দৈনিকবার্তা-ঢাকা: পদ্মাসেতু দুর্নীতির চার্জশিট দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে দুদকের মামলার এজাহারভূক্ত আসামি সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের তিন কর্মকর্তাসহ সাত আসামিকেই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।
রোববার বিকেলে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল হয়েছে। মামলাটি নথিভুক্ত করে এর কার্যক্রম বন্ধ করার সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন পেশ করেছেন প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম।
দুদকের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বাংলানিউজকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত মহাজোট সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে দুদকের দায়ের করা মামলার আসামি কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের তিন কর্মকর্তা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল ও আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ, সেতুর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দরপত্র মূল্যায়নে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব কাজী ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের ও এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. মোস্তফাকেও চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রটি দাবি বলছে, মামলার মেরিট না থাকা, তদন্তে পর্যাপ্ত তথ্য, সাক্ষী না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে মামলাটি নথিভুক্ত করা হচ্ছে।
সূত্রটি বলছে, দেড় বছরের বেশি সময়ের তদন্তে মামলাটিকে এগিয়ে নেওয়ার মতো তথ্য পাওয়া যায়নি মর্মে আদালতে চার্জশিট পেশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবেদন জমা হয়েছে। এটা যাছাই-বাছাই করে দেখছি। প্রতিবেদনের রেজাল্ট সম্পর্কে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
দুদকের অপর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযুক্তদের বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় অব্যাহতির সুপারিশ করে প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়েছে। যদি কানাডা থেকে রমেশ শাহের কথিত ডায়েরি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়, তাহলে নতুন করে অনুসন্ধান করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকে পদ্মাসেতুর পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ‘ঘুষ লেনদেন ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
প্রকল্পে কানাডিয়ান কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনকে পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে লাভালিন কর্মকর্তা রমেশ শাহ ও মোহাম্মদ ইসমাইলকে আসামি করে কানাডার একটি আদালতেও মামলা হয়। প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করতে গত বছর কানাডা যান দুদকের দুই সদস্য।
কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ সরকার ও সরকারের বাইরে শীর্ষস্থানীয় কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে অর্থ দিতে হবে বলে তালিকাটি তৈরি করেছিলেন এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ শাহ।
জানা গেছে, কানাডিয়ান রয়েল মাউন্টেড পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ শাহ-এর ডায়েরি থেকে উদ্ধার করেছিল ওই ঘুষের তালিকা। সেই তালিকায় লেখা আছে, কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে এদের কিছু অর্থ দিতে হবে। কাকে কী পরিমাণ অর্থ দিতে হবে, ওই তালিকায় তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে। ওই তালিকায় সেই সময়ের মন্ত্রী, সচিব ও বেসরকারি পর্যায়ের কিছু লোকের নাম লেখা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের মামলার এজাহারে সন্দেহভাজন হিসেবে রাখা হয় সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে।