16-08-14-PM_ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দৈনিকবার্তা-ঢাকা : ইতিহাস কখনো বিশ্বাসঘাতককে ক্ষমা করে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়বেঈমান হলেন খন্দকার মোশতাক৷ বিশ্বাসঘাতকতা করে মীর জাফর যেমন তিন মাসের বেশী ক্ষমতায় থাকতে পারেননি ঠিক তেমনি মোশতাকও তিন মাসের বেমী ক্ষমতায় থাকতে পারিনি৷ 

তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে বিজয়ী বাঙালি জাতির ললাটে কলঙ্কতিলক এঁটে দিয়েছিল খুনিরা৷ বিজয়ী জাতিকে খুনির জাতি হিসেবে পরিচিত করেছিল৷ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৯তম শাহাদত বার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি৷বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করছেন সংসদ উপনেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী৷ 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনি ফারুক-রশিদ সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে সরাতে হলে খুন করা ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো গত্যন্তর ছিল না৷ তারা জিয়াউর রহমানের কাছে সমর্থন চাইলে তিনি নীরব সম্মতি দেন, সহায়তার ইঙ্গিত করেন৷আর এটি প্রমাণ করে, বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জিয়াও জড়িত ছিলেন৷ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রের এই বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানো হয়েছিল ৭৫ এর পরে৷ কিন্তু জনগণের চাপে তা ধরে রাখতে পারেনি৷ জিয়াউর রহমান সংবিধান পরিবর্তন করে মানবতাবিরোধী রাজাকার আলবদরদের দেশে ফিরিয়ে আনে৷বঙ্গবন্ধুর নাম, স্বাধীন দেশকে পাকিস্তানের প্রদেশ বানানোর ষড়যন্ত্র করেন তিনি৷ 

এ নির্মম হত্যাকাণ্ড কোনো ব্যক্তি বিশেষকে হত্যাকাণ্ড নয় বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী মহল এর মাধ্যমে বাঙালি জাতির বিজয় ও স্বাধীনতাকে নস্যাত করে দিতে চেয়েছিল৷ বাংলাদেশের মানুষকে তারা চিরদিন পদাবনত, পদদলিত করে রাখতে চেয়েছিল৷ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাত্র ১৫ দিন আগে আমরা দেশ ছেড়ে গিয়েছিলাম৷ আমাদের দুর্ভাগ্যের যে আমরা সেদিন বাংলার মাটি ছেড়ে গিয়েছিলাম৷ এরপর এসেছি ১৯৮১ সালে ৷ জিয়াউর রহমান আমাদের দুই বোনকে দেশে ফিরতে দেননি৷ 

এসময় বেঈমানরা কখনো ক্ষমতায় থাকতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বেঈমানরা কখনো ক্ষমতায় থাকতে পারে না মীর জাফর পারেনি, জাতীয় বেঈমান খন্দকার মোশতাকও পারেনি৷ মাত্র ৩ মাসও তারা ক্ষমতায় থাকতে পারেনি৷ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন,উপরে আল্লাহ ছাড়া আমি কারো কাছে মাথা নত করিনা৷ কাউকে ভয় পাই না৷ হারিয়েছি সব৷ পরিবারের আর কেউই বেঁচে নেই৷ আর কোনো কিছু হারাবার ভয় নেই আমার৷ তাই আমার জীবন আমি এদেশের মানুষের জন্য উত্‍সর্গ করেছি৷ 

তিনি বলেন, আমি সুযোগ পেয়েছি এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করার৷ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই৷এসময় তিনি আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, মরেও যাতে বাবাকে গিয়ে বলতে পারি যে মানুষকে আপনি এতো ভালোবেসেছিলেন, সেই মানুষের জন্য কিছু একটা করে আসতে পেরেছি৷ 

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা ৩৯ বছর ধরে শোকে দিন কাটাচ্ছি৷ আমাদের দুর্ভাগ্য, সেদিন আমরা দেশের বাইরে ছিলাম৷ পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আমরা আর দেশে আসতে পারিনি৷ কারণ জিয়া আমাদের দেশে আসতে দেয়নি৷ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হয়েও কখনো রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকেননি৷ তিনি ৩২ নম্বরে সব সময় সাধারণ জীবনযাপন করতেন৷সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়৷ শুধু তাকে নয়, পরিবারের অন্য সদস্য আমার ভাই, ভাইয়ের বউ, আমার মা, আমার ছোট ভাই রাসেলকে হত্যা করা হয়৷ শেখ হাসিনা বলেন, যারা এ দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে৷ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে গণহত্যা চালিয়েছে, যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন; অনেকের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন৷ 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, নুহ-উল আলম লেনিন, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা৷