khaleda_147554

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪সেপ্টেম্বর: জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের মামলা স্থগিত চেয়ে এবং ওই দুই মামলায় অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ৷

রোববার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আবেদন দু’টি খারিজ করে দেন৷এর আগে গত ৪, ৭, ৮ এবং ১১ সেপ্টেম্বর ওই আপিলের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়৷গত ২৫ মে ওই দুই মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে ও অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বেগম খালেদা জিয়ার করা রিট আবেদনের বিষয়ে বিভক্ত রায় দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ৷

ওই সময় সিনিয়র বিচারপতি মামলার বিচারিক কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন৷ একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দু’টির অভিযোগ গঠনকারী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করেন৷তবে বেঞ্চের জুনিয়র বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ এ রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আবেদন খারিজের আদেশ দেন৷

পরে ১৫ জুন ওই আবেদন নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করেন৷তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দায়ের করা রিট আবেদন ১৯ জুনও খারিজ করে দেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের একক বেঞ্চ (তৃতীয় বেঞ্চ)৷পরে ৭ জুলাই খালেদা জিয়ার পক্ষে দু’টি লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়৷

গত বৃহস্পতিবার এ দুই আবেদনের শুনানিশেষ হয়৷আদেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ডিসমিসড৷ঢাকার বিশেষ জজ-৩ বাসুদেব রায় গত ১৯ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও ‘জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠন করেন৷এরপর ওই বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে এই আবেদন দুটি করেন খালেদা৷ সেগুলো হাই কোর্টে খারিজ হলে তিনি আপিল বিভাগে আসেন৷

আদেশের সময় খালেদার আইনজীবী হিসাবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও মো. আসাদুজ্জামান৷ রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম৷ তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মো. মমতাজউদ্দিন ফকির৷ দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান৷

আদেশের পর অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আদালত দুটি আবেদন খারিজ করেছেন৷ আমরা মনে করি, এ আবেদনে এখনও কিছু আইনগত বিষয় আছে যার নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন৷এ কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে এ আদেশ পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করতে পারি৷তিনি বলেন,নিম্ন আদালতে বিচারাধীন খালেদা জিয়ার ওই দুটি মামলা নিয়ে আরো দুটি আবেদন আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়৷আবেদন দুটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম চলতে পারে না বলে আমরা আবেদন করব৷

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তাদের দুই লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে গেছে৷ মামলা দুটির কার্যক্রম চলতে বাধা নেই৷ অন্য আবেদনের কথা বলা হচ্ছে৷ এ ব্যাপারে আপিল বিভাগের কোনো স্থগিতাদেশ নেই৷বিচার বাধাগ্রস্ত করতে খালেদার আইনজীবীরা এ সব করছেন বলেও মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল৷

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও খালেদা হাই কোর্টে দুটি রিভিশন আবেদন করেছিলেন, যেগুলো হাই কোর্টে খারিজ হয়৷ হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে করা খালেদার আবেদন বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন৷জিয়া দাতব্য (চ্যারিটেবল) ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা (অরফানেজ) ট্রাস্ট নামে দুদকের এই দুই মামলা বাতিলের জন্যও হাই কোর্টে এসেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন৷ কিন্তু তার ওই আবেদনও খারিজ হয়৷ এ বিষয়ে তার আপিল আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে৷

দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১১ সালের ৮ অগাস্ট জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন৷ এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি৷ তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে৷অন্যদিকে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি করা হয়৷ ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়৷

এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়৷পুরান ঢাকার বকশীবাজার এলাকায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালতের বিশেষ এজলাস বসিয়ে এই দুই মামলার বিচার চলছে৷ তবে আপিল বিভাগে শুনানি কথা বলে সেখানে আসামিপক্ষ কয়েকবার সময় নিয়েছেন৷

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে৷ আর জিয়া চ্যারিটেবল (দাতব্য) ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসামি হিসাবে রয়েছেন আরও তিনজন৷এতিমখানা ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান৷

এদের মধ্যে সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে৷ তারেক উচ্চ আদালতের জামিনে দেশ ছাড়ার পর গত ছয় বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন৷ এ মামলায় তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে৷দাতব্য ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডবি্লউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷এদের মধ্যে মামলার শুরু থেকেই পলাতক হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে৷ খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন৷