দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২সেপ্টেম্বর : ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর নিবিড় যোগাযোগের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা৷বাংলাদেশেরগোয়েন্দা সংস্থাকে উদ্ধৃত করে তারা বলেছে,বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির প্রেক্ষাপটে কাজ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷দলটির একজন সাংসদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পৌঁছানো হয় জামায়াতের হাতে৷
প্রথম পাতায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের নাম উঠে এসেছে দুই দলের মধ্যে যোগাযোগের সেতুবন্ধনকারী হিসাবে৷যদিও ইমরান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই৷ইতোমধ্যে এসব অভিযোগের বিষয়ে নয়া দিলি্লকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার পক্ষ থেকে নালিশ করা হয়েছে বলে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে পত্রিকাটিতে বলা হয়েছে, ২০১২-১৩ সালে ইমরানের মাধ্যমে ভারত থেকে দফায় দফায় বিপুল পরিমাণ অর্থ পৌঁছেছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের নানা শাখা সংগঠনের হাতে৷শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরু করার পরে বাংলাদেশে দাঙ্গা, নাশকতা ও সন্ত্রাস শুরু করেছিল মৌলবাদীরা৷
সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিলে হেফাজতে ইসলাম নামে বকলমে আরও একটি মৌলবাদী সংগঠন গজিয়ে ওঠে৷ তারা ঢাকা অবরোধ করে সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল৷ গোয়েন্দা সূত্র অনুসারে, সেই কাজে ইন্ধন জোগাতেই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল৷ যার একটা বড় অংশ সারদা অর্থলগি্ন সংস্থার৷ ঢাকার অভিযোগের সত্যতা নয়া দিলি্ল পেয়েছে, যার ভিত্তি ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদন৷বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ইমরানের মাধ্যমে অথের্র পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের বেশ কয়েকটি চালানও ভারত থেকে জামায়াতের হাতে দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়৷
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারদার বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্সে কাঁচা টাকার বান্ডিল ভরে তা নিয়ে যাওয়া হতো বনগাঁ, বসিরহাট, নদিয়া, মালদহ, বালুরঘাট ও কোচবিহারের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে৷ পরে তা বাংলাদেশি টাকা, ডলার বা ইউরোতে পরিবর্তন করে জামায়াতের এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষও ইডি- কে লেখা চিঠিতে সারদার অ্যাম্বুলেন্সে করে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কাছে টাকার বান্ডিল চালান যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন৷ এ ছাড়া, হাওয়ালা ও হুন্ডির মাধ্যমেও গিয়েছে সারদার টাকা৷ বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জামায়াত পরিচালিত বেশ কিছু হাসপাতাল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেনামে লগি্নও করেছে সারদা৷ সেই অর্থও কার্যত জামায়াতের ‘জ্বালাও- পোড়াও আন্দোলনে খরচ হয়েছে৷
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই বাংলাদেশের জামাতে ইসলামীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু উর্দুভাষী নেতার দহরম মহরম শুরু হয়৷ ২০১১-র ভোটে সীমান্ত এলাকায় জামায়াত কর্মীরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করে৷ সে সময়ে তৃণমূলকে অর্থেরও জোগান দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী৷ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই সুসম্পর্ক থেকেই পরবর্তী কালে জামায়াতকে তৃণমূল শুধু পাল্টা সাহায্যই করেনি, তিস্তা চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তি আটকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও বিপদে ফেলার চেষ্টা করে৷বাংলাদেশ সংক্রান্ত নীতির বিষয়ে মমতা বরাবর জামায়াতের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখা উর্দুভাষী নেতাদের মতামতই মেনে চলেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে৷
এসব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে প্রাক্তন সিমি নেতা, বর্তমান তৃণমূল সাংসদ ইমরানকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি৷দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ আনন্দবাজারকে বলেন, সিমি- কে নিষিদ্ধ করার সময়ে মমতা কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন৷ তিনি সবই জানতেন৷ তার পরেও কেন তিনি ইমরানকে রাজ্যসভায় পাঠালেন? তার দাবি,জামায়াতের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই তৃণমূল নেত্রী এই প্রার্থী বাছাই করেছেন৷ মমতার এই কাজকে দেশদ্রোহ বলে মন্তব্য করে ওই বিজেপি নেতার অভিযোগ, এক জন মুখ্যমন্ত্রীর এমন কাজের জন্য রাজ্যে জঙ্গি ও দুষ্কৃতীরা সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে৷ নাগরিকদের নিরাপত্তা বিপন্ন হচ্ছে৷বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে ভারতের বহুল আলোচিত সারদা কেলেঙ্কারির টাকা কাজে লাগিয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা৷ আনন্দবাজার পত্রিকায় শুক্রবার এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে ৷ জামায়াতকে এই ব্যাপারে সহযোগিতার সঙ্গে জড়িত তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান৷ এ ব্যাপারে ভারতের কাছে সরকারিভাবে অভিযোগও জানিয়েছে বাংলাদেশ৷
