দৈনিকবার্তা,২৫ আগস্ট: বিকি রাসেলের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দিচ্ছেন তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। ছবি: মিন্টু হোসেনযুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে বাংলাদেশের তরুণেরা তৈরি করবেন ‘সিলিকন বাংলাদেশ’। তবে তার জন্য প্রয়োজন হবে সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। ২৩ আগস্ট শনিবার বিকেলে দৈনিক ইত্তেফাক ও স্টার্ট আপ ঢাকা আয়োজিত ‘সিলিকন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা ‘সিলিকন বাংলাদেশ’ তৈরির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি শামীম আহসান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুগল ইউএসএ এজেন্সি ডেভেলপমেন্ট প্রধান বিকি রাসেল। মূল প্রবন্ধ প্রদর্শন করেন বিগ ডাটা পার্টনারশিপ ইউকের প্রিন্সিপাল কনসালট্যান্ট ক্রিশ্চিয়ান প্রকপ।
দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক তারিন হোসেইনের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও আলোচনা করেন বিসিএস সভাপতি মাহফুজুল আরিফ, বিসিসির নির্বাহী পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, ওকে মোবাইলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান, স্টার্ট আপ ঢাকার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাইয়াজ তাহের, ইল্যান্স-ওডেস্কের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদুর মামুন খান, টিম ইঞ্জিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিরা জুবেরী হিমিকা, এটুআইয়ের যোগাযোগ কর্মকর্তা হাসান বেনাউল ইসলাম প্রমুখ।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। প্রতি মাসে ৪০ হাজার সাধারণ জনগণ ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে সেবা নিচ্ছে। সরকারি ২৫ হাজার ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ একসঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গুগলের সহায়তায় ৪০০টি স্কুলে চার লাখ শিক্ষার্থীকে ইন্টারনেট-সম্পর্কিত জ্ঞানদানের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে যাতে ফেসবুক, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরির কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। পরবর্তী সময়ে তাঁদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি হতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। সবাই মিলে কাজ করলে একদিন সিলিকন বাংলাদেশ তৈরি হবে।
বেসিস সভাপতি শামীম আহসান বলেন, ‘দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক/এনবিএফআই কিংবা তাদের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিকে দুইবার ট্যাক্স দিতে হয়। এ বিষয়ে একটি সমাধান প্রয়োজন। ভেঞ্চার ক্যাপিটালের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য আমাদের দেশে কোনো আইন নেই। উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে ভেঞ্চারের গুরুত্ব বিবেচনায় এ-সংক্রান্ত আইন করা প্রয়োজন। দেশে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল যদি সফল হতে পারে, তবে অনেকেই এদিকে এগিয়ে আসবে। ফলে এর মাধ্যমেও ব্যবসায়ের অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজতর হবে। পাশাপাশি শুধু বিনিয়োগ পাওয়া নয়, এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিনিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে যেতে হবে।’
শামীম আহসান আরও বলেন, দেশের সবচেয়ে ভালো মেধাবীদের ৮০ ভাগ বিদেশে চলে যায়। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মেধা ও পুঁজি দেশে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। সংযোগ স্থাপন করে প্রযুক্তি খাতের দেশি বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন কিংবা বিদ্যমান শিল্পে তাদের মেধা প্রয়োগের ব্যবস্থা করা জরুরি। এ জন্য সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।
গুগল ইউএসএ এজেন্সি ডেভেলপমেন্ট প্রধান রাসেল বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও সিলিকন বাংলাদেশ তৈরি করতে সর্বস্তর থেকে উদ্ভাবনী আইডিয়া তুলে আনতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরির পাশাপাশি তাঁদের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে উত্সাহিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণ করতে হবে।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি স্টার্ট আপ কোম্পানি কিনতে চায়। তবে তাঁদের আগে দেখাতে হবে আমার সেই স্টার্ট আপের পেছনে কতটা বিনিয়োগ করেছি। এ ছাড়া সিলিকন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাইলে সবাইকে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে।