দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২সেপ্টেম্বর-মাঈনুল ইসলাম নাসিম : স্মরণকালের ভয়াবহ ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি’ পরবর্তী বাংলাদেশে পোষাক শ্রমিকদের কর্মস্থলের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং তাঁদের অধিকার রক্ষায় সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ চলতি বছরই পর্যালোচনা করে দেখবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। অক্টোবর বা নভেম্বরের মধ্যেই এই বিশেষ রিভিউ পর্বটি ‘ইইউ’ কর্তৃক সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্রাসেলসে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান।
বেলজিয়ামের রাজধানীতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদর দফতরে ২০০৯ থেকে কর্মরত আছেন এই সিনিয়র কূটনীতিক। তাজরীন গার্মেন্টস অগ্নিকান্ড এবং রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি পরবর্তী ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে বাংলাদেশি তৈরী পোষাকের সুবিশাল বাজার ধরে রাখতে ব্রাসেলসে এ অবধি অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহানকে।
এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “আমরা তাদেরকে বারবার বুঝিয়েছি যে, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ কর্মস্থলের পরিবেশ এবং তাদের সব ধরনের ন্যায্য অধিকার সুনিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ প্রায়োরিটির ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ধীরে ধীরে এর সুফলও আসতে শুরু করেছে”। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, “ইইউ কমিশনারদের আমরা সাধ্যমতো বোঝাবার চেষ্টা করেছি যে, তোমরা যেভাবে রাতারাতি সবকিছুর আমূল পরিবর্তন আশা করছো বাংলাদেশে, উন্নতি হচ্ছে এবং খানিকটা সময় এবং সহায়তা দুটোই দিতে হবে আমাদেরকে”।
তাজরীন দুর্ঘটনা এবং রানা প্লাজা ধ্বংসযজ্ঞের মতো আর কোন অঘটন যাতে না ঘটে ভবিষ্যতে, সেলক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অবশ্য ইতিমধ্যে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে বলে জানান ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট ইসমাত জাহান। তিনি বলেন, “স্বল্পন্নোত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহে রফতানির ক্ষেত্রে ইইউ’র বিশেষ কর্মসূচী Everything but Arms (EBA)-এর আওতায় ডিউটি-ফ্রি এবং কোটা-ফ্রি যে সুবিধা ভোগ করছে, তা যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে আমরা সদা তৎপর”।
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান বলেন, “৫ জানুয়ারি নির্বাচন ইস্যুতে আমরা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, প্রতি পাঁচ বছর পরপর বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়ে এসেছে, গণতন্ত্রের পথে এটি ছিল তারই একটি ধারাবাহিকতা। ইইউ অবশ্য একইসাথে প্রত্যাশা করে বাংলাদেশে গনতন্ত্রের ভিত আরো মজবুত হোক এবং গনতান্ত্রিক অভিযাত্রায় সব ধরণের সহযোগিতা দিতে তারাও সদা প্রস্তুত”।
মৃত্যুদন্ডের বিধান নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আপত্তি থাকলেও যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়ার সাথে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দ্বিমত পোষন করে না বলে জানান রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান। তিনি আরো বলেন, ‘‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন খুব ভালো করেই জানে, ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি আদর্শ রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং নারীর ক্ষমতায়নে আমাদের অগ্রযাত্রাকে ইইউ বরাবরই সাধুবাদ জানিয়ে এসেছে”।