দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩সেপ্টেম্বর: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা দুই দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পুননির্ধারণ করেছেন আদালত৷
খালেদা জিয়ার পক্ষে করা সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে নতুন এ দিন ধার্য করেছেন ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ বাসুদেব রায়ের আদালত৷ রাজধানীর বকশীবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতভবনে বুধবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন বিচারক৷ খালেদা জিয়ার সময়ের আবেদনে দুটি ট্রাস্টের সোয়া পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের দুই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ এক সপ্তাহ পেছালো আদালত৷
রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ঢাকা তৃতীয় মহানগর বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার এই বিচার চলছে৷সাক্ষ্যগ্রহণের দিন থাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ পরিচালক হারুনুর রশিদ খান ও মো. ইবরাহিম বুধবার সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত হন৷
কিন্তু উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল নিস্পত্তির অপেক্ষায় থাকার কথা বলে খালেদার আইনজীবীরা সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত করে সময়ের আবেদন করলে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে যায়৷খালেদার পক্ষে শুনানি করেন তার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক মাহাবুব উদ্দিন খোকন৷ অন্যদিকে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মোশাররফ হোসেন কাজল৷
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এ দুটি মামলায় গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠন করে আদালত৷এর মধ্যে এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদা ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জন এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো তিনজন আসামি হিসাবে রয়েছেন৷
এর আগে গত ২৭ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন থাকলেও খালেদা না আসায় এবং তার আইনজীবীদের সময়ের আবেদনে সেদিন শুনানি পিছিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর নতুন দিন রাখেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায়৷ওইদিনই বিচারক ৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের আদেশ দাখিল করতে অথবা খালেদাকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন৷
খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বলেন, বুধবার বেলা ১২টার কিছুক্ষণ আগে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গাড়িবহর আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়৷ পৌঁছায় ১টার আগে আগে৷
এদিকে খালেদা জিয়ার আসার খবরে নেতাকর্মীরা আলীয়া মাদ্রাসা সড়কের দুই পাশে জড়ো হয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন৷ বিএনপিপন্থি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও দলের শীর্ষ নেতারাও আদালতে উপস্থিত হন৷খালেদা গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে যাওয়ার পর আদালতের বাইরে বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে৷ পরে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷
যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আদালত ও আশেপাশের এলাকায় সকাল থেকেই বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়৷ বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার পাশাপাশি প্রবেশ পথে বসানো হয় আর্চওয়ে৷নিরাপত্তার স্বার্থে চকবাজার থেকে বকশীবাজার পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেন৷
গত ১৯ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও ‘জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট’ দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের পর তার বৈধতা ও অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যান খালেদা৷সেখানে তার আবেদন খারিজ হওয়ার পর বিষয়টি আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে৷এ দুই মামলা হওয়ার পর তা বাতিল চেয়েও হাই কোর্টে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন৷ তার আবেদন খারিজ হওয়ার পর তা আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে৷
২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷ তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে৷২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা৷
এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী,হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডবি্লউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷
এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক৷ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে৷ খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন৷জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে৷এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়৷দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন৷
মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান৷তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন৷ সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে৷ বাকি দুজন পলাতক৷
এর আগে দুপুর ১টা ১০মিনিটে দুই দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে আলিয়া অস্থায়ী আদালতের এজলাসকক্ষে উপস্থিত হয়ে নিজের আসন গ্রহণ করেন তিনি৷ খালেদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন৷অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব শুনানিতে বলেন, মামলার কার্যক্রম ও মামলার বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে হাইকোর্টে করা রিট আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ৷
আদালতে হাজির ছিলেন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুই মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ৷অস্থায়ী আদালতে খালেদার হাজিরাকে কেন্দ্র করে আলিয়া মাদ্রাসা এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷
আদালতে শুনানি চলার সময় আদালতের বাইরে বকশীবাজারের বিভিন্ন গলি ও রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিএনপির নেতাকর্মীরা৷ তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে৷ এ সময় আহত হন পুলিশসহ ২০-২৫ জন নেতাকর্মী৷আহতদের কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