bnp 20 dal_136308দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১সেপ্টেম্বর: বর্তমান অবৈধ সরকারকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস৷ তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন হবে অহিংস৷ আর এই অহিংস আন্দোলনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করবে৷ আপনারা যদি গণতান্ত্রিক বৈধ সরকার হয়ে থাকেন তাহলে বিএনপির অহিংস আন্দোলনে বাধা দেবেন না৷

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন৷ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বিচারপতি অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদে কাছে ফিরিয়ে দেয়ার গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২০ দলীয় জোটের আয়োজনে এই সমাবেশ হয়৷ খোলা ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করে এই সমাবেশ হয়৷

সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ২৩ দিনের ব্যবধানে এটি জোটের দ্বিতীয় সমাবেশ করছে৷ এর আগে গত ১৯ অগাস্ট জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালার প্রতিবাদে এই উদ্যানে সমাবেশ করেছিল৷সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের প্রতিবাদে জোট বুধবার সারা দেশে জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি পালন করে৷

ঢাকার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফ্যান্টুন নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে আসে৷ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতিতে মত্‍স্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়৷জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কয়েকটি বড় মিছিল এই সমাবেশে যোগ দেয়৷

মিজর্া আব্বাস বলেন, ক্ষমতার জোরে যতই আইন করুন না কেন৷ কোনো আইন-কানুন বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেওয়া হবে না৷ তাই সময় থাকতে জনগণের দাবি অনুযায়ী নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন৷দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আব্বাস বলেন, স্লোগান দেওয়ার সময় এখনো আসেনি৷ এ ইচ্ছা শক্তি জমিয়ে রাখুন৷ এমন এক সময় আসবে যখন বিএনপির নেতা-কর্মীদের স্লোগানে শেখ হাসিনার তল্পিতল্পা উড়ে যাবে৷সংসদে ষোড়শ সংশোধনী বিল উত্থাপন সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক উদ্যোগ বলে অভিযোগ করেছে ২০ দলীয় জোট৷ এর বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহবানও জানিয়েছে জোট৷

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার অবৈধ একটি সরকার৷ তড়িঘড়ি করে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে দেয়ার বিল এনেছে৷ এটা দুরভিসন্ধিমূলক৷ এর সঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন নির্বাচন কমিশন, কর্ম কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের বিষয় জড়িত৷ এই বিল সংসদে পাস হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিচারপতিরা আর স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না৷কারণ এই অভিশংসনের পর যে বিচারপতি একদিন এই প্রধানমন্ত্রীকে ( শেখ হাসিনা) রং হেডেড বলেছিলেন, তার কি হবে–৷ ওই বিচারপতি দেশে আছেন কিনা জানি না৷ যদি থাকেন তাহলে দেশ ছাড়ুন৷

মহানগর আহবায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের কবরের নিরবতা ও শান্তি বিরাজ করছে৷ এই শান্তি কেবল সরকারের মন্ত্রী-এমপিরাই ভোগ করেছে৷সরকারকে বলতে চাই, আপনারা যত আইন-কালা কানুন করেন না কেনো, কোন কিছু বিনা চ্যালেঞ্জ ছেড়ে দেয়া হবে না৷ আমরা বলছি, আমরা আন্দোলন করবোই৷ আমাদের আন্দোলন সহিংস নয়, অহিংস হবে৷ রাজপথে জনতার টেউ নামবে৷ দয়া করে আপনারা সহিংস আচরণ করবেন না৷

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এখনো সময় আছে, দেয়ালে কান পেতে মানুষের কথা বুঝতে শিখুন৷ সময় থাকতে জনগনের কথা ভেবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন৷ সেই নির্বাচনে আপনারা ক্ষমতায় আসলে কোনো আপত্তি থাকবে না৷’

হরতাল বন্ধ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ চাইলে হরতাল বন্ধে আইন করা হবে৷ আমি বলব, জনগণ তো আপনাকে চায় না৷ আপনারা ক্ষমতা ছেড়ে দিন৷ জনগণকে পাগল-ছাগল ভাববেন না৷

স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘বিচার বিভাগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে সরকার তড়িঘড়ি করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল সংসদে এনেছে৷ এর বিরুদ্ধে জনগনকে রুখে দাঁড়াতে হবে৷ আন্দোলনের মাধ্যমে এই অবৈধ সরকারকে উত্‍খাত করতে হবে৷’

বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দিতে গত ৭ সেপ্টেম্বর ‘সংবিধান ( ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বিলটি এখন আইন, বিচার ও সংসদ সমর্্পকিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে৷সংসদে না থাকা বিএনপি শুরু থেকেই সরকারের এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছে৷

স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন. বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদসহ সিনিয়র আইনজীবীরা অবস্থান নিয়েছেন৷ তারা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ এ থেকে বুঝা যায়, শেখ হাসিনার ঘরে আগুন লেগেছে৷ যত চেষ্টাই করুক না কেনো, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে৷’

তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গকে আজ ধ্বংস করে দিচ্ছে৷ প্রশাসন ও সংসদ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে৷ এখন বিচার বিভাগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোাগ নিয়েছে তারা৷’

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করে রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, এর বিরুদ্ধে আজ রুখে দাঁড়াতে হবে৷ অবৈধ সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে হটাতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন বলেন, যখন সরকার দেখছে, হাজার হাজার মামলা- মোকদ্দমা দিয়ে বিরোধী দলকে দমাতে পারছে না তখন দুরভিসন্ধিমূলকভাবে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বিচারপতিদের অভিশংসন আইন সংশোধন করছে৷ সংবিধান ধ্বংস করেতই তারা এটা করছে৷সরকার যে পথে এগুচ্ছে, তাতে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তাদের পতন ঘটবে বলে হুঁশিয়ারিও দেন তিনি৷

জামায়াতে ইসলামী প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলম বলেন,’এই সরকার একটি অবৈধ সরকার৷ তাদের কোনো এখতিয়ার নেই বিচারপতিদের অভিশংসনের আইন সংশোধনের৷ এই সংশোধনীর মাধ্যমে তারা বিচারকদের নিয়ন্ত্রণে করতে চায়৷ তাই সবাইকে মাঠে নেমে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে৷দলের কারাবন্দি আমীর যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবিও জানান তিনি৷

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন,সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিতেই সংসদে বিচারপতিদের অভিশংসনের ষোড়শ সংশোধনী বিল এনেছে৷ জনগন এটা মানে না৷ সরকারকে বলব, ক্ষমতায় থাকতে যতই আপনারা আটঘাট বাঁধেন না কেনো, কোনো লাভ হবে না, আপনাদের ক্ষমতাকে ছাড়তেই হবে৷’

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে ২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পাটির্র সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, খেলাফজ মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির খোন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাশনাল পিপলস পাটির্র ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপা’র খন্দকার লুত্‍ফর রহমান, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মুসলিম লীগের জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া,জমিয়তে উলামা ইসলামের মাওলনা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন৷

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান,বরকত উল্লাহ বুলু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, নাজিমউদ্দিন আলম, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবু সাঈদ খান খোকন, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, আলী রেজউর রহমান রিপন, এস এম জাহাঙ্গীর, রফিকুল আলম মজনু, সাহাবুদ্দিন মুন্না, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আবুল মনসুর খান দীপক, খন্দকার এনামুল হক বক্তব্য রাখেন৷