দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১সেপ্টেম্বর: জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৮২ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল করা হয়েছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক৷ এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী৷বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সেলিনা বেগমের এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ তথ্য জানান৷
মন্ত্রী বলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে বর্তমানে সুবিধা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের সনদ ও গেজেট বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে৷ এছাড়া যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি, তাদের চলতি বছর ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বরাবর অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছিল৷ আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন যাচাই-বাছাইপূর্বক গেজেটভুক্ত করে তাদের নামে সনদ ইস্যু করা হবে৷
ফাহমী গোলন্দাজ বাবুলের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘সব উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেঙ্ ভবন নির্মাণ প্রকল্প-নামে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে৷ যা গতবছরের জুলাই মাস থেকে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে৷ মোট এক হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২২টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেঙ্ ভবন নির্মাণ করা হবে৷ প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে৷ প্রকল্পটির আওতায় ইতোমধ্যে ১০টি উপজেলা কমপ্লেঙ্ ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং ১১৮টি উপজেলা কমপ্লেঙ্ ভবনের নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ এর মধ্যে ৮১টি কমপ্লেঙ্ ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে৷
এ কে এম রহমতুল্লাহর এক প্রশ্নের উত্তরে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী সংসদকে জানান, সারাদেশে বর্তমানে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে মোট ৫৫ দশমিক ৭২৪৫ একর জমি ও ১৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে৷
নুরজাহান বেগমের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে৷ ইতিমধ্যে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করা হয়েছে৷ বেশ কয়েকজনের বিচারের রায় প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং অন্যান্যদের বিচার কার্যও এগিয়ে চলছে৷ অভিযোগ প্রাপ্তিসাপেক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও চিহ্নিত রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী প্রধানদের দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে বিচার কার্য শুরু করা হবে৷ ভবিষ্যতে রাজাকার, আলবদর ও মানবতাবিরোধীদের উপজেলাভিত্তিক তালিকা করার বিষয়ে মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে৷
মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারাদেশে ভাতাপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫ হাজার ৩৫৭ জন৷ ঢাকার মোহাম্মদপুরে গজনবী সড়কে শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণার্থে দুটি বেজমেন্টসহ ১৫ তলাবিশিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ নির্মিত ভবনে ৮৪টি ফ্ল্যাট ও ৭৪টি দোকান রয়েছে৷
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে৷ সংসদে সরকারি দলের মোঃ শামসুল হক টুকুর এক প্রশ্নের জবাবে আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানি ভাতার পরিমাণ ৯শ’ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২ লাখে উন্নীত করেছে৷
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ২২৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ভূমিহীন অস্বচছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে৷ এই প্রকল্পে ২ হাজার ৯৭১টি মুক্তিযোদ্ধার বাসস্থান নির্মাণের সংস্থান রয়েছে৷ আগামী ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে৷ ইতোমধ্যে ২ হাজার ১৫টি বাসস্থান নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৬৮৬টি বাসস্থান নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে৷
এছাড়া দেশের ৬৪টি জেলায় একটি করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেঙ্ ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে৷ ইতোমধ্যে ১৮টি জেলায় ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করে তা হস্তান্তর করা হয়েছে৷ ২৫টি ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে৷ অবশিষ্ট ১৬টি ভবনের নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷ উপযুক্ত জমি না পাওয়ায় এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ৫টি জেলায় নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না৷
মন্ত্রী বলেন, ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সকল উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেঙ্ ভবন নির্মাণ প্রকল্প’ নামে আরও একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে৷ এই প্রকল্পের আওতায় ৪২২টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেঙ্ ভবন নির্মাণ করা হবে৷ ইতোমধ্যে ১০টি উপজেলায় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ ১১৮টি উপজেলায় নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ এর মধ্যে ৮১ কমপ্লেঙ্ ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে৷
তিনি বলেন, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণার্থে ঢাকার মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে দু’টি ব্যাজমেন্টসহ ১৫ তলা আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷
এদিকে, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন বলেছেন, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অন্যান্য প্রাণী রক্ষায় বর্তমান সরকার বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷তিনি সংসদে সরকারি দলের মহাম্মদ মিজানুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, সুন্দরবনের বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে৷ এ আইনে বাঘ হত্যা ও পাচারের দায়ে সর্বোচ্চ ১২ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন, ১৯৭৪’ এর আওতায় ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ৩টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করে এসব অভয়ারণ্যে সকল প্রকার বনজদ্রব্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, বাঘ ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ‘বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত মানুষের জানমালের ক্ষতিপূরণ নীতিমালা, ২০১০’ প্রণয়ন করে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ১ লাখ টাকা এবং আহত ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছে৷ এ যাবত ৫১টি পরিবারকে ৪৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে৷ সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণে বাংলাদেশ টাইগার এ্যাকশন প্লান (২০০৯-১৭) প্রণয়ন করা হয়েছে৷ এ পরিকল্পনার আওতায় বাঘ সংরক্ষণে সুন্দরবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে৷ জনবসতি এলাকায় চলে আসা বাঘ ব্যবস’াপনার জন্য ট্রাঙ্কলাইজার গানসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, বাঘ সংরক্ষণে স’ানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে সুন্দরবনের বাউন্ডারি এলাকায় ২৭টি ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি)’ গঠন করা হয়েছে৷ তাছাড়া বন বিভাগ ও ওয়াইল্ড টিম-এর সমন্বয়ে ৪টি ইমার্জেন্সি টাইগার রেসপন্স টিম’ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঘ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে দেশে-বিদেশে সুন্দরবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে এবং বাঘ ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে৷ এছাড়া বাঘ সংরক্ষণে সহযোগিতার লক্ষ্যে ভারতের সাথে ২টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে৷