দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৭আগস্ট: ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার খবরে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে গাজার বাসিন্দারা । চুক্তির খবর পেয়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা যায়। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে বলে জানান হামাসের আলোচক মুসা আবু মারজুক।
এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে একে ‘অবরোধের অবসান এবং নতুন জাতির নির্মাণ ‘ বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া বিবাদমান দু পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় তিনি মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হামাসের নির্বাসিত উপ নেতা মুসা আবু মারজুক এ চুক্তিকে,‘প্রতিরোধের বিজয়‘ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স ও এপি জানিয়েছে, ইসরায়েলি সরকার এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। একই খবর দিয়েছে দেশটির ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যমগুলো।
মঙ্গলবার লড়াই অবসানের খবর শুনে মঙ্গলবার রাতে গাজার সড়কগুলোতে জমায়েত হয় নারী-শিশু নির্বিশেষে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। অনেককে তখন বিজয় চিহ্ণ ভি প্রদর্শণ করতে দেখা গেছে। তাদের হাতে ছিল হামাসের পতাকা। অনেকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উল্লাস করে। আবার আনন্দের আতিশয্যে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে থাকে কেউ কেউ। গাজার অধিবাসীরা এ চুক্তিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনীদের বিজয় হিসেবেই দেখছে।
অস্ত্রবিরতির সংবাদে গাজায় আনন্দের ঢল অস্ত্রবিরতির সংবাদে গাজায় আনন্দের ঢল
গাজা থেকে আল জাজিরা প্রতিনিধি এন্ড্রু সিমনস জানান, চুক্তির ফলে গাজার প্রবেশপথগুলো শিথিল করতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। এছাড়া উপকুলে ফিলিস্তিনিদের মাছ শিকারের ওপর থেকেও অবরোধ তুলে নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন,‘চুক্তি অনুযায়ী গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়া হবে এবং রাফা সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেয়াসহ পাঁচটি সীমান্ত চৌকি পরিবর্তন করার বিষয়টি বিবেচনা করবে ইসরায়েল।‘
এছাড়া আগামী এক মাসের মধ্যে গাজায় একটি বিমানবন্দর ও নৌবন্দর তৈরির বিষয়ে সরাসরি আলোচনা শুরু করবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন। হামাস দীর্ঘদিন ধরে এসব দাবি করে আসছিল।
মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত চুক্তিটিকে নিজেদের বিজয় হিসেবে দাবি করেছে ইসরায়েলও। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র ওফির গেন্ডেলম্যান আরব ওয়ার্ল্ডকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন,‘এর আগে হামাস মিশরের দেয়া একই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু এখন তারা এতে রাজি হয়েছে।‘ ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র মার্ক রেগেভ আল জাজিরাকে বলেন,‘গত ১৫ জুলাই হামাস যদি এ চুক্তিতে রাজি হত তবে এসব রক্তপাত এড়ানো সম্ভব হত।‘
এদিকে অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বক্ষরিত হওয়ার পর হামাস ও ইসলামি জেহাদ দলের বেশ কয়েকজন উর্ধ্বতন নেতাকে প্রকাশ্যে দেখা যায় যাকে একটি বিরল ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছে আল জাজিরা। মঙ্গলবার রাতে ইসলামি জিহাদের নেতা মোহাম্মেদ আল-হিন্দি গাজা সিটিতে হাজার হাজার জনতার উদ্দেশ্যে বিজয় ভাষণ দেন। তিনি বলেন,‘ আমরা আমাদের নিজস্ব নৌ এবং বিমানবন্দর তৈরি করতে যাচ্ছি। তারা হয়ত আমাদের বন্দরে হামলা চালাতে পারে। কিন্তু যারাই আমাদের বন্দরে হামলা চালাবে আমরা তাদের বন্দর ধ্বংস করে দেব।’
অস্ত্রবিরতির সংবাদে গাজায় আনন্দের ঢল অস্ত্রবিরতির সংবাদে গাজায় আনন্দের ঢল l
মঙ্গলবার দু পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা সিটির দুটি বহুতল ভবন ভেঙে পড়ে। এছাড়া আরো কিছু স্থাপণাও ধ্বংস হয়। বিমান হামলায় গাজার ১৫ তলা বাসা টাওয়ার ভেঙে পড়ে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইটালিয়ান কমপ্লেক্স নামে পরিচিত ১৩তলা ভবনটি। এ হামলায় ২০ ফিলিস্তিনি আহত হয়। এদিকে ফিলিস্তিনি মর্টার হামলায় একজন ইসরায়েলি নিহত এবং দু জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় ২১৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকই নারী ও শিশু। এছাড়াও এসব হামলায় প্রায় ১৭ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এসব হামলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
অন্যদিকে হামাসের রকেট হামলায় নিহত হয়েছে ৬৯ জন ইসরায়েলি যাদের বেশিরভাগই সেনা।