ইউক্রেন- মাটিতে যুদ্ধ, মুখে শান্তি

দৈনিকবার্তা -নিউজ :   ওলন্দাজ চাষিরা তাঁদের রাশিয়ায় রপ্তানি না হওয়া ফলমূল, শাকসবজি ঢালছেন মাঠে; অন্যদিকে আগামী শীতে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হতে পারে, আভাস দিলেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী৷  আরো অনেক আছে৷ বুধবার ইউক্রনের এক সামরিক মুখপাত্র জানান, একদল রুশ সৈন্য সাঁজোয়া গাড়ি ও ট্রাক নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে পূর্ব ইউক্রেনের আমভ্রোসিয়িভকা শহরে প্রবেশ করেছে৷ নয়ত রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নতুন সাফল্যের খবরই পাওয়া গিয়েছে: বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মূল ঘাঁটি দোনেৎস্ক-এর দক্ষিণে স্টোরেবেশেভো প্রদেশে ১৩০ জন সরকারি সৈন্য বিদ্রেহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বলে খবর দিয়েছে রুশ ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা৷ ইতিপূর্বে বিদ্রোহীরা দাবি করে যে, তারা ইলোভাইস্ক জংশন থেকে সরকারি সৈন্যদের বিতাড়ন করতে সমর্থ হয়েছে৷ এই জংশন স্টেশনটি ছিল এ অঞ্চলে সরকারি সৈন্যদের শেষ খুঁটি৷

ইউক্রেনের তরফ থেকে খবরটা অবশ্য একটু আলাদা: সামরিক মুখপাত্র আন্দ্রিই লিসেঙ্কো জানিয়েছেন যে, হরলিভকা এবং তারও উত্তরের ইলোভাইস্ক শহরকে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ২০০ জন বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হয়েছে, সরকারি সৈন্যরা বিদ্রোহীদের একাধিক ট্যাংক ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রণালী ধ্বংস করেছে৷ বিগত ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধে ১৩ জন ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত ও ৩৬ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন লিসেঙ্কো৷ এ হলো বুধবারের খবর৷ তাহলে মঙ্গলবার যে বেলারুসের রাজধানী মিনস্ক-এ ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট পোরোশেঙ্কোর সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের অত ঘটা করে সাক্ষাৎ হলো, তার কি কিছুই ফলশ্রুতি হয়নি?

দুই নেতা অন্তত তথাকথিত ‘সংযোগ গোষ্ঠী’-র সঙ্গে পুনরায় আলোচনা শুরু করার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছেন – যে ‘কন্ট্যাক্ট গ্রুপ’-এ উভয় দেশ ছাড়া ওএসসিই-ও আছে৷ এছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে জ্বালানি সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনাও নাকি শীঘ্র পুনরায় চালু হবে৷ কিন্তু মঙ্গলবার গভীর রাতে দুই নেতা যে প্রেস ব্রিফিং দিয়েছেন, তাতে মতৈক্যের চেয়ে মতানৈক্যই বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে৷ পুটিন জানান যে, মস্কো যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে কিয়েভ-এর সঙ্গে কোনোরকম আলাপ-আলোচনায় যাবে না, কেননা সংঘাতটা ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার৷ অপরদিকে পোরোশেঙ্কো বলেছেন, ওএসসিই-এর তত্ত্বাবধানে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা হবে৷ পুটিন এ কথার কোনো উল্লেখ করেননি৷

এই বুধবারেই আবার পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক বলেছেন, রুশ সৈন্যরা যে পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে, পোলিশ গুপ্তচর বিভাগের কাছে তার প্রমাণ আছে৷ ওলন্দাজ খামারচাষি এবং খাদ্য রপ্তানি সংস্থাগুলির কাছে সে যুদ্ধ এখন ঘরে এসে পড়েছে: ইউরোপ থেকে খাদ্য আমদানির উপর রুশ নিষেধাজ্ঞার ফলে হল্যান্ডের কৃষি কোম্পানিগুলোকে এই বুধবার থেকে ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে হচ্ছে৷ ওদিকে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী আর্সেনি ইয়াৎসেনিয়ুক নাকি জানতে পেরেছেন যে, রাশিয়া এই শীতে ইউরোপ অভিমুখে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করছে৷ অর্থাৎ গরম যুদ্ধ ইউক্রেনে হলেও, এ শীতে ইউরোপের মানুষদের হিটিং বিহীন ঠান্ডা যুদ্ধের মোহড়া নিতে হতে পারে৷