Hatiya_and_Bholaদৈনিকবার্তা-ভোলা : ভোলা-৩ (লালমোহ তজুমদ্দিন) বিএনপির নেতাকমর্ীরা মামলা-হামলায় রীতিমত পর্যদুসত্ম হয়ে পরেছে৷রাজনীতির মাঠে কোন ঠাসা হয়ে পরা এই আসনের বিএনপি’র নেতাকর্মীরা এখন মিছিল দিয়ে যোগ দিচ্ছে সরকার দলীয় আ’লীগে৷ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যনত্ম আ’লীগ ক্ষমতায় ছিল৷ যেই বিএনপি’র কর্মীরা, আ’লীগকে ক্ষমতার সময় আন্দোলনের মাঠে ঠিকমত দাড়াতেই দেয়নি, সেই বিএনপি কমীরাও এখন কর্মসূচী নিয়ে মাঠে দাড়াতে পারছে না৷ দলীয় কোন্দল,বহিস্কার, নেতাকমর্ীদেও অমূল্যায়ন ও সারি সারি নেতাকর্মী আ’লীগে যোগদানের ফলে ক্রমেই নূয়ে পড়ছে এখানকার বিএনপি৷

ভোলা-৩ আসন থেকে ১৯৮৩ সাল থেকে শুরম্ন কওে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যনত্ম টানা ৬ বার এমপি হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ৷ তার পর থেকে এই নির্বাচনী এলাকাটিকে তিনি বিএনপির দূর্গে হিসেবে পরিণত করেছিলেন৷ কিন্তু দলীয় কোন্দল,বহিস্কার, নেতাকমর্ীদেও অমূল্যায়ন ও সারি সারি নেতাকর্মীরা দল ত্যাগের কারণে বিএনপি’র সেই দূর্গ এখন ব্যাপক হাওে ভেঙ্গে পড়তে শুরম্ন করেছে৷ এখানকা রাজনীতে সংশ্লীষ্টদের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, রাজনীতিতে দল পাল্টানোর ঘটনা এটি নতুন কিছু নয়৷ লালমোহন উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ একেএম নজরুল ইসলামও এক সময় বিএনপি’র রাজনীতি করেছেন৷ বিএনপি’র বর্তমান কেন্দ্রিয় ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদও হুসাইন মোঃ এরশাদের দল জাতীয় পার্টি করেছেন৷ সে সময় তাঁরা কর্মীদের স্বার্থ চিনত্মা করে দল বদল করেছিলেন৷ কিন্তু এখন কর্মীরাই নেতাদেও ছেড়ে দৌড়াচ্ছে৷ দেশে দূর্যোগ ও মহামারীর আলামত সব প্রাণী আগাম টের পায়৷ বিপদ যখন দেখা দেয়, তখন ঘরের আপন মানুষটিও ভাঙ্গা বেড়া দিয়ে পালায়৷ মামলা-হামলার জুজু ও স্বার্থের মোহে নূয়ে পরা এখানকার বিএনপি’র রাজনীতির চিত্র এখন একই রকম হয়ে পরেছে৷

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, লালমোহন ও তজুমদ্দিনের বিএনপি’র রাজনীতিতে এখন এক দূর্যোগকাল চলছে৷ এই দুই উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন মামলায় সাংবাদিক, মাস্টার,রাজনীতিবীদ ও নিরিহ লোক সহ আসামী হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লোক৷ সাথে যোগ হয়েছে ২০০১ সাল পরবর্তী ১৭৭ ঘটনার বিচার বিভাগীয় মামলা৷ (যার মধ্যে প্রায় দুই ডজন ইতোমধ্যে রেকোর্ড হয়ে গেছে)৷ বর্তমান প্রেক্ষাপটে আ’লীগের সাথে কুলিয়ে না উঠায় বিষয়টি দিন দিন পরিস্কার হচ্ছে বিএনপি’র মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের কাছে৷

