দৈনিকবার্তা -নিউজ : দেশের প্রতিটি পরিবারকে ব্যাংকিং পরিষেবার আওতায় আনতে নরেন্দ্র মোদী ২৮শে আগস্ট নতুন দিল্লিতে শুরু করেন উচ্চাকাঙ্খামূলক ‘প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা’৷ প্রথম দিনেই এক কোটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়৷ মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ‘প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ উদ্দেশ্য, প্রতিটি পরিবারকে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা৷ দূর দুরান্তের দুর্গম এলাকার মানুষকেও ব্যাংক পরিষেবার আওতায় আনা৷
এই উচ্চাকাঙ্খামূলক ‘প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা’ প্রকল্প যাতে সফল হয়, তার জন্য রিজার্ভ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, মোবাইল ফোন পরিষেবা সংস্থাগুলিকেআগেই এই কাজে নামিয়ে কেওয়াইসি, অর্থাৎ ‘নো ইয়োর কাস্টমার’ সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহের প্রাথমিক কাজ শেষ করা হয়৷ বৃহস্পতিবার ২৮শে আগস্ট নতুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন৷
প্রথম দিনেই এক কোটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়৷ এ জন্য খোলা হয় ৬০ হাজার ব্যাংক শিবির৷ প্রকল্পে যাতে অগ্রগতি হয়, তার জন্য রিজার্ভ ব্যাংক প্রকরণগত পরিচয়পত্র দাখিলের শর্তাদি শিথিল করে৷ যাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নথিপত্র নেই, তাঁরাও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন৷ তারপর ছয় মাসের মধ্যে নথিপত্র জমা দিলেই চলবে৷ পরিচয় সংক্রান্ত নথিপত্রের মধ্যে আছে, বায়োমেট্রিক আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ১০০ দিনের জব-কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাশপোর্ট ইত্যাদি৷ যাঁদের নথিপত্র নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে নিজের ছবি ও আবেদনপত্র ব্যাংক অফিসারের সামনে সই করে দিলেই হবে৷ যাঁরা রুজি রোজগারের জন্য এক রাজ্য থেকে অন্য রাজে যান এবং নথিতে থাকা ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা আলাদা হলে নিজের সই করা হলফনামা দাখিল করলেই হবে৷
অন্যান্য যেসব সুবিধার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে আছে, অ্যাকাউন্ট ‘জিরো-ব্যালান্স’ হলেও ক্ষতি নেই৷ গ্রামীণ উপভোক্তাদের দেয়া হবে বিনামূল্যে ডেবিট কার্ড, যার মধ্যে থাকবে এক লাখ টাকার দুর্ঘটনা বিমা৷ সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে তা জানা যাবে মোবাইল ফোনে৷ তার জন্য ইন্টারনেটের দরকার হবে না৷
উল্লেখ্য, ভারতে যত মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, তারচেয়ে অনেকগুণ বেশি লোকের আছে মোবাইল ফোন৷ সবথেকে বড় সুফল হবে ভারতের ১২৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই গরিব৷ তাঁদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ চাষি ও মজুর৷ তাঁরা বিপদকালে টাকা ধার করতে ছুটে যান মহাজনদের কাছে৷ সেই সুযোগে মহাজনরা ঋণ দেয় ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি সুদে৷ পরে যখন তাঁরা ঋণ শোধ করতে পারেন না, তখন মহাজনদের কাছে সর্বস্ব বন্ধক রাখতে হয়৷ নাহলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয় তাঁদের৷ প্রায় ১০ কোটি পরিবার টাকা রাখে চিটফান্ডে অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায়৷ পরে তাঁদের হা হুতাশ করতে হয়৷ তবে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো, গরিবি রেখার নীচে বসবাসকারীদের নিয়ে, যাঁদের ‘নুন আনতে পান্তা’ ফুরায় অবস্থা৷ সঞ্চয় এঁদের কাছে বিলাস মাত্র৷ ব্যাংকও এঁদের মাইক্রো-ঋণ দিতে চাইবে না৷ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা না পড়ে হাজার হাজার অ্যাকাউন্ট হয়ে থাকবে নিষ্ক্রিয়৷ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এঁদের সামিল করা কতটা সম্ভব হবে, তাই নিয়ে সংশয় আছে সমাজ বিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিক মহলে৷ তার জন্য দরকার গরিব ও নিরক্ষরদের এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল করে তোলা৷