দৈনিকবার্তা-নিউজ , ২৯আগস্ট:বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের ইসলামি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও সুপ্রিম কোর্টের মসজিদের ইমাম মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং রোববার হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্র সেনা। এদিকে রাজধানীর জাতীয় ঈদগা ময়দানে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার পঞ্চগড়ে বড়শ্বশীতে নিজ গ্রামে তার দাফন করা হবে।
শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে মিছিল করে ছাত্র সেনার নেতা-কর্মীরা। এসময় তারা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। একই সঙ্গে রোববার সারাদেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালনের আহ্বান জানায়। মিছিলটি প্রেসক্লাব হয়ে জাতীয় ঈদগা ময়দানে এসে শেষ হয়।
এদিকে জাতীয় ঈদগা ময়দানে মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীর নামাজে জানাজায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের নেতা-কর্মীসহ তার ভক্ত ও অনুসারীরা অংশ নেয়।
ইসলামী ছাত্র সেনার কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল হক চিশতী বলেন, ‘রোববার সারা দেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালিত হবে। আগামীকাল আমাদের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। সোমবার সন্দেহভাজনদের আসামি করে মামলা করা হবে।’
মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীর সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব ছিলেন। রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন মাওলানা ফারুকী, একই সঙ্গে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের একজন কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক ছিলেন তিনি। ইসলামিক মিডিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। মূলত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে কাজ করায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেন ফারুকী।
বুধবার রাতে ফারুকীকে (৬০) রাজধানীতে নিজের বাসায় গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সেরাতেই ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যদিও আসামি হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।
তার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামে অবরোধ ও বিক্ষোভ হয়েছে। রাজধানী ঢাকাতেও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, আহলে সুন্নাতওয়াল জমা’আত, ছুন্নী আন্দোলন, ইসলামী ছাত্র সেনাসহ বেশ কিছু সংগঠন। ফারুকীর হত্যাকারীদের শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সময় বেঁধে আলটিমেটাম দিয়েছে ইসলামী ছাত্র সেনা। এই সময়ের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার না করলে আগামী রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে তারা।
প্রসঙ্গত মাওলানা শায়েখ নূরুল ইসলাম ফারুকী ১৯৫৯ সালের ২৪ নভেম্বর পঞ্চগড় জেলার বড়শ্বশী ইউনিয়নের নাউতারী নবাবগঞ্জ গ্রামে সভ্রান্ত আলেম মাওলানা জামসেদ আলীর পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। নিলফামারী জেলাধীন ডোমার থানার অন্তর্গত তিনিহাটি জামেউল উলুম সিনিয়র মাদরাসা থেকে ১৯৭৫ সালে দাখিল পরবর্তীতে আলিম পাশ করেন। ১৯৭৯ সালে প্রাচিনতম ঐতিহাসিক শারসিনা দারুন সুন্নাত আলিয়া মাদরাসা (বরিশাল) থেকে কামিল (হাদিস বিভাগ) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮১ সালে নীলফামরী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা জগন্নাথ (কলেজ) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে স্নাতক করেন।
ঢাকাসহ বিভিন্ন মসজিদে ৩৩ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন আলিয়া মাদরাসায় ১৫ বছর শিক্ষকতা, রেডিও, টেলিভিশনে ২৫ বছর ওয়াজ নসিয়তের অনুষ্ঠান করেন। তিন চ্যানেল আইয়ের ইসলামি অনুষ্ঠান কাফেলার জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এ অনুষ্ঠানটির জন্য তিনি মুসলিম বিশ্বের ১০টি দেশে ভ্রমণ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের মানুষের সুন্দর ও সঠিক নিয়মে পবিত্র হজ পালনে ২৫ বছর হজ কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। শেষ জীবনে হজরত শরফদ্দিন চিসতির দরবারে খাদেম ও সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জীবদ্দশায় তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন বলে তার পরিবার সূত্র জানিয়েছে। তার বইগুলো সুফিইজম ভিত্তিক। সর্বশেষ ‘মারেপুল হারামাই’ নামের বইটি লিখেছেন। বইগুলোতে ইসলামের আদি বা অবিক্রিত রুপগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। মাওলানা ফারুকী সংসার জীবনে দুই বিয়ে করেন। তার দুই সংসারে ২ মেয়ে ৪ ছেলে আছে। ছেলেরা হলেন- মাসুদুর ফারুকি, আহমেদ রেজা ফারুকী, ফয়সাল ফারুকী, মো. ফুয়াদ ফারুকী। মেয়েরা হলেন- হুমায়রা তাবচ্ছুম তুবা, লাবিবা লুবা। এদের মধ্যে মাসুদ এবং ২ মেয়ে আগের সংসারের। তার প্রথম স্ত্রি রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় থাকেন।