দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫সেপ্টেম্বর: জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের দুই দিনের ঢাকা সফরে ৫০ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলসহ দেড় শতাধিক প্রতিনিধি নিয়ে শনিবার ঢাকায় আসছেন৷ সস্ত্রীক দুপুর ১টায় বিশেষ বিমানে শনিবার ঢাকায় পৌঁছাবেন৷ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথমে একান্ত বৈঠক করবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী৷ এরপর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বেঠক হবে৷ বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি বা ইশতেহার প্রধাশের কথা রয়েছে৷
শনিবার জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের শীর্ষ বৈঠকে অবকাঠামো উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ প্রাধান্য পাবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী৷
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আসন্ন সফরের গুরুত্ব তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, ১৪ বছর পর জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন৷ বাংলাদেশ এ সফরে জাপানের বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে৷ এ সফরকে দুই দেশের সম্পর্কে মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা যায়৷ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে জাপানের চলমান সহায়তার ক্ষেত্রে এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সর্বশেষ ২০০০ সালে জাপানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়েশিরো মোরি ঢাকা সফর করেছিলেন৷ গত ২৫ থেকে ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোকিও সফরকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান৷ সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই শিনজো আবে ঢাকায় আসছেন৷ উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরে জাপান সরকার আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে ৬০০ কোটি ডলার সহায়তার অঙ্গীকার করে৷
সফরসূচি অনুযায়ী জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সস্ত্রীক শনিবার দুপুর ১টায় বিশেষ বিমানে ঢাকায় পৌঁছাবেন৷ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷বিমানবন্দর থেকেই জাপানের প্রধানমন্ত্রী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন৷ এরপর তিনি যাবেন ঢাকার ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে৷ সেখান থেকে সোনারগাঁও হোটেলে ফিরে ‘জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ফোরামে’ বক্তব্য দিবেন৷
বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথমে একান্ত বৈঠক করবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী৷ এরপর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে৷ বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি বা ইশতেহার প্রকাশের কথা রয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিকেল ৫টায় বঙ্গভবনে যাবেন শিনজো আবে৷ সেখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সোনারগাঁও হোটেলে ফিরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈঠকে বসবেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে৷ এরপর সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় তিনি সোনারগাঁও হোটেলে তাঁর সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত ভোজ সভায় অংশ নেবেন৷ এর আগে সোনারগাঁও হোটেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান৷
রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে যাবেন৷ সেখানে জয়নুল গ্যালারি ঘুরে দেখার পর যাবেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে৷ সকাল সাড়ে ১০টায় বিশেষ বিমানে করে তাঁর ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে৷ জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কা যাবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী৷
জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সফরে কোনো চুক্তি হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এ বিষয়ে যৌথ ইশতেহারে জানা যাবে৷ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মাত্র তিন মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করেছেন৷ এখন জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ফিরতি সফরে কোনো চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা নেই৷ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক কারণে জাপান এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে৷ বাংলাদেশও মনে করে, এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সমন্বিত অংশীদারি সম্পর্ক আরো বেগবান হবে৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, সমপ্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে স্থান পাওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে শিনজো আবের সফরে৷ এ ছাড়া বাংলাদেশের বড় প্রকল্পগুলোতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে জাপান তার অঙ্গীকার পুনবর্্যক্ত করতে পারে৷ তিনি বলেন, আমরা আশা করি, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মধ্য দিয়ে জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে উত্সাহিত হবেন৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক এলাকা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে শিনজো আবের সফরে আলোচনা হতে পারে৷ জাপানের বিনিয়োগকারীরা এ দেশের জ্বালানি, বিদু্যত্ উত্পাদন, অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্য-প্রযুক্তি,বস্ত্র, তৈরি পোশাক,ওষুধসামগ্রী, অটোমোবাইলসহ সম্ভাবনাময় অন্য খাতগুলোতে বিনিয়োগে উত্সাহিত হবেন বলে বাংলাদেশ আশা করছে৷ রপ্তানি বাড়াতে বাংলাদেশ জাপানের সাহায্য চাইবে বলেও তিনি জানান৷
প্রতিবেদক/ জিএম/ ফোকাস বাংলা/ ১৯৫৫ ঘ.