গত ৭ বছর ধরে হামলা-নিপীড়ন সহ্য করা, পালিয়ে বেড়ানো, দেহ ক্ষয়, মানসিক যন্ত্রণা, পরিবারে অস্বস্থি, মামলার ঘাণী টানা, অহেতুক মামলায় পরা, আরো কত কী? এই তো পার হয়ে গেল ৭ বছর৷ সামনের আরো সাড়ে ৪ বছরও এভাবে চলতে থাকলে পিঠ দেয়ালেতো ঠেকবেই, বডি হয়ে যাবে শীর্ণকায়৷ তাছাড়া এখানে রাজনৈকিম মামলা জরালে ও দলীয় লাইনে তেমন একটা মূল্যায়ন ও করা হয়না৷ এমন অনুভুতি থেকেই বিএনপি সমর্থকরা দল পাল্টে আ’লীগে যোগ দিচ্ছেন৷ এই আসনের বিএনপি থেকে আ’লীগে যোগদানের মিছিল শুরম্ন হয়েছে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুরু থেকে৷

মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমদের সাথে অভিমান করে এ ধারা সৃষ্টি হলেও মূল্যত যোগদানের মাত্রা বাড়তে থাকে ২০১০ সালের ২৪ এপ্রিল এ আসনে উপ-নির্বাচনের পর থেকে৷ পৌর বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও ৬নং ওয়ার্ড সাবেক কাউন্সিলর মাসুদ পাটোয়ারী থেকে শুরম্ন হয়ে পর্যায় ক্রমে আ’লীগে যোগ দিয়েছেন বিএনপি’র ডাকসাইটের অনেক নেতারা৷

এর মধ্যে উল্যেখযোগ্যরা হলেন, কালমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার মৃধা, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিনা ইয়াসমিন, ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক হাওলাদার ও তার স্ত্রী উপজেলা মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুমা বেগম, চরভূতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর মিয়া, তোফাজ্জল মিয়া , বদপুরের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক, পৌর বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহবায়ক জহুরম্নল ইসলাম জামাল মিয়া, লালমোহন সদর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হানিফ মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক নুরম্নল আমিন মেম্বার, কালমা ইউনিয়ন যুবদল নেতা মোকলেস বকসী, রমাগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান উলস্ন্যাহ সেলিম, লালমোহন পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ঈমাম হোসেন, পৌর বিএনপি’র সাবেক যুগ্ন আহবায়ক ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরম্নজ্জামান খোকন, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসেম মাস্টার, ৭নং ওয়ার্ড সাবেক কাউন্সিলর মোরশেদ আলম দয়াল, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পারভিন আক্তার, সালমা বেগম সহ ৯টি ইউনিয়নের এরকম প্রায় কয়েক শ’খানেক ডাকসাইডের নেতা কর্মী সমর্থক আ’লীগে যোগ দিয়েছে৷ এখনো অনেক নেতাকমর্ী চাপা ৰোভ নিয়ে যোগদেওয়ার জন্য উত্‍ পেতে রয়েছেন৷ পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিএনপি’র একাধিক সূত্র জানায়, যারা বিএনপি ছেড়ে আ’লীগে গেছে তাদেরকে বিএনপি’র পিলারও ধরা যেতে পারে৷ পিলার ধসে পরলে ভবনের যে অবস্থা হয়, লালমোহন ও তজুমদ্দিনের বিএনপি’র এখন সেই অবস্থা৷ দলের অনেকে জানান,এ অবস্থা আরো চলবে৷ যতদিন ভিতরের অবস্থান পরিস্কার না হবে৷ দলের মধেই চাটুকার আছে৷ চাটুকাররা মেজর হাফিজের কান ভারী করছে৷ আ’লীগের দালাল বলে অনেককে উপহাস করে দল ছাড়তে উস্কানী দিচ্ছে৷ যার কারনে বিএনপির এক সময়ের দূর্গ নিজেরই দূর্বল করে ফেলছে৷

এব্যাপারে লালমোহন উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নজরম্নল কাদের মার্শাল হিমু জানান, এ অবস্থায়ও আমরা দলের জন্য দূরাবস্থা ভাবি না৷ ‘নারায়ে তাকবীর আলস্নাহ হুয়াকবার’ বলে যখন সস্নোগান শুরম্ন হবে, তখন জিয়ার সব সৈনিকরা এক কাতারে এসে যাবে৷ তিনি আরো বলেন, লালমোহনে বর্তমান আ’লীগকে চালায় বিএনপি৷ তাই আমি মনে করি আমরা দু’টি দলই চালাই৷ আ’লীগের গুরম্নত্বপূর্ণ্য কমিটি গুলোতে বিএনপি লোকেরা বড় বড় পদ নিয়ে বসে পরেছে৷

