দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪সেপ্টেম্বর: একএগারোর কুশিলবরা এখনো সক্রিয়্ত উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে৷ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৭ম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন৷
গয়েশ্বর বলেন,সরকার অনেক আগেই বাকশাল কায়েম করেছে আর এখন তা পাকাপোক্ত করতে গণবিরোধী আইন পাশ করছে৷ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে৷দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারকে উত্খাত করে জনগণের অধিকার আদায় করা হবে বলেও জানান বিএনপির এ নেতা৷
১৯৭১ সালে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জয় বাংলার পর জয় পাকিস্তান বলেছিলেন বলে দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়৷ সেদিন রেসকোর্স ময়দানের সমাবেশ মঞ্চের ৫০ গজ দূরে থেকে বঙ্গবন্ধুকে জয় পাকিস্তান বলতে শুনেছেন বলে দাবি করেন তিনি৷৭মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ তিনি নিজ কানে শুনেছেন দাবি করলেও বক্তব্যের এক পর্যায়ে গয়েশ্বর বলেন, শেখ মুজিব যদি সেদিন জয় বাংলার পর জয় পাকিস্তান বলে থাকেন তবে আওয়ামী লীগের সেটা মেনে নিতে সমস্যা কোথায়?
তিনি বলেন, আমি নিজের কানে শুনেছি৷ আমি মনে করি, জয় পাকিস্তান বলাটা শেখ মুজিবের সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল৷গয়েশ্বর বলেন, তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম৷ মঞ্চের ৫০ গজ দূরে থেকে আমি নিজ কানে শুনেছি, শেখ মুজিব ভাষণের শেষের দিকে দরাজ কন্ঠে বললেন, ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান৷
একে খন্দকারের লেখা প্রকাশিত বইয়ের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এ শীর্ষ নেতা আবারো বলেন, শেখ মুজিব যদি সেদিন ভাষণে জয় পাকিস্তান বলে থাকেন, আর সেটা যদি এ কে খন্দকার লিখে থাকেন তার জন্য তাকে গালাগালি করছেন কেন? গালাগালি দিয়ে কোনো ঐতিহাসিক সমস্যার সমাধান হয় না৷ অর্থমন্ত্রী যেমনটা বলেছেন, আরেকটা বই লিখে এর প্রতিবাদ করুন৷বহির্বিশ্বকে খুশি করতে খুব শিগগিরই সরকার নির্বাচন দেবে৷ সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের আবারো জেলে পুড়বে৷ শুধু তাই নয়, সরকার ২০ দলীয় জোটকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে৷ কিন্তু বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী শক্তিকে এভাবে নির্মূল করা যাবে না৷
এতে সভাপতিত্ব করেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু৷
বর্তমান সরকার ১/১১ ষড়যন্ত্রের ফসল মন্তব্য করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর আরো বলেন, নিকট অতীতে আমরা জনগণের সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি৷ আজকের এই আলোচনা সভায় যারা আন্দোলন সংগ্রামের কথা বলছেন, কিছুদিন আগেও তারা রাজপথে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি আমরা রাখতে পারিনি৷ আমরা মানুষের সাথে প্রতারণা করেছি৷ দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার কারণে জনগণ আমাদের উপর আস্থা হারিয়েছে৷তিনি আরো বলেন, জনগণ আশা করেছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি প্রতিহত করবে৷ কিন্তু আমরা তা পারিনি৷ ফলে আমাদের উপর মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে৷ এবার মানুষের সে বিশ্বাস, আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে৷ মন ভোলানো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নয়, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে৷
আদালতের সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, হাজিরার সময় এক মিনিট দেরিতে গেলে আমাদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়৷ আর বিচারকরা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে এক- দেড় ঘন্টা দেরি করে আসলেও আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়৷ এটা হয়রানী৷বিচারপতিদের অপসারণ নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিচারপতিদের বিচার যদি পার্লামেন্ট করে তাহলে শেখ হাসিনার বিচার কে করবে? এসময় তিনি বিচারপতিদের অভিসংশন এবং সমপ্রচার নীতিমালা বাতিলের দাবি জানান৷
সভাপতির বক্তব্যে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুনিদের পক্ষ নিয়েছেন৷ বাপ-দাদার তালুকে পরিণত করেছেন দেশকে৷ আর পার্লামেন্টে যে ক’জন আছেন তারা চোর, খুনি, লুটেরা, বদমাইশ৷
শেখ হাসিনা খুনি, সন্ত্রাসী, পুলিশের প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করে দুদু প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত নির্বাচনে আসার আহ্বান জানান৷ এছাড়া বক্তব্যে বিএনপির এ নেতা দাবি করেন, আওয়ামী লীগে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই বলেও চ্যালেঞ্জ করেন৷এসময় তিনি সরকারকে অচিরেই নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান এবং অভিশংসন ও সমপ্রচার নীতিমালা বাতিলের দাবি জানান৷সভায় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু প্রমুখ৷