দৈনিকবার্তা-১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,দেশের মানুষ চাইলে হরতাল বন্ধে আইন করা যেতে পারে৷ তবে এ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের জনমত সৃষ্টি করতে হবে৷বুধবার দশম জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য এম এ হান্নানের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত সময় হরতালের নামে যা হয়েছে, সেটাকে তো আন্দোলন বলা চলে না৷ ওটা ছিলো সরাসরি খুন, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের আর এক রূপ৷
প্রশ্নকারী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান- এদেশের উন্নয়ন বার বার বাধাগ্রস্ত হয়েছে হরতালের কারণেই৷ তাই স্বল্পকালীন সময় হলেও হরতাল বন্ধে আইন করা যায় কি না?এর জবাবে না উত্তর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমি এ মুহূর্তে কিছু বলতে চাই না৷ কারণ এতে জনসাধারণের মতামত থাকতে হবে৷ আন্দোলন করা রাজনৈতিক অধিকার৷ আমরা দেখেছি হরতালের নামে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, গাড়ি পোড়ানোর দৃশ্য, ভাঙচুরের দৃশ্য৷ এটা দুঃখজনক৷ এ কাজ গ্রহণযোগ্য না, এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে হবে৷
আইন করে হরতাল বন্ধের ব্যপারে এই মুহূর্তে আমি কিছু বলতে চাই না৷ জনগণ যদি চায়, তাহলে সব সংসদ সদস্য মিলে এ ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানব উন্নয়নে উন্নয়নশীল ১৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম৷ তিনি সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্যে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের এমএ হান্নানের এক প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, সমপ্রতি প্রকাশিত ইউএনডিপি’র মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন’ অনুযায়ী বাংলাদেশ মানব উন্নয়নে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে৷
অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এ সাফলতা অর্জন করায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সফলতার কৃতিত্ব বাংলাদেশের জনগণের৷ যা অর্জন হয়েছে তা তাদের কঠোর পরিশ্রমের কারণেই সম্ভব হয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের বিগত মেয়াদে দেশের পরিকল্পিত ও সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করা হয়৷ এই রূপকল্পকে সামনে রেখে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে৷
তিনি বলেন, জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা জিডিপি’র ৩৮ শতাংশ অর্জন, টেলি ডেনসিটি বৃদ্ধি করে ২০২১ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা এবং ২০২১ সালের মধ্যে মোট ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত্ উত্পাদন ও সকল মানুষকে বিদু্যত্ সুবিধা প্রদানের পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির বেগম নূর-ই-হাসনা লিলির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আজ সংসদে এ কথা বলেন৷
শেখ হাসিনা বলেন,সরকারের গৃহীত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণাংশের যানজট নিরসন ও দেশের ৩০টি জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে যাত্রাবাড়ি থেকে গুলিস্তান হয়ে পলাশী অভিমুখী বেসরকারি বিনিয়োগে নির্মিত ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার’ গত বছরের ১১ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়েছে৷তিনি বলেন, সারাদেশে বেশকিছু সড়ক ৪ লেনে রূপান্তর করা হয়েছে৷ এগুলো হলো বনানী-টঙ্গী-জয়দেবপুর সড়ক, যাত্রাবাড়ি-কাঁচপুর-দাউদকান্দি সড়ক, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার-নবীনগর অংশ, নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্র সড়ক, ফরিদপুর শহর অংশ, ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের চৌমুহনী বাজার অংশ সড়ক, দৌলতদিয়া-ফরিদপুর-মাগুরা-ঝিনাইদহ-যশোর-খুলনা মহাসড়ক৷
তিনি বলেন, এছাড়া তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার নতুন রেললাইনস্থাপনের কাজ এবং রেলওয়ের মোট ৯৪৮ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৮৩৫ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর মোড় থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত মোট ৮৭ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, যাত্রাবাড়ি-কাঁচপুর সড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণ, এডিবির অর্থায়নে টঙ্গী-ভৈরববাজার সেকশনে ৬৪ কিলোমিটার ডাবল রেললাইন নির্মাণ কাজ আগামী বছর মার্চ মাসে শেষ হবে৷
তিনি বলেন, জাইকা’র অর্থায়নে চিনকী আস্তানা-লাকসাম রেলওয়ে সেকশনে ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইনের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ হবে৷ ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের বিপরীতে দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেল সেতু নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই শুর” হয়েছে এবং ইশ্বরদী থেকে ঢালারচর পর্যন্ত নতুনপ্রায় ৭৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া সেকশনের পুনর্বাসন ও কাশিয়ানি-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়াও ঢাকা এলিভেটেড এঙ্প্রেসওয়ে নির্মাণ এবং রেলওয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা শহরের তীব্র যানজট নিরসনে বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা এলিভেটেড এঙ্প্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলতি বছর শুরু হবে৷তিনি সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্যে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের মুহিবুর রহমান মানিকের এক প্রশ্নের উত্তরে আরো বলেন, এলিভেটেড এঙ্প্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে৷ আগামী ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে এই এঙ্প্রেসওয়ে নির্মান কাজ শেষ হবে৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৮ হাজার ৯শ’ ৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং উঠা-নামার জন্য ৩১টি র্যাম্পসহ মোট ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এঙ্প্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম তিনটি ধাপে বাস্তবায়িত হচেছ৷তিনি বলেন, প্রথম ধাপে হযরত শাহজালাল (রহঃ) আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত এবং তৃতীয় ধাপে মগবাজার থেকে কুতুবখালী, চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, বুয়েটের মাধ্যমে প্রস্তুত করা ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উত্তরা ৩য় ফেইজ সংলগ্ন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ৪০ একর জমি পাওয়া গেছে এবং পুনর্বাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এনজিও নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রথম ধাপের গ্যাস, বিদু্যত্, পানি, টেলিফোন, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদি ইউটিলিটি লাইনসমূহ অপসারণ ও প্রতিস্থাপন কাজ চলমান রয়েছে৷