দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮আগষ্ট: একদলীয় বাকশাল কায়েমের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই বিচারকদের অভিসংশনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে নেয়ার আইন করছে সরকার-এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷সোমবার স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ অভিযোগ করেন৷সোমবার মন্ত্রিসভায় সংসদকে ক্ষমতা দিয়ে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব তোলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি৷
ফখরুল বলেন,সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় থাকতে চায়৷ তারা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সমপ্রচার নীতিমালা করেছে৷ সংসদের হাতে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের ফিরিয়ে দিতে আজ মন্ত্রিসভায় খসড়া আইন উঠছে৷ এভাবেই তারা সুপরিকল্পিতভাবে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করতে চাচ্ছে৷সরকারের এই ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি৷
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন,বিএনপি নয় আওয়ামী লীগই জঙ্গিবাদের মদদদাতা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে৷তিনি বলেন, এ আইন বাস্তবায়ন হলে দেশে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না৷ মূলত একদলীয় বাকশাল কায়েমের জন্যই সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷
বিএনপি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, বিএনপি কখনো জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয় না, বরং আওয়ামী লীগই জঙ্গিবাদের প্রশ্রয়দাতা৷ কারণ তাদের সময়ই দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে৷এছাড়া একই দিন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুলকে নিয়ে করা সৈয়দ আশরাফের বিদ্রুপের জবাবে ফখরুল বলেন, এটা বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সৈয়দ আশরাফের অনধিকার চর্চা৷
এর আগে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উপলক্ষে প্রবেলা ১১টার দিকে সংগঠনের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবুরসহ নেতা-কর্মীদের নিয়ে জিয়ার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ফখরুল৷পরে প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়৷ এ সময়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও ছিলেন৷
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে একযোগে বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার মদদ ছিল- স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, সৈয়দ আশরাফ সাহেবের এই বক্তব্য মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত৷ বার বার তারা জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছে৷বিএনপিকে সম্পৃক্ত করতেই সরকার প্রধানসহ সিনিয়র মন্ত্রীরা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি৷
জঙ্গিবাদ আওয়ামী লীগের আমলেই শুরু হয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে তাকে নিয়ন্ত্রণে এনেছিল৷ জঙ্গিদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছিল৷ আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল৷ বেগম খালেদা জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী৷ তিনি দীর্ঘ সময়ে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন৷ বিএনপিতে মৌলবাদের কোনো স্থান নেই৷যারাই মৌলবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চেয়েছে, তাদের বেগম জিয়া গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনেছেন৷ তাদের নিয়ন্ত্রণ করেছেন৷ তাই যারা বিএনপিকে মৌলবাদের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়, তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এরকম অপপ্রচার চালাচ্ছে৷
রোববার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৭ অগাস্টের একযোগে হামলার মদদদাতা হিসাবে খালেদা জিয়াকে সরাসরি দায়ী করে বক্তব্য দেন৷তিনি বলেন, তখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, তিনি তাদের পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন৷বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি৷ এ দলটি পরে নিষিদ্ধ হয়, ফাঁসি হয় শীর্ষ নেতাদের৷এদিকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব পদে দীর্ঘদিন থাকার পরও মির্জা ফখরুলকে ভারমুক্ত না করার বিষয়ে সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের জবাবও দেন ফখরুল৷খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃতু্যর পর ২০১১ সালের এপ্রিলে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয় ফখরুলকে৷এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত হিসাবেই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি৷