অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত-1

দৈনিকবার্তা- ঢাকা,১৭আগষ্ট : মানব উন্নয়ন ও অর্থনীতির বিভিন্ন সুচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়্তেযা টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত৷ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কর্মসংস্থানই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত৷ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন বিষয়ক সামাজিক সংগঠন (এমিনেন্স)আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন৷বাংলাদেশ সম্মেলন:টেকসই উন্নয়ন-২০১৪,১০০ বছরের মিশন শীর্ষক চারদিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক সংগঠন এমিনেন্স৷

অর্থমন্ত্রী বলেন,দেশে প্রায় ৭ কোটি ৮০ লাখ শ্রমশক্তি রয়েছে তবে এর মধ্যে ২০% কম মানুষের আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে৷বাকী শ্রমশক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বেকার৷এ সমস্যা সমাধানে দেশের অর্থনীতিবিদদের একটি মডেল খুঁজে বের করতে হবে৷

তিনি বলেন, কিভাবে ওয়েজ কর্মসংস্থান বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে আমাদের চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে৷ আর আমরা সাধারণভাবে জানি যে, যেখানে বড় করে ইন্ড্রাস্টি হয় সেখানে ওয়েজ কর্মসংস্থান হয়৷ তবে আমাদের সেখানেও দেখছি ঠিক সেভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে না৷ অর্থনীতি নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের কে আমি বলবো কর্মসংস্থানের জায়গা তৈরি করুন৷ যেনো বিশ্বের কাছে রোল মডেল তৈরি করতে পারি৷

তিনি আরো বলেন, মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে তবে মাথাপিছু জাতীয় আয় বাড়লেও, মাথাপিছু ক্রয়ক্ষমতা সেভাবে বাড়েনি৷ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কর্মসংস্থানই বড় চ্যালেঞ্জ৷ কিভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান আরও বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারে যারা উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও গবেষক রয়েছেন তাদের পরামর্শ প্রয়োজন৷ তিনি বলেন, সেবার মুল্য নির্দিষ্ট৷ যে সেবা একজন দিতে পারেন সে সেবা যখন তিনজন মিলে দেন, তখন একজনের আয় ৩ জনের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়৷ সুতরাং আয়ের পরিমাণও কমে যায়৷

বাংলাদেশে মোট শ্রম শক্তির পরিমান ৭৮ মিলিয়ন৷ এরমধ্যে মাত্র ২০ মিলিয়ন সাংগঠনিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত৷ সবাইকে কিভাবে সাংগঠনিকভাবে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়া যায় সে ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ মতও প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী৷ বাংলাদেশের দারিদ্র দূরীকরণে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের ভূমিকা উল্লেখ করে তার প্রশংসা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত৷ দারিদ্র্য দূর করতে ক্ষুদ্রঋণ এদেশে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী৷ আর এই ক্ষুদ্রঋণকে ড. ইউনূস প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন মুহিত৷

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেন অর্থমন্ত্রী৷ড. ইউনূস ক্ষুদ্র ঋণের প্রবর্তক নন বলেও বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেন আবুল মাল আব্দুল মুহিত৷

অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা এ দেশে খুব বেশি দিনের পুরোনো নয়৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ধারণা অনেক পুরোনো৷ ক্ষুদ্র ঋণ জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে৷ তবে সাধারণ মানুষ এক সময় মনে করত শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ঋণ মানব উন্নয়ন করতে পারে, যা একটি পুরোনো ধারণা৷

মুহিত বলেন, টেকইস উন্নয়ন ১৯৮৪ সালের ধারণা৷ তারপরেও এটি স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে৷ প্রাকৃতিক সম্পদ এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এই সম্পদের অভাববোধ না করে’ এমন চিন্তাধারা থেকে টেকসই উন্নয়ন আলোচনা উঠে আসে৷

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে কাজ করার অঙ্গীকার করেন অর্থমন্ত্রী৷ আর টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে এমিনেন্সের ‘মিশন ফর ১০০ ইয়ারস’ কে মেনে নিতে পারেননি তিনি৷ ভালোভাবে কাজ করলে এতো সময় লাগার বিপক্ষে তিনি৷

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, একটি জাতিকে সমৃদ্ধ করতে টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য৷ তাই টেকসই উন্নয়নের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে হবে৷এ জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহারে আমাদের সতর্ক হতে হবে৷ আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন উদ্বৃত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারি৷অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সম্মেলনের আহ্বায়ক ড. কাজি খলিকুজ্জামান৷