দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২১আগষ্ট: ডা. পঞ্চানন মহলী। খুলনা মহানগরীর রয়্যাল মোড়ে ‘খুলনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ কয়েক বছর ধরেই রোগী দেখে আসছেন। ‘ভালো চিকিৎসক’ হিসেবে খুলনায় তার খ্যাতিও কম নয়। রোগীদের কাছে পঞ্চানন প্রথমবার ফি নেন ৬০০ টাকা।
খুলনা ব্যুরো
ডা. পঞ্চানন মহলী। খুলনা মহানগরীর রয়্যাল মোড়ে ‘খুলনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ কয়েক বছর ধরেই রোগী দেখে আসছেন। ‘ভালো চিকিৎসক’ হিসেবে খুলনায় তার খ্যাতিও কম নয়। রোগীদের কাছে পঞ্চানন প্রথমবার ফি নেন ৬০০ টাকা। তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার গেলে ফি নেন ৫০০ টাকা। তার নামের শেষে ডিগ্রি লেখা ‘এমবিবিএস’। গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও র্যাব-৬-এর একটি দল অভিযান চালিয়ে ভুয়া চিকিৎসক পঞ্চাননকে গ্রেফতার করে। অন্য একজনের সার্টিফিকেট ঘষামাজা করে নিজের নামে চালিয়ে আসছেন তিনি। তার নেওয়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সনদও ভুয়া। শুধু পঞ্চানন মহলীই নন, আরও ৬ ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেফতার করেছেন র্যাব-৬-এর সদস্যরা। তাদের মধ্যে ছয় জন এসএসসি ও একজন এইচএসসি পাস করেছেন। তবে তাদের নামের পাশে লেখা রয়েছে_ এমডি (ডক্টর অব মেডিসিন), পিএইচডি, পিজিটি, মেডিসিন, চর্ম, শিশু বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও তারা প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং স্বাস্থ্যসেবাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছিলেন। তারা স্বীকার করেন, কিছু অসাধু ব্যক্তির মাধ্যমে সার্টিফিকেট ক্রয় করেন। ‘কমন’ ওষুধ হিসেবে তারা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ, গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ের ওষুধ এবং পেটের সমস্যায় ইমোটিল দিতেন।ওরা ম্যাট্রিক পাস করেই এমবিবিএস ডাক্তার!
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম আনোয়ার পাশা পঞ্চাননকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড দেন। অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় চলে এ অভিযান। পরে বিকেল সোয়া ৬টায় নগরীর শেরেবাংলা রোডে সেবা ক্লিনিকের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয় অভিযানের বিস্তারিত।প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এনামুল আরিফ সুমন জানান, এমবিবিএস ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয়ে রোগী দেখার সময় ৭ ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ সারাদেশে তাদের মতো আড়াই শতাধিক ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছেন। তারা স্থান পরিবর্তন করে এবং কৌশলে চিকিৎসা কার্যক্রম চালান। তাদের নামের পাশে নানা রকম ভুয়া ডিগ্রি লেখা থাকে।
র্যাব জানায়, মীম নার্সিং হোমের ভুয়া চিকিৎসক ফেরদাউস রহমানকে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। খুলনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুয়া চিকিৎসক পঞ্চানন মহলী ও সেবা ক্লিনিকের ভুয়া চিকিৎসক অনুপ মিত্রকে ২ বছর করে কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাস করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল ডেন্টাল ক্লিনিকের ভুয়া ডাক্তার গাউসুল আজম, এএন ডেন্টাল কেয়ারের ভুয়া ডাক্তার সৌমেন ও রংধুন ক্লিনিকের ভুয়া ডাক্তার ইব্রাহিম বাহাদুরকে ৯ মাস করে কারাদণ্ড ও ১ লাখটাকা করে জরিমানা অনদায়ে আরও ৩ মাস করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাইভেট প্রাকটিস করা ভুয়া চিকিৎসক ডা. কাঞ্জিলালকে ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।র্যাব-৬-এর অধিনায়ক জানান, অধিকাংশ ভুয়া চিকিৎসকেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তারও নিচে। দিনের পর দিন তারা প্রতারণা করে চিকিৎসা সেবা ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছিলেন। গ্রেফতারকৃত ৩-৪ জন বিজ্ঞান বিষয়ে লেখাপড়া না করেও এমবিবিএস বনে গেছেন। এসব ভুয়া ডাক্তারের স্বার্থরক্ষায় একটি সংগঠনও রয়েছে।
তিনি জানান, ২০০৫ সালে ঢাকায় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠান নাম পরিবর্তন করে পিচ-ব্লেন্ড বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে কার্যক্রম চালায়। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা না করে তারা সার্টিফিকেট বিক্রি করে। খুলনার ভুয়া চিকিৎসকদের বেশ কয়েকজন সেখান থেকে সার্টিফিকেট কিনেছেন।র্যাবের অধিনায়ক আরও জানান, গ্রেফতারকৃত ভুয়া চিকিৎসকরা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না ভেবেই রোগীদের উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকসহ ৫ ধরনের ওষুধ লিখে দিতেন। যা রোগীর জন্য খুবই ক্ষতিকর।র্যাব জানায়, নগরীর ৩১০নং খানজাহান আলী রোডে ভুয়া চিকিৎসক জিএম মৃধাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হলেও তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি।অভিযানের সময় র্যাব-৬ এর উপ-অধিনায়ক মেজর কুদরত, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মাসুদ সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।