তাদের সবার সাথে আমার সকাল বিকাল কথা হয়৷ সুযোগ বুঝে তারা চলে আসবে৷ এছাড়া আ’লীগ থেকেও অনেকে বিএনপিতে ঢোকার চেষ্টা করছে৷ এই মূহুর্তে ঢুকলে বিপদ হতে পারে তাই তাদের অপেক্ষা করতে বলছি৷ তিনি আরো বলেন, বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে কোন্দল থাকবেই৷ বহিস্কার হয় দলের কমান্ড অমান্য করলে৷ তবে সব ক্ষোভ অভিমান এক সময় মুছে যায়৷ এদিকে উপজেলা বিএনপিতে বহিস্কারের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে৷ এতে একদিকে যেমন বহিস্কৃতরা ফুঁসে উঠে,ে অন্যদিকে হতাশ হয়ে পড়ছে মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মীরা৷ বহিস্কার ও কোন্দল সমানতালে চলতে থাকলে সামনের পরিণতি কী হবে তা নিয়েও শংকা বইছে বিএনপিতে৷ কোন্দলে জড়ানো এবং বহিস্কৃত নেতারা অদৃশ্য শেল্টার পেলে ভবিষ্যতে এই আসনের বিএনপি’র জন্য অশনীয় সংকেত বয়ে আনতে পারে৷

সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে প্রার্থী হওয়ার কারনে উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আক্তারম্নজ্জামান টিটবকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়৷ সে থেকে কোন্দলে আরো নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে৷ উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপি’র একটি গ্রম্নপ নিয়ে নতুন করে সাংগঠনিক কর্মকান্ড শুরম্ন করেছেন বহিস্কৃত নেতা আক্তারম্নজ্জামান টিটব৷ তিনি জানান, বহিস্কার নতুন কিছ না৷ এটা একটা পুরোনো পদ্ধতি৷

২৩ মার্চে তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাচনে গোলাম মোসত্মফা মিন্টু চেয়ারম্যান প্রার্থী হন৷ পরে মিন্টু সহ তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হাজি মোসত্মাফিজ মিয়াকেও বহিস্কার করা হয়েছে৷ বরিস্কারের পালস্না এমন হচ্ছে যে, সামনের দিন গুলোতে বহিস্কৃত নেতা কর্মীরা থাকবে সংখ্যা গরিষ্ঠ৷ এ অবস্থায় হতাশ হয়ে পরা বিএনপি’র নেতা কর্মীদের পাশে দাড়ানোই আমার দায়িত্ব বলে মনে করছি৷ জানা যায়, লালমোহনের বিএনপি নেতা নেজামল হক পাটোয়ারী ওরফে নেজু পাটোয়ারী, সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই হাওলাদার, লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক, পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ, ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন আলম, ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল মন্নান সহ বেশ কিছু নেতা কমর্ী টিটবের গ্রম্নপে কাজ করছেন৷ ২০০৯ সালে লালমোহন ও তজুমদ্দিনে বিএনপি’র কমিটি পুর্ণগঠন করা হয়৷ ঐ কমিটিতে সম্মানজনক পদ পদবী না দেয়ার কারনে লালমোহন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হাজি আনিচল মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মুন্সি, আক্তারম্নজ্জামান টিটব, তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হাজি মোসত্মাফিজ সহ বেশ কিছু নেতাকর্মী লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলায় বিএনপিতে আলাদা একটি ফ্লাট ফর্মে চলতে শুরম্ন করেন৷ তারা বিএনপি’র মূল ধারা পন্থী বলে নিজেদের দাবী করলেও এলাকায় তাদের হাফিজ বিরোধী বিএনপি হিসেবে দেখা হয়৷ এই বহিস্কৃত ও ক্ষুব্দ নেতাদের দলে সম্মানজনক পদ না দিলে আগামী এগারোতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেজর হাফিজের বিপরীতে এই ফ্লাটফর্ম থেকেই বিএনপি’র মনোনয়ন চাওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে হাফিজ বিরোধী একাধিক সূত্র ৷ এই সকল বিরোধ পূর্ণ মনোভাব পরিহার করে দলের স্বার্থে এক হয়ে কাজ করতে সকলকে আনত্মরিক হওয়া দরকার বলে মমনে করছেন দুটি উপজেলার বিএনপির ত্যাগী নেতা কর্মী ও সমর্থকরা৷