দৈনিকবার্তা-ঢাকা : রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছে আরো দেড় শটি পরিবার৷ তাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে৷ বন্যার সময় ওই এলাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় এক দফা ভাঙনে গৃহহীন হয়ে গেছে তিন শ পরিবার৷
তিস্তার পানি হঠাত্ বাড়া-কমায় হামার সুখের সংসার ভাঙি তছনছ হয়া গেইল৷ বউ-ছাওয়া নিয়া থাইকপার জাগা নাই৷ তয় ১০ সের (কেজি) চাউল ছাড়া কিছুই পাই নাই৷ তাও শ্যাষ হয়া গেইচে৷ এ্যালা হামার কী হইবে বাহে! এভাবে কষ্টের বর্ণনা দেন ভাঙনকবলিত গঙ্গাচড়া উপজেলার চিলাখাল চরের বাসিন্দা সেকেন্দার আলী৷ শুধু তিনিই নন, অব্যাহত নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়া দেড় শ পরিবারের সবাই এমন দুর্দশার মধ্যে রয়েছে৷
সামপ্রতিক বন্যায় তিস্তার ভাঙনে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে গঙ্গাচড়ার আলমবিতির ইউনিয়নের ব্যাঙপাড়া, পীরপাড়া, হাজিপাড়া ও সাউদপাড়া এলাকা৷ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এখন ভাঙন শুরু হয়েছে কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল চরে৷ হুমকির মুখে রয়েছে চিলাখাল চরের একটি মসজিদ, দুটি মাদ্রাসাসহ একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়৷
সরেজমিনে গতকাল শনিবার গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চিলাখাল চরের মানুষজন৷ অনেকে তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন৷ চিলাখাল চর উত্তরপাড়া ও দক্ষিণপাড়ার ফাতের আলী, অপি উদ্দিন, সাইদুল হক, সাহেব আলী, আজিজুল ইসলাম, আশরাফুল হক, রহিমুদ্দিন, মজিবর রহমান, ছফাদ্দিন, খয়বার আলী, মনোয়ারুল ইসলাম, মনিরুল মিয়া, সরা আলী, মতলুবর রহমান, মাহবুব মিয়া, এনামুল হক, মোখলেছার রহমান, হায়দার আলী, আনোয়ার হোসেন, হাফিজার রহমান, জেলেকা বেগম, মকসুদা বেগম, কেচুয়ানীসহ দেড় শ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদ্য রোপা আমনের কয়েক শ একর জমি৷
নূরুল হুদা ও কেচুয়ানী জানান, নদী ভাঙনে তাঁরা সর্বস্বান্ত হলেও ১০ কেজি চাল ছাড়া তাঁরা আর কিছুই পাননি৷ তাঁদের ভাষ্য, \’চরোত থাকলেও কয় বছর থাকি ভালোই আছনো, কষ্ট হইলেও রাইতোত (রাতে) ঘুমানোর জায়গা আছিল৷ এ্যালা সেই জায়গাও নদীত চলি গেইল৷ কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মমিনুর ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করানো হয়েছে৷
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রংপুর পানি উন্নয়ন বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তিস্তার পানি বাড়া-কমার কারণে গঙ্গাচড়ার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে৷ অন্যান্য এলাকায় তাত্ক্ষণিক ভাঙনরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আপাতত চরের ভাঙনরোধে তেমন কিছুই করার নেই৷