images333

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩সেপ্টেম্বর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুমুখী খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে একটি উত্‍কৃষ্ট ও আরো সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়তে সাত দেশের সর্বোচ্চ ফোরামের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল এন্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশন” (বিমসটেক)’র স্থায়ী সচিবালয় শনিবার উদ্বোধন করেছেন৷রাজধানীর গুলশান-২ এর ৫৩ নং সড়কে বিমসটেক সচিবালয় উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, এটি বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশের গর্বিত অংশীদারিত্বের এক অনবদ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে৷

তিনি বলেন,বিমসটেক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার সেতুবন্ধন৷বিমসটেক প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে গভীর বোঝাপড়া ও পারসপরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অন্যতম ক্ষেত্র৷ সংস্থাটি এ অঞ্চলের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে এক অনন্য প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গর্ববোধ করছি যে, ১৯৯৭ সালের ৬ জুন যখন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরম্ন হয়েছিল- তখনও আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলাম৷ আবার আমাদের সরকারের তৃতীয় মেয়াদে ঢাকায় স্থাপিত হল বিমসটেক সচিবালয়৷

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও বিমসটেক সম্মেলনের মহাসচিব সুমিত নাকান্দালা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন৷ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম স্বাগত বক্তব্য দেন৷বক্তৃতা শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমসটেক সচিবালয়ের ফলক উন্মোচন করেন৷ অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠ করা হয়৷প্রধানমন্ত্রী ডাক বিভাগের ৪ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকেট, ১০ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম ও ৫ টাকা মূল্যমানের একটি ডেটাকার্ড অবমুক্ত করেন৷

১৯৯৭ সালের জুনে ব্যাংককে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডকে নিয়ে বিমসটেক গঠিত হয়৷ পরে মায়ানমার, নেপাল ও ভুটান ফোরামে যোগ দেয়৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমসটেক সচিবালয় স্থাপনের জন্য ঢাকাকে নির্বাচিত করায় এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকার এবং জনগণকে আনত্মরিক ধন্যবাদ জানান৷

তিনি বলেন, বিমসটেক ইতোমধ্যে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে এবং বিমসটেক অঞ্চলে সহযোগিতার লক্ষ্যে চিহ্নিত ১৪টি ৰেত্রে এর কর্মকা- সমপ্রসারিত করেছে৷ এ প্রেক্ষাপটে বিমসটেক সচিবালয় এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সবসময়ই আঞ্চলিক সহযোগিতার উপর জোর দিয়ে আসছে৷ আমরা বিমসটেকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ এটি আমাদের পররাষ্ট্রনীতির সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমসটেক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার সেতুবন্ধন৷ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক অভিন্নতা এবং অর্থনৈতিক পরিপূরকতা এই অঞ্চলের দেশগুলোকে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করেছে৷তিনি বলেন, এ অঞ্চলে বিশ্বের এক পঞ্চমাংশেরও বেশি মানুষের বাস৷ সংশিস্নষ্ট দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি’র পরিমাণ প্রায় ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এখানে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সমপদ৷ যার সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে এই অঞ্চলের জনগণের জীবনমানসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব৷

বিমসটেকের প্রথম মহাসচিব মি. সুমিত নাকান্দালাকে আনত্মরিক অভিনন্দন এবং বাংলাদেশে তাকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস তিনি বিমসটেক সচিবালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাসত্মবায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন এবং বিমসটেক-কে সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবেন৷

এ প্রেক্ষিতে তিনি বিমসটেকের কার্যক্রম সফলভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বিমসটেক অঞ্চলে সহযোগিতার লক্ষ্যে চিহ্নিত ১৪টি ক্ষেত্র এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এসব ক্ষেত্রে কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জনের জন্য আমাদেরকে সময়োপযোগী ও বাসত্মব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে৷এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সভায় ৬টি সুপারিশমালা পেশ করেন এবং এ অঞ্চলের দেশুগলোর মাঝে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যে বিমসটেকের ভবিষ্যত কর্মসূচি গ্রহণের আহাবান জানান৷

প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম সুপারিশে বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনকে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে৷ এ চ্যালেঞ্জকে সমন্বিতভাবে মোকাবেলা করার মাধ্যমেই আমাদের সকল অর্থনৈতিক অর্জন অর্থবহ করা সম্ভব৷তিনি দ্বিতীয়ত সুপারিশে বলেন,আমাদের জনসংখ্যার সিংহভাগই কৃষির ওপর নির্ভরশীল৷ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও কর্মসংস্থানের অন্যতম প্রধান উত্‍স হল কৃষি খাত৷ সেজন্য কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতার উপর আরো প্রাধান্য দিতে হবে৷

তৃতীয় সুপারিশে শেখ হাসিনা বলেন, বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠন বিষয়ক কাঠামো চুক্তিটি প্রায় এক দশক আগে স্বাক্ষরিত হলেও সেটি এখনো কার্যকর করা যায়নি৷ পণ্য বাণিজ্য চুক্তিটি চূড়ানত্ম পর্যায়ে থাকলেও সেবাখাতে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সংরক্ষণ সংক্রানত্ম চুক্তিগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে৷ এই চুক্তিগুলো দ্রুত সমপাদন করা গেলে তা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সংহতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে৷

প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ সুপারিশে বলেন,প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার ঘাটতি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বাংলাদেশ তার নিকট প্রতিবেশীসহ বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ এ প্রেক্ষিতে তিনি বিমসটেক ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার এন্ড লজিসটিকস স্টাডি রিপোর্ট চূড়ানত্মকরণে বিশেষ অবদানের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-কে ধন্যবাদ জানান৷তিনি বলেন,আমি আশা করি, এই রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে চিহ্নিত প্রকল্পগুলো বাসত্মবায়নে শীঘ্রই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে৷

পঞ্চম সুপারিশে শেখ হাসিনা বলেন, বিমসটেকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার ক্ষেত্র হচ্ছে জ্বালানী যা এ অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যনত্ম অপরিহার্য৷ বিমসটেকের আওতাধীন হিমালয় বেসিন অঞ্চলে জলবিদু্যত্‍ এবং বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে হাইড্রো-কার্বন প্রাপ্তির অপার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে৷তিনি জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন,এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনের জন্য আমাদের একটি শক্তিশালী ও অংশীদারিত্বমূলক সমপর্ক গড়ে তুলতে হবে৷ নিরাপত্তা,পর্যটন এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও আমাদের সহযোগিতার সম্পর্ক আরো বাড়াতে হবে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন,আজকের দিনটি প্রকৃত অর্থেই বাংলাদেশ এবং বিমসটেকের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন৷ ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক নতুন যাত্রার সূচনা হল৷ বিমসটেক সচিবালয়ের সফল উদ্বোধন আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল৷তিনি বলেন,বিমসটেক সচিবালয় হোক বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশের গর্বিত অংশীদারিত্বের এক অনবদ্য প্রতিষ্ঠান – এটাই আমার প্রত্যাশা৷প্রধানমন্ত্রী পরে ঢাকাস্থ বিমসটেক সচিবালয়ে ভজিটরস বইতে স্বাক্ষর করেন এবং অংশগ্রহণকারী কূটিৈনকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন৷