দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪সেপ্টেম্বর: দুর্ঘটনা এড়াতে পবিত্র ঈদুল আজহার আগে ও পরে এবার লঞ্চঘাটগুলোতে অতিরিক্ত তদারকির ব্যবস্থা করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়৷ ঈদকে সামনে রেখে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রোববার রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় নৌপথে চলাচলবিষয়ক এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ পিনাক-৬-এর মতো আর কোন ঘটনা যাতে না ঘটে সভায় সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়৷
সভায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা, সংশ্লিষ্ট জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন৷সভায় শ্রমিক ফেডারেশন অভিযোগ করে, অনেক ফেরিঘাটে যানবাহন প্রতি বেশি টাকা নেয়া হয়৷ নিয়ম অনুসারে ৪০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও আদায় করা হয় ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা৷ এ কারণে ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়৷ রাজবাড়ী, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ ও মাদারীপুরে এ ঘটনা বেশি ঘটে৷
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফেরিঘাটগুলোতে যাতে সিরিয়াল না ভাঙে, সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া হবে বলে জানানো হয়৷ সার্বিক চলাচল সুষ্ঠু করতে মন্ত্রণালয়,নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, অভ্যন্তরীণ
নৌপরিবহন সংস্থা, সংশ্লিষ্ট জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়৷
এবার পবিত্র ঈদুল আজহা ও শারদীয় দুর্গাপূজা প্রায় একসঙ্গে উদযাপিত হবে৷ ফলে সড়ক ও নৌপথে বাড়িিত চাপ থাকবে৷
ঈদ উল আজহা ও দুর্গাপূজা উপলক্ষে লঞ্চে চলাচলকারী যাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়৷ লঞ্চে উঠার আগেই এবার টিকিট কাটতে হবে৷ একই সঙ্গে স্পিটবোটে সব যাত্রীকে লাইফ জ্যাকেট পরতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়৷ অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ঠেকাতেই এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷এছাড়া এসময় লঞ্চের স্বাভাবিক চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে নৌপথে মাছ ধরার জাল পাতা বন্ধ ও সব নৌযানে পর্যাপ্ত বয়া এবং নৌপথে বাতি ও মার্কিং এর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে৷
সভায় আরো বলা হয়, ঈদ ও পূজার সময় চাঁদপুর-বরিশাল রুটে লঞ্চ মালিক সমিতির ৬টি লঞ্চ ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডবি্লউটিসি) ২টি স্টিমার রাখা হবে৷ ফলে নিয়মিত যাত্রীর সঙ্গে অতিরিক্তি ১০ হাজারেরও বেশি যাত্রী বহন করা যাবে৷
সভায় জানানো হয়, ঈদের আগে তিন দিন ও ঈদের পরের তিন দিন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া সাধারণ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ফেরি পারাপার বন্ধ রাখা হবে৷ তবে গরুবাহী ও পিঁয়াজের ট্রাক পারাপারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে৷
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- নৌ-পরিবহন সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, বিআইডবি্লউটিএর চেয়ারম্যান ড. মো.শামছুদ্দোহা খন্দকার, বিআইডবি্লউটিসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর জুবায়ের প্রমুখ৷
এছাড়া কোস্টগার্ড, ডিআইজি নৌ পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, ১৮টি জেলার ডিসি, জেলা পুলিশ সুপার,নৌ-পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার নেতারা উপস্থিত ছিলেন৷
সভার শুরুতে পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহতের আত্মার শান্তি কামনা করে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান নৌ দুর্ঘটনা রোধে ঈদ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সব কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান৷ড. শামছুদ্দোহা খন্দকার বলেন, এবছর ঈদ উল আযহা ও দুর্গাপূজা উদযাপন করতে সদরঘাট নৌ-রুট দিয়ে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি যাত্রী বিভিন্ন রুটে দিয়ে বাড়ি যাবেন৷ এবং এসব যাত্রীদের আবার ফিরিয়ে আনা হবে৷সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে লঞ্চ চলাচলের জন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন৷
তিনি জানান, মাওয়া-বরিশাল, পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া ও কিশোরগঞ্জে একটি করে ৪টি উদ্ধারকারী জাহাজ রাখা হয়েছে৷ বিভিন্ন নৌঘাটে যাত্রী হয়রানি বন্ধে ঘাট ইজারা প্রথা তুলে দেয়া হবে৷ ইতোমধ্যে অনেকগুলো ঘাটের ইজারা তুলে দেয়া হয়েছে৷ আগামী বছর সবগুলো ঘাটের ইজারা প্রথা একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হবে৷