pacc

দৈনিকবার্তা-ঢাকা-১৪সেপ্টেম্বর : সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা পর্যন্ত অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থলবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী৷ রোববার ঢাকায় ৩৮তম প্যাসিফিক আর্মি ম্যানেজমেন্ট সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক (ইউএসএআরপিএসি) জোনের কমান্ডিং জেনারেল ভিনসেন্ট ব্রুকস এ আহ্বান জানান৷

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলের ৩২টি দেশের সেনা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এই সভায় যোগ দিয়েছেন৷ ২২ বছর পর ইউএসএআরপিএসির সঙ্গেযৌথভাবে এইসেমিনারের আয়োজন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী৷

জেনারেল ইকবাল করিম বলেন, আমরা এখন এমন ধরনের হুমকির মুখোমুখি হচ্ছি, যা ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে আটকে থাকছে না৷ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন নতুন হুমকি আসছে৷ কোনো দেশেরই এককভাবে এসব হুমকি মোকাবেলার সামথর্্য নেই৷ বৈশ্বিক পর্যায়ে কোনো সংকট দেখা দিলে তা এককভাবে মোকাবেলার বাইরে চলে যায়৷ তখনই দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে৷

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ভিনসেন্ট ব্রুকস বলেন, অভিন্ন যেসব সমস্যা আমাদের সবার মোকাবেলা করতে হয় সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত৷তার মতে, এ অঞ্চলের সব দেশের চারটি অভিন্ন হুমকি মোকাবেলা করতে হয়৷ এগুলো হলো- আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রপন্থা, সাইবার অপরাধ, সংক্রামক ব্যাধি এবং পরিবেশগত পরিবর্তন৷ এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এই সেমিনারের মূলত যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক জোনের ভাবনাপ্রসূত৷

চার দিনের এই সেমিনারে এই অঞ্চলের পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষক,সামরিক বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরা আলোচনায় অংশ নেবেন এবং বিভিন্ন উপস্থাপনা তুলে ধরবেন৷ থাকবে ক্ষুদ্র গ্রুপভিত্তিক আলোচনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও৷ ১৯৭৮ সালে হাওয়াই দ্বীপের হনুলুলুতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নয় দেশের সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রথম এই সেমিনার করে ইউএস আর্মি প্যাসিফিক৷ এরপর থেকে বিভিন্ন দেশে এই সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে৷সামরিক কর্মকর্তাদের আলাপচারিতায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা

সামরিক কর্মকর্তাদের আলাপচারিতায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনাবহুজাতিক এই সামরিক সেমিনারে লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদ মর্যাদার কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন৷

সেমিনারে সহযোগিতার চর্চা, অপ্রচলিত নিরাপত্তাজনিত অভ্যন্তরীণ কর্মসূচি উন্নয়ন,প্রচলিত ও অপ্রচলিত হুমকি মোকাবেলায় ভারসাম্য রক্ষায় করণীয় এবং পরিবেশজনিত নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীর সাড়া দেওয়ার দক্ষতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও ভাবনা বিনিময় করবেন তারা৷

ভারত মহাসাগর থেকে আমেরিকার পশ্চিম ঊপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম রাজনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে৷এ অঞ্চলের প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগর নৌপরিবহন ও কৌশলের দিক থেকে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷

বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার এই অঞ্চলে চীন ও ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশও রয়েছে৷বর্তমানে এশিয়া নিয়ে তাদের কৌশল (এশিয়া স্ট্রাটেজি) নতুন করে সাজাতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র৷সমপ্রতি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, আমেরিকার নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি ব্যাপকভাবে এশিয়া প্যাসিফিকের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তা ক্রমশ বাড়ছে৷যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অংশীদার জাপান নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগর নিয়ে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷উদীয়মান শক্তি চীন পুরো অঞ্চলকে একই যোগাযোগের আওতায় আনতে তার সিল্ক রুট ও মেরিটাইম সিল্ক রোড বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছে৷

উদ্বোধনী বক্তব্যে ব্রুকস বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিকে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিটি দেশের দায়িত্ব রয়েছে এবং আমাদের মধ্যে অংশীদারিত্ব দরকার, যাতে কাক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা যায়৷ সেমিনারে আনুষ্ঠানিক বিভিন্ন আয়োজনের বাইরে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ভাবনা বিনিময়ের এক অনন্য সুযোগ করে দেবে৷একে অপরকে পেশাগত ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভালোভাবে চেনা-জানার সুযোগ নিতে অংশগ্রহণকারী সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন৷ তিনি বলেন, কোনো দেশের সঙ্গে অন্য কোনো বিরোধ থাকলে এই প্লাটফর্ম তা প্রশমনে সহায়তা করবে৷এই ধরনের সেমিনার একে অপরকে জানার সুযোগ এবং আস্থা তৈরি করে৷হনুলুলুর এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার জে স্নেডেনও মনে করেন, একসঙ্গে কাজ করার একটি বড় প্লাটফর্ম এই সেমিনার৷