Education Minister Nahidদৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০আগষ্ট: বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলার জন্য ছাত্রদের পাশাপাশি কিছু শিক্ষকও দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ৷ জাতীয় উন্নয়নের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজক পরিস্থিতির জন্য শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, অপরাজনীতি করেন এমন কিছু শিক্ষকও জড়িত৷

এছাড়া, জ্ঞানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বানও জানান নুরুল ইসলাম নাহিদ৷ শনিবার ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ আয়োজিত বাংলাদেশে প্রকৌশল শিক্ষা, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন৷

গত ৪/৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে গণ্ডগোলের জন্যে শিক্ষকদের দায়ী করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ৷এসময় শিক্ষকদের স্বাধীনতা’কে নির্দেশ করে তিনি বলেন, শিক্ষকরা দল করেন, সেই দল ক্ষমতায় আসলে তিনি ভিসি (উপাচার্য) হবেন এই কারণে৷

নাহিদ বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা পড়ছেন, আবার কথায় কথায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙ্চুর চালাচ্ছেন, তাদের মনে রাখতে হবে কার টাকায় আপনারা এসব করছেন৷ যে ভিখারী এক ফোঁটা তেল কেনেন, তার দেওয়া করের টাকায় আপনারা পড়ছেন এবং তার টাকাতেই শিক্ষকদের বেতন হচ্ছে৷

তিনি বলেন, একটি দলের দুই গ্রুপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণ্ডগোল হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি করছেন, ভাঙ্চুর করছেন, মনে রাখতে হবে যে টাকায় এগুলো সংস্কার করা হবে সেটা গরীব কৃষকের৷

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নাহিদ বলেন, গত ৪/৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যত গণ্ডগোল হয়েছে, এর সঙ্গে শিক্ষকরাই জড়িত৷ আমি বলছি না সব শিক্ষক৷ তবে সবকিছুর পেছনেই রয়েছেন শিক্ষকরা৷ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা টাকা দেই শতভাগ, আর ক্ষমতা খাটাই শূন্যভাগ৷

শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নিজেরাই যদি গণ্ডগোল করেন,তবে শিক্ষার্থীদের কি শেখাবেন? আপনাদের স্বাধীনতা মানে, আপনারা দল করছেন৷ সে দল ক্ষমতায় এলে, ভিসি হবেন এই জন্য৷গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় একমত না হওয়াতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি৷

মন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্যে কোচিং সেন্টারে ৩২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়৷ শিক্ষার্থীরা জানে, কোন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে৷ একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করতে এক ঘন্টার পরীক্ষাকে আপনারা মূল্য দেন৷ সে যে এর আগে ৪০-৫০ ঘন্টার পরীক্ষা দিয়ে আসছে, তার মূল্য দেন না৷ ভর্তি প্রক্রিয়ায় কত টাকা আয় হয়, আমরা জানি না! কে কত টাকা ভাগ পায় আমরা সবই জানি৷

সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি নিজে স্কুলে না পড়িয়ে বাসায় প্রাইভেট পড়াবেন, আর শিক্ষার্থীকে বলবেন ভাল হতে, এটা হয় না৷বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে যেয়েও পারেন নি বলে জানান তিনি৷

নাহিদ বলেন,বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ করার সময় আমি চেয়েছিলাম উপাচার্যকে ফাইন্যান্স কমিটির প্রধান করতে এবং ভর্তি ও বেতন নির্দিষ্ট করার জন্য ইউজিসির অনুমোদন নিশ্চিত করতে৷ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়ার পর সংসদে অনুমোদন হলেও সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিতে গিয়ে এ দুটো বিষয় আটকে যায়৷

তিনি আরো বলেন, আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে ‘১০ লাখ টাকা দিলে আপনাকে মারা যাবে আর ২০ লাখ টাকা দিয়ে ফাইল পার হবে’৷ কোর্টের রায়ের কারণে ১৫ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা যাচ্ছে না৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রিট করে এখন চালাচ্ছে৷ তবে যেদিন রায় দেবে, পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে৷বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা গত ২০ বছরে কোটিপতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যায় নি উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে কম বাজেট৷ জিডিপিরি ৬ শতাংশ বরাদ্দ শিক্ষাখাতে থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২ শতাংশ৷ যা বিশ্বের সর্বো৷ শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো উচিত্‍৷ কিন্তু কিভাবে বাড়ানো যাবে! ছাত্রদের বেতন ১ টাকা বাড়ালে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেবে৷ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাচ্ছে না৷ এখানে ৯৫ শতাংশ অর্থ দিতে হয়৷ মাত্র ৫ শতাংশ অর্থায়ন আসে নিজস্ব তহবিল থেকে৷ শিক্ষার্থী বাড়ছে তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ নিয়েছি৷ আমাকে বলা হয়, আমি চোরদের পক্ষ নিয়েছি৷ আমি বাধ্য হয়ে চোরদের পক্ষ নিয়েছি৷

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার জামিলুর রেজা চোধুরী বলেন, আমাদের এখানে ৬৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল রয়েছে৷ যার মধ্যে সরকারি ২০ এবং বেসরকারি ৪৫ টি৷ তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ন্যাশনাল এক্রিডেশন কাউন্সিলের আওতায় আসতে চায় না বলে অভিযোগ করেন তিনি৷

ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার এম শামীম বসুনিয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত৷