দৈনিকবার্তা-যশোর,১ সেপ্টেম্বর : দীর্ঘ চার বছর ধরে যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পড়ে আছে এক হাজার পাসপোর্ট৷ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থেকে পাসপোর্টগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে কার্যকারিতা হারাচ্ছে৷ এছাড়া আরও প্রায় এক হাজার পাসপোর্ট বাতিল করেছে কতর্ৃপৰ৷ এর আগের তিন বছরে (২০০৭-২০০৯) ৬ হাজার পার্সপোর্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে যায় বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে৷
যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে বৃহত্তর যশোর জেলার (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল) মানুষ এখান থেকে পাসপোর্ট করতে হয়৷ পাসপোর্ট অফিসে অনেক ঝুক্কি-ঝামেলা শেষ করে গ্রামের সাধারণ মানুষ এখানে পাসপোর্ট আবেদন জমা ও সংগ্রহ করতে আসেন৷যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্র জানায়, ২০১০ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যনত্ম এক হাজার রেডি পাসপোর্ট পড়ে আছে৷ আবেদনকারীদের পাসপোর্ট সঠিক সময়ে হলেও তারা আর কোন খোঁজ-খবর নেন না৷ আর এভাবে দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্ট পড়ে থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷
সূত্র জানায়, ২০০৭ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়৷ ফলে ওই সময় থেকে পাসপোর্ট আবেদনকারীরা পাসপোর্ট তোলার (সংগ্রহ) আগ্রহ হারিয়ে ফেলে৷ তাই তাদের পাসপোর্টগুলো যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে স্তুপাকারে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যায়৷ যে সব পাসপোর্ট পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যায় তা সবই আনত্মর্জাতিক৷
সূত্র জানায়, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যনত্ম মালয়েশিয়া, সৌদ আরব, দুবাইসহ বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর জনশক্তি রপ্তানি হয়৷ সে সময় প্রচুর মানুষ বিদেশে যাবার জন্য পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন৷ এরপর ২০০৭ সাল থেকে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েক দেশে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়৷ ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সাল পর্যনত্ম মানুষ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন৷ নিয়ম মাফিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে এসব পাসপোর্ট তৈরি করা হলেও আবেদনকারীরা এগুলো আর গ্রহণ করেননি৷
জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হবার কারণে ওই সময় ৬ হাজার পাসপোর্ট আবেদনকারীর পাসপোর্ট নষ্ট হয়ে যায়৷সূত্র জানায়, সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা করে ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে পাসপোর্ট করতে দেওয়ার পর অনেকেই আবার টাকা খরচ করে যশোর এসে পাসপোর্ট নিতে চাইছেন না৷ কেউ কেউ ৬ হাজার টাকা পর্যনত্ম জমা দিয়ে দ্রুত পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দেন৷
সূত্র আরও জানায়, যখন মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানি হত সে সময় যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ভিড় লেগেই থাকতো৷ পাসপোর্ট গ্রহণ ও নতুন পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন জমা দিতে দূর-দূরানত্ম থেকে মানুষ ভোররাতে এসে পাসপোর্ট অফিসের সামনে লাইন দিত৷ আর এখাত থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেত৷ কিন্তু ২০০৭ সালের পর বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়৷ যার প্রভাব পড়ে পাসপোর্ট অফিসে৷ সরকারের রাজস্ব আয় অনেকাংশে হ্রাস পায়৷ যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক আবু নোমার মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, কী কারণে মানুষ পাসপোর্ট নিচ্ছে না তার সঠিক কোন কারণ তিনি জানেন না৷ তিনি জানান, একজন মানুষ ৬ হাজার টাকা পর্যনত্ম সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন৷ এরপর আইনি প্রক্রিয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হলে তারপর পাসপোর্ট হয়৷ এতসব করার পরও মানুষ পাসপোর্ট নিচ্ছেন না কেন তার তিনি জানেন না৷