দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪সেপ্টেম্বর: দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে (দুদক) মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় চার সচিব ও একজন যুগ্ম সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল ও গেজেট বাতিলের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ একই সঙ্গে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সিদ্ধান্ত ছাড়া যাঁরা সনদ নিয়েছেন, তাঁদের সবার সনদ বাতিল করা হবে৷ রোববার মুক্তিযুদ্ধ ও জনপ্রশাসনবিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকার) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়৷
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, প্রথম আলোর প্রতিবেদন ও দুদকের তদন্তের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জামুকার বৈঠকে রোববার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এই সচিবদের অনেকেরই এ বছর চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা৷ তাঁরা আর এই সুবিধা পাবেন না৷ এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি জানান৷
পাঁচ সচিব হলেন স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজউদ্দিন মিঞা, সদ্য ওএসডি হওয়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব এ কে এম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান (বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা বেসরকারীকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান) এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদার৷এর আগে দুদক এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে৷ এই সনদ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় যে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, দুদকের তদন্তে তার সত্যতা মিলেছে৷
গত সোমবার দুদকের পক্ষ থেকে এই সুপারিশ করে জনপ্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়৷ গত বুধবার জনপ্রশাসন ও বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পৌঁছায়৷সরকারি কর্মকর্তাদেরএ ধরনের অপরাধের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, শনিবার জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খান বলেন, আইনানুযায়ী শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা যাবে৷ এ ছাড়া যদি প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে প্রতারণার মামলাও হতে পারে৷
চাকরির শেষ সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ার হিড়িক শিরোনামে গত ২২ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা৷ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চাকরিতে যোগদানের সময়ই নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দিতে হয়৷ কিন্তু এই শীর্ষ কর্মকর্তারা চাকরির শেষ সময়ে এসে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করে সনদ নিয়েছেন৷গত পাঁচ বছরে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন সরকারি- বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার ১১ হাজার ১৫০ জন৷ সচিব থেকে শুরু করে চিকিত্সক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ব্যাংকারও রয়েছেন তাঁদের মধ্যে৷
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ বলেন, পদ্ধতিগত ত্রুটি কারণে রোববার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের কার্যালয়ে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
চার সচিব ও এক যুগ্ম-সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে দুদক৷তারা অবৈধ প্রক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের সামপ্রতিক এক তদন্তে বেরিয়ে আসে৷
সরকারি কর্মচারী বিধি অনুযায়ী, এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা-ভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা ছাড়াও প্রতারণার মামলা হতে পারে৷সরকারের এই শীর্ষ কর্মকর্তারা কর্মজীবনের শেষ সময়ে এসে চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়াতে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেন বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ৷ মাসুদ সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়ার সময় ওই মন্ত্রণালয়েরই সচিবের দায়িত্বে ছিলেন৷সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, চাকরিতে যোগদানের সময়ই মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখানোর কথা৷
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ১৮২ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পাঁচ সচিবের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ তবে মন্ত্রী জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারে৷
গত ৮ সেপ্টেম্বর দুদকের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে জনপ্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় দুদক৷জামুকার বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, আগামী ২৬ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ এবং পরিচয়পত্র দেওয়া হবে৷ ভারত ও বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ছাড়া অন্যদের সনদ পুনরায় যাচাই-বাছাই করা হবে৷মন্ত্রী জানান, লাল মুক্তিবার্তায় যাদের নাম রয়েছে তাদের ছাড়া অন্যান্যদের সনদ স্থগিত থাকবে৷