের বই প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, এই বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য ২০০৮ সালের নির্বাচন৷ ক্ষমতায় থাকাকালে আমাদের দলের ব্যর্থতা ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার অনেক কারণ ছিল৷ তা আমি উল্লেখ করেছি বইতে৷’বইয়ের একটি অধ্যায়ে ওই নির্বাচনের ফলকে নীরব বিপ্লব এর সঙ্গে তুলনা করেন মওদুদ আহমদ, যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে৷ এই বিএনপি নেতার মতে, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে ও জঙ্গিবাদের বিপক্ষে শেখ হাসিনার অবস্থান এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তার পরিবর্তনের আহ্বানে দেড় কোটি তরুণ ভোটারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়৷