kalu_BC-13-08-14-D_42_2দৈনিকবার্তা: মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা নদীতে লঞ্চ পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় ইয়াকুব ব্যাপারী নামে স্থানীয় ক্ষমতাসীন এক আওয়ামী লীগ নেতাকে দায়ী করেছেন লঞ্চটির মালিক আবু বকর সিদ্দিক ওরফে কালু মিয়া।
বুধবার দুপুরে র্যাব সদর দফতরে সংস্থাটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
এর আগে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে কালু মিয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব-৭। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় র্যাবের সদর দফতরে আনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কালু মিয়া বলেন, ‘ঈদের আগে ও পরের ১০ দিন লঞ্চের নিয়ন্ত্রণ মালিকদের থাকে না। এই নিয়ন্ত্রণ বিআইডব্লিউটিএ এবং ঘাট কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেয়। এজন্য লঞ্চডুবির ঘটনার দায় তাদেরই নিতে হবে।’
পিনাক-৬ ফিটনেসবিহীন চালানো হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘লঞ্চের সকল কাগজপত্র আমার কাছে আছে। এখন যাই বলি না কেন কোনো লাভ নেই। বড় কথা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল, লঞ্চটি পরিবর্তন করা প্রয়োজন ছিল, করা হয়নি।’
এ সময় কালু মিয়া এই লঞ্চডুরিব পেছনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াকুব ব্যাপারীকে দায়ী করেন। বলেন, এই লোক আগে বিএনপির রাজনীতি করতো।
তিনি বলেন, কাওড়াকান্দি থেকে লঞ্চটি ছেড়ে আসার পর কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে আরও ৮০ জন যাত্রী ওঠেন। ওই ঘাটে লঞ্চ না ভিড়লে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ইয়াকুব বেপারীর রোষানলে পড়তে হয়। শুধু তাই-ই নয়, ঘাটে লঞ্চ না ভিড়ালে তারা মারধরও করেন।
কালু মিয়া আরও বলেন, ওই ঘাট থেকে ৮০ থেকে ৯০ জন যাত্রী লোক উঠলে মাত্র ১০ জনের টিকিটের টাকা পরিশোধ করা হয়। বাদবাকি টাকা ইয়াকুব বেপারী নিজে ভোগ করেন।
পিনাক মালিক জানান, ১৯৯১ সালে তিনি বরিশালের মনিরুজ্জামান খোকনের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে পিনাক-৬ লঞ্চটি কেনেন। প্রথমে তিনি পাঁচ লাখ ও পরে কিছু কিছু করে টাকা দিতেন; যার ফলে মালিকানা আগের মালিক খোকনেরই রয়ে গেছে।
এই দুর্ঘটনার জন্য অনুতপ্ত কিনা সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে পিনাক-৬-এর মালিক বলেন, ‘আমি যদি একটা বড় লঞ্চ কিনতে পারতাম, তাইলে দুর্ঘটনা ঘটতো না। যারা মারা গেছে, তাগো লাইগা আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আমার লঞ্চ ব্যবসার জীবনে এতো বড় দুর্ঘটনা কখনও হয় নাই।’
তিনি জানান, ‘যারা মারা গেছে, তাদের জন্য আমার খুব কষ্ট লাগছে। আমার বুকটা ফাইটা গেছে। তবে আমি ভয়ে পালায় গেছিলাম।’
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মিডিয়া পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান কালু মিয়াকে গ্রেফতারের তথ্য তুলে ধরেন। বলেন, পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার পর থেকে কালু মিয়া পলাতক ছিলেন। অনুসন্ধানে নেমে চট্টগ্রাম থেকে র্যাব তাকে আটক করতে সক্ষম হয়। তিনি বার বার স্থান পরিবর্তন করছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিনাক-৬ লঞ্চ চালকের কোনো সনদ ছিল না। লঞ্চেরও ফিটনেস সনদ ছিল না। লঞ্চে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও ফায়ার ইস্টিংগুইশার ছিল না। শুধু তাই-ই নয়, যাত্রী নিরাপত্তায় পিনাক-৬ লঞ্চে কোনো ধরনের ব্যবস্থাই ছিল না।
বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি ছাড়া লঞ্চ রুটে চলতে পারে না। তা হলে কী করে পিনাক-৬ চলাচল করেছে এমন প্রশ্নে মুফতি মাহমুদ বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাই তদন্তে এসব বের করবে। তবে যাদের নাম পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, পিনাক-৬ লঞ্চটি মালিক কালু মিয়ার বড় ছেলে লিমন (২৭) ও তার ভাতিজা রাতুল (২৩) চালাতো।
পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার মামলায় অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান র্যাবের মিডিয়া পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
গত ৫ আগস্ট মাওয়া ঘাটের পরিবহন ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর ভূইয়া বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জের লৌহগঞ্জ থানায় লঞ্চ মালিক আবু বক্কর সিদ্দিক, লঞ্চের চালক নবী ও কাওরাকান্দি ঘাট পরিচালনাকারী আবদুল হাই সিকদারসহ ছয়জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া আসার পথে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে আনুমানিক দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি। আট দিন পদ্মায় তল্লাশি চালিয়ে নৌযানটির অবস্থান সনাক্ত করতে না পেরে সোমবার উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এ নিয়ে লঞ্চডুবির পর নদী থেকে মোট ৪৮টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। সনাক্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ২৭টি লাশ। চেনার উপায় নেই এমন ১৭টি লাশ ডিএনএ নমুনা রেখে দাফন করা হয়েছে শিবচরে। আর লঞ্চের যাত্রীদের স্বজনদের পাওয়া অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে স্থানীয় প্রশাসনের হিসাবে এখনো ৬২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।