দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২সেপ্টেম্বর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সড়কদ্বীপে স্থাপিত তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরদের বহনকারী সেই মাইক্রোবাস।
বাসের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া একটি মাইক্রোবাস। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ঘটেছিল সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আর তাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন মাইক্রোবাসের আরোহী চলচ্চিত্র কিংবদন্তি তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর। বাঁচতে পারেননি চালকও। অভিশপ্ত সেই গাড়িটি ভাস্কর্য হয়ে জায়গা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) পার হয়ে শামসুন্নাহার হলের সম্মুখভাগে সড়কদ্বীপে গতকাল সোমবার এটি স্থাপন করা হয়েছে ‘সড়ক দুর্ঘটনা স্মৃতিস্থাপনা’ হিসেবে। ভাস্কর্যে দেখা যায়, গাড়িটির কয়েকটি চাকা পাশাপাশি পড়ে আছে। গাড়িটির ইঞ্জিন, তেলের ট্যাংক ও সিটগুলো দুমড়েমুচড়ে গেছে। প্রথম নজরে মনে হবে একটু আগেই বড় কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। এভাবে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটির ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই ভাস্কর্যের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও স্থাপনের কাজটি করেছেন এই দুর্ঘটনায় আহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগের শিক্ষক শিল্পী ঢালী আল মামুন। স্মৃতি স্থাপনাটির নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ। ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগিতায় এটির বাস্তবায়ন করেছে তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।
ঢাবি ক্যাম্পাসে জায়গা নিল মাইক্রোবাসটিস্মৃতিস্থাপনার সামনে ক্যাথরিন মাসুদসহ অন্যরা।
দুপুর সাড়ে ১২টা দিকে এই ‘স্মৃতিস্থাপনার’ উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। উপস্থিত ছিলেন মিশুক মুনীরের ভাই ড. আসিফ মুনীর, শিল্পী ঢালী আল মামুন, তারেক মাসুদের স্ত্রী ও তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ক্যাথরিন মাসুদ, ড. কামাল হোসেন, নারী নেত্রী খুশী কবির, হামিদা হোসেন, ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর আসিফ সালেহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক প্রমুখ।
ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে রাস্তাঘাট, গাড়ি ও যানবাহন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনাও। নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশে অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানে আমাদের সফল হতেই হবে।’
ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, এই ভাবনার পেছনে মুখ্য উদ্দেশ্য সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন হওয়া। এটি দেখে দর্শনার্থীরা যেন সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন হয়। এই স্থাপনা উচ্চ হারের সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে নীতি, আইন ও অবকাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, ‘এই স্মৃতিস্থাপনা নির্মাণ করা ও গৌরবের মধ্যে মিশে আছে হারানোর বেদনা। ট্র্যাজেডি যেভাবে একটি রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিল্পকলায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তেমনি আমাদের প্রত্যাশা নগরীর কেন্দ্রস্থলে স্থাপিত এই শিল্পকর্মটিও জনসচেতনতার গভীরে এক রূপান্তরকামী শক্তির বিচ্ছুরণ ঘটাবে।’
ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর আসিফ সালেহ বলেন, এই স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে কেবল তিন বছর আগের সেই ট্র্যাজেডিকে স্মরণ করিয়ে দিতে নয়। সড়ক দুর্ঘটনায় যে মৃত্যু, তা নিছকই অপ্রয়োজনীয়- এই বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের সেই মৃত্যুর ভয়াবহ স্মৃতি আজও তাঁদের পরিবার, বন্ধু ও স্বজনদের তাড়া করে বেড়ায়। সেই খণ্ডিত-বিখণ্ডিত মাইক্রোবাসটি দিয়ে তৈরি এই স্মৃতি স্থাপনা সবাইকে অবশ্যই ভাবতে বাধ্য করবে।