দৈনিকবার্তা – নিউজ : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসি) প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে নবজাতক চুরির ঘটনার সঙ্গে হাসপাতাল কর্মচারীদের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে র্যাব৷নবজাতক চুরির ঘটনায় র্যাবের হাতে আটক রাশেদা জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে এ তথ্য জানিয়েছে৷বিষয়টি র্যাবের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডিএমসির পরিচালককে জানানো হয়েছে৷
এক সপ্তাহ আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া শিশুটিকে গাজীপুর থেকে উদ্ধার করে বাবা-মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে র্যাব৷ র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, রাশেদা খানম পারভীন (৪৮) নামের এক ধাত্রী গত ২১ অগাস্ট হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে চুরি করে৷ তারপর ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে তিনি তুলে দেন বেলি আক্তার ওরফে রহিমা নামে ৪৫ বছর বয়সী নিঃসন্তান এক নারীর হাতে৷বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুর বোর্ডবাজারের উত্তর কলমেশ্বর এলাকার বটতলা রোডে রহিমার বাসা থেকেই শিশুটিকে উদ্ধার করেন র্যাব সদস্যরা৷ গ্রেপ্তার করা হয় দুই নারীকে৷
ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রুনা আক্তার গত ২০ অগাস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যমজ সন্তানের জন্ম দেন৷ পরদিন ভোরের দিকে তার একটি ছেলেকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান পারভীন, যিনি আরেক রুগীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ওই পরিবারের বিশ্বাস অর্জন করেন৷ রুনার মা গুলেনুর বেগম সে সময় পুলিশকে বলেছিলেন, যমজ শিশু দুটিকে ওয়ার্ডে নিয়ে আসার পর থেকেই এক নারীকে ওয়ার্ডে ঘুর ঘুর করতে দেখেন তারা৷ তাদের প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, তার ভাবী পাশের ওয়ার্ডে চিকিত্সাধীন৷ পরদিন সকালে নবজাতক শিশু দুটো কান্নাকাটি শুরু করলে ওই নারী একজনকে কোলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন বলে জানান গুলেনুর বেগম৷ কিছুক্ষণ পর শিশুটিকে নিয়ে উধাও হয়ে যান সেই নারী৷
এ ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে৷ শাহবাগ থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়৷ গণমাধ্যমে আসা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু চুরির সময় হাসপাতালের ৫৩টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার একটিও চালু ছিল না৷ ২০ অগাস্ট রাত ৯টা থেকে প্রায় ১২ ঘন্টা হাসপাতালের সার্ভার স্টেশন বন্ধ ছিল৷ এরই মধ্যে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিশুটি চুরি হয়৷ বিষয়টি আমলে নিয়ে শিশু চুরির ঘটনায় বুধবার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট৷
অন্যদিকে, নবজাতক চুরির কারণে অভিযুক্ত ডিএমসি কর্মচারীদের ওপর নজরদারি চালু করেছে র্যাব৷ একই সঙ্গে পুরো চক্রটিকে আটক করতে নজরবন্দি করা হয়েছে অন্য কয়েকজনকেও৷ র্যাবের সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আটক রাশেদা ও বেলি প্রথমে নিজেদের আসল পরিচয় স্বীকার করতে চাননি৷ পরে তাদের হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাণ্ডারের সহায়তা নেয় র্যাব৷এর পর পরই সব তথ্য স্বীকার করেন আটকেরা৷ র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে চুরির এই ঘটনার সঙ্গে হাসপাতাল কর্মচারীদের যোগসাজশের কথা জানায় ওই দুই নারী৷ একই সঙ্গে আরো কয়েকজনের নামও বলেন তারা৷ এদিকে, তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে এখনই ডিএমসির অভিযুক্ত কর্মচারীদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানায় র্যাব কর্মকর্তা৷
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, আমরা কয়েকজনের নাম পেয়েছি৷ এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে৷ নাম পেয়ে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারীকে ইতোমধ্যে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে৷ সময়মতো তাদেরও আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে৷ আর ওই সব কর্মচারীদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডিএমসি পরিচালককে বিষয়টি জানানো হয়েছে৷ এদিকে, নবজাতক চুরির ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত একটি তদন্ত টিমও এ বিষয়ে কাজ করছে৷ তারা খতিয়ে দেখছে, ওই ঘটনার সঙ্গে হাসপাতালের কোনো কর্মচারী জড়িত রয়েছেন কিনা৷ ডিএমসি থেকে চুরি হওয়া নবজাতক উদ্ধারের প্রতিক্রিয়ায় পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেউ শিশু চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের অঘটন আর না ঘটে, সে ব্যাপারে হাসপাতালে উপস্থিত অভিভাবকদের সার্বক্ষণিকভাবে সচেতন থাকতে হবে৷ এ ছাড়া হাসপাতালে অবস্থানকালে অপরিচিত কারো সঙ্গে মেলামেশা করা থেকেও বিরত থাকতে হবে৷