দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫সেপ্টেম্বর: মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকারের বই ১৯৭১: ভেতরে-বাইরে বাজেয়াপ্ত করার দাবিকে নাকচ করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন,কোন বইয়ের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে তা বাজেয়াপ্ত করা উচিত নয়৷বরং অন্য একটি বই লিখে তার প্রতিবাদ বা ঘৃণা প্রকাশ করতে হবে৷শুক্রবার রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরী চত্ত্বরে মহানগর বই উত্সব-২০১৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন৷ বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি’এ বই উত্সবের আয়োজন করে৷
অর্থমন্ত্রী বলেন,বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এই বই বাজেয়াপ্তের একটা দাবি উঠেছে,আমি শক্তভাবে ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করি৷ বই যত বাজেই হোক না কেন তা বাজেয়াপ্ত করা আমি সমর্থন করি না৷
তিনি বলেন, অন্যের বইয়ের প্রতি ঘৃণা ও ভিন্ন মত প্রকাশ করতে হলে তার বিপক্ষে আরেকটি বই প্রকাশ করতে হবে৷
এ প্রসঙ্গে ইংরেজ কবি জন মিল্টনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, তুমি জান না কোন লেখায়, কোন ক্লেশের মধ্যে মণিমুক্তা লুকিয়ে আছে৷আর কোন ক্লেশের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান বক্তব্যটি পেতে পার৷তবে বইয়ের যে সব বক্তব্য নিয়ে আপত্তি উঠেছে লেখনীর মাধ্যমে তার জবাব দেয়াই সমীচিন বলে মনে করেন মুহিত৷তিনি বলেন, অনেকে বিভিন্নভাবে মতামত লেখে৷ আপনাদের কাছেও অস্ত্র আছে৷ এর প্রতিবাদে লেখেন না কেন?
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রথমা থেকে প্রকাশিত এ কে খন্দকারের বইয়ের প্রকাশনা উত্সব হয় বুধবার৷ বইয়ে তিনি লিখেছেন, ৭ মার্চের ভাষণ ‘জয় পাকিস্তান বলে শেষ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ছিল না বলেও লিখেছেন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা৷
এই বইয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বইয়ের লেখক এ কে খন্দকারের সমালোচনা করেন৷কেউ কেউ বইটি নিষিদ্ধের দাবিও তোলেন৷
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বর্তমান সরকার জ্ঞানভিত্তিক সৃজনশীল বই প্রকাশনার বিকাশে সব ধরনের কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছে৷তিনি বলেন, আগামীতে একুশের বইমেলা যাতে অনেক বড় পরিসরে সোহরাওয়াদর্ী উদ্যানে হতে পারে, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বেশ আনত্মরিক৷
তিনি মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আরো বেশি করে বইমেলা আয়োজন ও বই পড়ার এলাকা গড়ে তোলার জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহবান জানান৷
তিনি এই বইমেলার সাফল্য কামনা করে আরো বেশি করে বইমেলার আয়োজন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান৷সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিত্ কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকার সৃজনশীল প্রকাশনার বিকাশে ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ থোক বরাদ্দ দিয়েছে৷ এছাড়া অর্থমন্ত্রণালয়ও আরো ২৫ কোটি টাকা এই খাতে থোক বরাদ্দ রেখেছে৷
তিনি বলেন,সরকার জ্ঞানভিত্তিক ও সৃজনশীল প্রকাশনা বিকাশের লক্ষ্যে সব ধরনের উদ্যোগকে উত্সাহিত করছে৷ এক্ষেত্রে তিনি মানুষ, মানবতাবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধ -এই তিনটি বিষয়ের প্রতি গুরম্নত্ব দিয়ে বই প্রকাশের জন্য সংশিস্নষ্টদের প্রতি আহবান জানান৷
সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, বাংলা একাডেমি এখন প্রকাশনার গুণগত মান বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা করছে৷তিনি বলেন, বিভিন্ন ভাষায় বই প্রকাশ করার মাধ্যমে আনত্মর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করার উদ্যোগের কারণে বাংলা একাডেমির প্রকাশনার সংখ্যা কমে গেছে৷ প্রকাশনার মান ভাল না হওয়ায় বহু বই গুদামে পোকায় খাচ্ছে৷পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অতিথিদের নিয়ে প্রথম মহানগর বই উত্সব উদ্বোধন করেন৷এ বই উত্সব আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যনত্ম চলবে৷উত্সবে বাংলা একাডেমি ও শিশু একাডেমিসহ মোট ৪৫টি সৃজনশীল প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে৷আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই বই উত্সব৷ প্রায় ৫৯টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন৷
বাংলাদেশের আরো খবর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক সামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিত্ কুমার বিশ্বাস,পাবলিক লাইব্রেরীর মহাপরিচালক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান ও বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি উসমান গণি প্রমুখ৷