index 3

দৈনিকবার্তা নিজস্ব সংবাদদাতা, ২৯আগস্ট: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশ ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক পরিস্থিতির দেশ৷যেখানে ঘুম, খুন, হত্যা ছাড়া আর কিছুই নেই৷ সেখানে তারেক রহমানের উন্নয়ন ভাবনা মানুষের মাঝে স্বস্তি এনে দিয়েছে৷

তিনি বলেন, তারেক রহমানের যুক্তি নির্ভর উন্নয়ন ভাবনায় হেরে গিয়ে সরকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি ছেড়ে দিয়ে অশালীন ভাষায় কথা বলছে৷ তারেক রহমানের উন্নয়ন ভাবনায় এসেছে তিনিই ভবিষ্যত রাষ্ট্রনায়ক৷শুক্রবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘তারেক রহমানের উন্নয়ন ভাবনা ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন৷

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক চেহারার চাদর গায়ে দিয়ে কৌশলে সেই বাকশালের পথেই অগ্রসর হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সজ্ঞানে গণতন্ত্র হত্যা করছেন অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনমত ও বিশ্ববিবেককে উপেক্ষা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল এবং ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে তারা জনগণকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্রের লেশ মাত্র রাখতে চায় না৷জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা, বিচারপতিদের অভিসংশন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷

ফখরুল বলেন, এমনিতেই এখন বিচারপতিরা কোনো মামলার রায় ঘোষণার সময় রায় পরে দেয়া হবে জানিয়ে এজলাস থেকে বেরিয়ে যান৷ কথিত আছে তারা নাকি উপরওয়ালাদের সঙ্গে আলোচনা করে রায় ঘোষণা করেন৷ তারপরও সরকার বিচারপতিদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না৷ এখন যদি অভিসংশন ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয় তাহলে জনগণ কার কাছে যাবে, কোথায় যাবে৷ সাধারণ জনগণের ন্যায় বিচার পাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে৷

জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন,এ নীতিমালা করার অর্থই হচ্ছে গণমাধ্যম কর্মীদের মুখে কালো কাপড় বেঁধে দেয়া৷ অতীতে ‘৭৫ সালে বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল৷ বর্তমানেও তারা সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে৷ সমপ্রচার নীতিমালা, অভিশংসন আইন এরই বহিঃপ্রকাশ৷বিএনপির এই প্রবীণ নেতা বলেন, এ সরকারের ভয়াবহতা জনগণ সবাই বুঝতে পারছে না বলেই ৭১ সালের মতো জেগে উঠছে না৷ এখন জেগে না উঠলে দেশের অস্থিত থাকবেন না৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেবেন না৷ এর পরিণতি ভালো নয়৷ জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে কিছুক্ষণ ভালো থাকা যায়৷ হিটলার, মুসোলিনী কেউ টিকতে পারেনি, আপনারাও পারবেন না৷ তাই জনগণের কাতারে আসুন৷ এক নায়কতন্ত্রের কাতারে নাম লেখাবেন না৷ সরকারকে আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, অতি দ্রুত আলোচনা করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন৷ যে নির্বাচনে সব দল ও জনগণ অংশগ্রহন করে৷

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে ‘একদলীয় শাসনব্যবস্থা সংসদে পাস করেও আওয়ামী লীগ তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি৷ এবার তারা সেটাই করতে যাচ্ছে৷ওপর দিয়ে গণতান্ত্রিক চেহারার একটি চাদর গায়ে দিয়ে তারা ভেতরে ভেতরে গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে৷ উদ্দেশ্য একটাই- ভিন্ন কৌশলে ধীরে ধীরে বাকশালের দিকে অগ্রসর হওয়া৷আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী, নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা বাতিল, সমপ্রচার নীতিমালা প্রণয়ন এবং সংসদের কাছে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার মতো সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্র হত্যার নীল নকশা’ হিসাবে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল৷ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিলে তার পরিণতি শুভ হবে না বলেও তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করেন৷ দেশের বর্তমান অবস্থায় দলমত-নির্বিশেষ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, দেশের অবস্থা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে৷ আজ বাম-ডান, ছোট-বড় নয়, সকলকে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে এক হয়ে আওয়াজ তুলতে হবে, সোচ্চার হতে হবে৷ সবাইকে আজ জেগে উঠতে হবে৷

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপির সম্পদ অভিহিত করে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন,শেখ হাসিনার একটি কথায় বিএনপির যত ভোট বাড়ে, তত ভোট বাড়াতে বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেক কষ্ট করতে হয়৷ তাই তিনি আমাদের সম্পদ৷

সোহেল বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের মেরে রাজনীতি করতে হবে, এই ধরনের রাজনীতি বিএনপি করে না৷ শেখ হাসিনার নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে তারেক রহমানের কাছে অনুরোধ করতে পারে৷ আমরাই তাকে নিরাপত্তা দেব৷তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অনেকেই বিএনপির কাছে ঋণী৷ কিন্তু বিএনপি কারও কাছে ঋণী নয়৷ শেখ হাসিনাকেও এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান৷

‘৯০-এর অর্জিত গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ধুলিসাত্‍ করেছে অভিযোগ করে সোহেল বলেন, যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না, তারেক রহমান তাদের জন্য সমস্যা৷ তাই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে৷

গণতন্ত্রকে প্রকৃত পথে আনার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির কাছে সবাই অনেক বেশি প্রত্যাশা করছেন৷ অচিরেই তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করা হবে৷ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক ড. মাইমুল আহসান খান, মো. মামুন চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, হাফেজ ক্বারী মো.রফিকুল ইসলাম, বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রশীদ, অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ প্রমুখ৷