ঘটনার তদন্ত চেয়ে সরব হয়েছেন বাংলাদেশের জামায়াত অধু্যষিত দুই এলাকা রাজশাহী ও সাতক্ষীরার দুই সাংসদ৷যদিও ইমরান নিজে তার বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ ইমরান বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই৷কী বলা হয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে? এদিকে, ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্টও এই বক্তব্যকে অনেকটাই সমর্থন করছে৷ বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে অবশ্য এই দাবিও করা হয়েছে যে,ইমরানের মাধ্যমে অর্থের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের বেশ কয়েকটি চালানও ভারত থেকে পৌঁছে গিয়েছিল জামায়াতের হাতে৷
ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী,সারদার বেশ কিছু অ্যাম্বুল্যান্সে কাঁচা টাকার বান্ডিল ভরে তা নিয়ে যাওয়া হতো বনগাঁ, বসিরহাট, নদিয়া, মালদহ, বালুরঘাট ও কোচবিহারের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে৷ তার পরে তা বাংলাদেশি টাকা, ডলার বা ইউরোয় পরিবর্তন করে জামায়াতের এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষও তার লেখা চিঠিতে সারদার অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কাছে টাকার বান্ডিল চালান যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন৷ এছাড়া, হাওয়ালা ও হুন্ডির মাধ্যমেও গিয়েছে সারদার টাকা৷ বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জামায়াত পরিচালিত বেশ কিছু হাসপাতাল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেনামে লগি্নও করেছে সারদা৷সেই অর্থও কার্যত জামায়াতের ‘জ্বালাও- পোড়াও আন্দোলনে’ খরচ হয়েছে৷
রাজশাহীর সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিজেদের নেতাদের বিচার বানচাল করতে বাংলাদেশ জুড়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস শুরু করেছিল জামায়াতে ইসলামী৷ রেললাইন উপড়ে, বাস-ট্রেন জ্বালিয়ে অত্স্র মানুষকে হত্যা করা হয়৷ প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে তাদের পতিরোধ করেন৷ বাদশা আরো বলেন, এই সন্ত্রাস মাত্রাছাড়া হওয়ায় ভারত থেকে অস্ত্র-বিস্ফোরক ও অর্থ আসার বিষয়ে আমরা সন্দিহান হই৷ পরে পুলিশ ও আধাসেনারা এই সব জায়গায় অভিযান চালিয়ে দলটির অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে৷ তাদের কাছ থেকেই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা৷
সাতক্ষীরার সাংসদ মুস্তাফা লুত্ফুল্লাহ বলেন, জামায়াতের দুষ্কৃতীরা পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে৷ সেখানে শাসক দলের নেতারা তাদের আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করছে বলে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট খবর আছে৷ সীমান্ত-পার থেকে নিয়মিত অর্থের জোগান পেয়েছে তারা৷ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট আরো দেখানো হয়,পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগ েেথকেই বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু উর্দুভাষী নেতার দহরম মহরম শুরু হয়৷ ২০১১-র ভোটে সীমান্ত এলাকায় জামায়ত কর্মীরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করে৷ সে সময়ে তৃণমূলকে অর্থেরও জোগান দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী৷ সেই সুসম্পর্ক থেকেই পরবর্তী সময়ে জামায়াতকে তৃণমূল শুধু পাল্টা সাহায্যই করেনি, তিস্তা চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তি আটকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও বিপদে ফেলার চেষ্টা করে৷ বাংলাদেশ সংক্রান্ত নীতির বিষয়ে মমতা বরাবর জামায়াতের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখার জন্য উর্দুভাষী নেতাদের মতামতই মেনে চলেছেন বলে গোয়েন্দা রিপোর্টের দাবি৷
বাংলাদেশের এক কূটনীতিকের মতে, শেখ হাসিনার আমলে ঢাকার সঙ্গে দিলি্লর সম্পর্ক যতটা মধুর হয়েছে, ততটাই তেতো হয়েছে কলকাতার সঙ্গে৷ এর জন্য তিনি দায়ী করেছেন তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে মমতার কট্টর বিরোধিতাকে৷ ওই পদস্থ কূটনীতিকের দাবি, তৃণমূলের জামায়াত ঘনিষ্ঠ নেতারাই মমতাকে এ কাজে প্রভাবিত করতে সফল হয়েছেন৷ ওই নেতারাই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা জামায়াত নেতাদের কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় মাসের পর মাস আশ্রয় দিয়েছেন৷
বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়টিও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে৷ ওই কূটনীতিকের অভিযোগ, তার পরেও সেই সব আশ্রয়শিবির কিন্তু বহাল রয়েছে৷ গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে এই সব অনুপ্রবেশকারী জামায়াত কর্মীরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন৷