দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫সেপ্টেম্বর: সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যার পানি উঠায় মরিচের ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে৷ আর এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও৷ ডিম ও মরিচের দাম বেড়েছে বেশ কয়েকদিন আগেই৷ এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম৷ এছাড়া পিয়াজ, মাছ ও চালের দামও বাড়তির দিকে৷
বিক্রেতারা বলছেন, সবধরনের সবজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে৷ চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা৷ এছাড়া পিয়াজে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে৷ পাশাপাশি মসুর ডাল, মাছ, গরুর মাংস ও আলুর দামও বাড়তির দিকে৷ দেশের প্রায় ১৭টি জেলার বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকদেরও অবস্থা রিয়াজুলের মতেই৷ এতে বাজারে চাহিদা মতো সরবরাহ হচ্ছে না কাঁচাপণ্য৷ ফলে দাম বাড়ছে ঊর্দ্ধগতিতে৷
সিরাজগঞ্জ জেলার সবজি চাষী আনিসুলের পাঁচ বিঘার সবজিক্ষেত এখন পানির নীচে৷ বন্যার কবলে না পড়লে এই সময়ে প্রতিদিন ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতেন৷হতাশ রিয়াজুল জানান, চলতি বছরে এই সবজিক্ষেতের আয় দিয়ে রবি মৌসুমের ফসল আবাদ করার পরিকল্পনা ছিল৷ কিন্তু সব ভেস্তে গেছে বন্যায়৷শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত তিন সপ্তাহ ধরে লাল, পুঁই শাকসহ বিভিন্ন সবজির দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে৷ আর এক মাস ধরে কাঁচামরিচের দামের ঝাঁঝে রীতিমত অতিষ্ট হয়ে গেছেন ক্রেতারা৷বিক্রেতাদের দাবি বন্যায় কাঁচাসবজির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে৷ ফলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দাম৷ প্রায় প্রতিটি পণ্যেই ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের৷
মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা লিটন জানান, প্রতি আটি লাল ও পুঁই শাকের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা৷ কিন্তু বর্তমানে ২০ ও ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ প্রায় এক মাস ধরে কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়৷ বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন পণ্যের এই ঊধর্্বগতি৷গুলাশান মিরপুর কাঁচাবাজার থেকে বাজার করে বাড়ি ফিরছিলেন শ্যাওরাপাড়া এলাকার নূরুল ইসলাম৷ তিনি জানান, যেদিন বাজারে যাই সেদিনই বিক্রেতারা একটা না একটা অজুহাতে কাঁচাপণ্যের দাম বেশি নিচ্ছে৷ আর কাঁচামরিচের দাম তো বলে লাভ নেই৷ তাদের মতো মধ্যবিত্তদের এখন বাজার করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে৷
কাঁচাসবজি: বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি টমেটো ১১০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, ঝিঙ্গা ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, গাজর ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, আলু (সাদা) ২৪ থেকে ২৫ টাকা, লাল ৩৫ টাকা, কুরিকচু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ঢেড়স ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, কাকরল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, কচুর লতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে৷
এছাড়া ধনেপাতা একশ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়৷ প্রতিটি লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পাতা কপি ৪০ ও ফুল কপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়৷কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর বিপণন বিভাগ সূত্র জানায়, বাজারে কেজিপ্রতি সরু চাল (মিনিকেট, নাজিরশাইল) ৪৬ থেকে ৫৪ টাকা, মাঝারী চাল (পারিজা, হাসকি, বিআর ২৮) ৩৮ থেকে ৪২ টাকা, মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা, সুগন্ধি চাল (কালিজিরা, চিনিগুড়া) ৮০ থেকে ৯০ টাকা টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷
এছাড়া খোলা আটা কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৩ টাকা, ময়দা ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা, মশুরের ডাল ( দেশি ও বিদেশি) ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, দেশি (সাধারণ) ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷
মাছ: মাছের বাজারও চড়া৷ বিপণন অধিদপ্তরের মতে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কেজিপ্রতি রুই (দেশি) এক থেকে দুই কেজি ওজনের ২২০ থেকে ৩৪০ টাকা, রুই (আমদানি) দেড় কেজি থেকে তিন কেজি ওজনের ২০০ থেকে ৩২০ টাকা, কাতল (দেশি) এক থেকে দুই কেজি ওজনের ২২০ থেকে ৩৪০ টাকা, ইলিশ ৪০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম ৫০০ থেকে ৮৫০ টাকা, পাংগাস (চাষকরা) এক থেকে দুই কেজি ওজনের ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, সিলভার কার্প ও ব্রিগেড ১৪০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, কৈ (চাষ) ২০০ থেকে ২৬০ টাকা, চিংড়ি (ছোট) ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷
এদিকে তবে এ সপ্তাহে তা কিছুটা কমেছে৷ রাজধানীর বিভিন্ন মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত ঈদুল ফিতরের আগে মাংসের দাম বেড়েছিল৷ সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে এখনও৷কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, গরুর মাংস ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, খাসির মাংস ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ আর খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায়৷ আর লিটারপ্রতি খোলা সয়াবিন তেল ৮৮ থেকে ৯০ টাকা, পাম তেল ৭৩ থেকে ৭৪ টাকা, সরিষার তেল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, বিক্রেতারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সবজির দাম বাড়াচ্ছেন৷ কাওরানবাজারে সপ্তাহের বাজার করতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক চাকরিজীবী বলেন, অন্যান্য বাজারের তুলনায় কাওরানবাজারে সবজির দাম কিছুটা কম থাকার কথা থাকলেও এখন সব বাজারেই দাম বাড়তি৷ আর শুক্রবার এলেই বিক্রেতারা সবজির দাম বাড়িয়ে দেয়৷
কাওরানবাজারের মেঘনা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. মিজান মিয়া জানান, গত কয়েকদিনে বৃষ্টি হয়েছে৷ চাল শুকানো যাচ্ছে না, শুধুমাত্র এই অজুহাতে মিল ও চাতাল মালিকরা প্রতিকেজি চাল ১ থেকে ২ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন৷ একারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে৷