দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২সেপ্টেম্বর : ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, ম্যাচ ড্র অথবা লড়াই করার লক্ষ্য নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করেছিলো বাংলাদেশ৷ কিন্তু প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের হারে কোন কিছুই পূরণ হয়নি টাইগারদের৷ তবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ভালো কিছু অর্জন করে সফরের শেষটা মাথা উঁচু করে চায় মুশফিক বাহিনী৷ এমন লক্ষ্য নিয়েই সেন্ট লুসিয়ায় শনিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ৷ খেলাটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়৷
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সুখ-স্মৃতিকে সাথে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে পা রাখে বাংলাদেশ৷ কিন্তু সফরের প্রথম সিরিজ ওয়ানডেতে হারের স্বাদ পায় টাইগাররা৷ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ৷ এরপর একমাত্র টুয়েন্টি টুয়েন্টি বৃষ্টিতে ভেসে গেলে টেস্টের জন্য নতুন লক্ষ্য দাঁড় করায় সফরকারীরা৷ সিরিজের শুরুর আগে দু’টি টেস্টই ড্র করার কথা জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, ব্যক্তিগতভাবে বললে- দুই টেস্টই ড্র করার ইচ্ছা আমার৷ সেই সামথর্্য আমাদের আছে৷
সামথ্যর্ের সবটুকু ঢেলে দিয়েও ড্র তো দূরে থাক, প্রথম টেস্টে লড়াইয়ের পরিস্থিতিও গড়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ৷ সান্তনা যদি খুঁজতে হয়, তবে ফিওে যেতে হবে অতীতে৷ কারন টেস্ট ম্যাচটি তো অন্তত পাঁচদিনে গড়ানো গেল৷ অতীতে এমন অর্জন করে বেশ বাহবা কুড়িয়েছে টাইগাররা৷ তবে বর্তমানে কতটা বাহবা কুড়াচ্ছে দল, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ না করাই ভালো৷
তবে কিংস্টন টেস্ট হারের পোস্টমর্টেম থেকে বুঝা যাচ্ছে, ব্যাটসম্যানদের কারণেই সিরিজে পিছিয়ে পড়লো বাংলাদেশ৷ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা এতটা সহজেই ধরা পড়লো যে, প্রথম টেস্ট শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তা অকপটে স্বীকার করলেন দলপতি মুশফিকুর, ‘এ টেস্ট ভালো ব্যাটিং হয়নি আমাদের৷ আরও অনেক বেশি উন্নতি করতে হবে৷ বিশেষভাবে ব্যাটিং-এ অনেক বেশি উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে৷
কিংস্টন টেস্টের প্রথম ইনিংসে মমিনুল হকের ৫১ ও মুশফিকুরের অপরাজিত ৪৮ রানের কল্যানে ১৮২ রানের সম্মানজনক স্কোর পায় বাংলাদেশ৷ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থতার খোলস থেকে বেরিয়ে আসেন ওপেনার তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ৷ দু’জনে যথাক্রমে করেন ৫৩ ও ৬৬ রান৷ তবে সবাইকে ছাপিয়ে নিজের ধৈযর্্যশীলতার প্রমান আরো একবার দিলেন মুশফিক৷ তুলে নেন সেঞ্চুরি৷ আর তাতেই ম্যাচটি গড়ায় পঞ্চম দিনে, তাতেই ইনিংস হার থেকে বেঁচে যায় বাংলাদেশ৷ তারপরও ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারটা লজ্জা হয়েই থাকলো বাংলাদেশের কাছে৷ সেই লজ্জা দ্বিতীয় টেস্টে কতটা দূর করতে পারে টাইগাররা তা সময়ই বলে দেবে৷
ফলো-অনে পড়েও ২২ গজে লড়াইটা বুক চিতিয়ে করেছেন টাইগার দলপতি মুশফিকুর৷ দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হবার আগে ১১৬ রানের ঝকমকে ইনিংস খেলেন মুশি৷ কিন্তু তাতেও তৃপ্ত হতে পারেননি টাইগার দলপতি, ব্যক্তিগত ইনিংস যদি দলকে সাহায্য না করে, তবে সেটা তো ব্যর্থ৷
মুশফিকের এমন কথায় যদি ঝলসে উঠে বড় বড় ইনিংস খেলেন দলের অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা৷ তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফরে অন্তত ‘শেষটা’ ভালোভাবে করা যাবে৷ হোক না তুমুল লড়াই বা ড্র৷ মুশফিক তো টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ড্র করার লক্ষ্যই নির্ধারন করেছিলেন৷
সিরিজ শুরুর আগে দু’টি ম্যাচই জয়ের কথা বলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক দিনেশ রামদিন৷ পঞ্চাশ শতাংশ লক্ষ্য পূরন হয়ে গেছে ক্যারিবীয় অধিনায়কের৷ প্রথম টেস্ট যেভাবে খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাতে শক্তির বিচারে দ্বিতীয় টেস্টেও স্পষ্টভাবে এগিয়ে আছে স্বাগতিকরা৷ক্রেইগ বার্থহোয়াইটের ডাবল-সেঞ্চুরি, ক্রিস গেইল, ড্যারেন ব্রাভো ও অভিজ্ঞ শিবনারায়ন চন্দরপলের হাফ-সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে ৪৮৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ৷ ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া বার্থহোয়াইট করেন ২১২ রান৷
শুধুমাত্র ব্যাটসম্যানরাই নন, বল হাতে দারুণ পারফর্ম করেছেন ক্যারিবীয় বোলাররা৷ দু’ইনিংস মিলিয়ে স্পিনার সুলেমান বেন ৭ ও পেসার কেমার রোচ নিয়েছেন ৫ উইকেট৷ তাই সিরিজ জয় নিশ্চিতের জন্য দ্বিতীয় টেস্টেও ব্যাট-বল হাতে নিজেদের সর্বোচ্চটা যে ঢেলে দিবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলোয়াড়রা তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