দৈনিকবার্তা: এই সপ্তাহেই ঘোষণাটা আসার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, এমপি জানালেন সাকিব আল হাসানের আপিল আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্তটা একটু দেরী করেই নেয়া হতে পারে—এ মাসের ১৫ তারিখও হতে পারে সেটা। তবে এই খবরে সাকিবের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ, খোদ বোর্ড সভাপতি গতকাল অনেকটাই পরিষ্কার করে দিলেন যে, সাকিবের শাস্তি কমছে।
শুধু শাস্তি কমছে এমন কথা নয়। নির্দিষ্ট করে বললে আগামী মাসে ইনচিয়নে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান গেমসের আগেই সাকিবের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন সভাপতি। সেই সঙ্গে পরিষ্কার বলে দিলেন যে এশিয়ান গেমসে খেলার পাশাপাশি সাকিব যাতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ও প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পারেন, সেটাও নিশ্চিত করা হবে।
আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালের জন্মবার্ষিকীতে ক্লাব প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে পাপন ইঙ্গিত দিলেন যে, সাকিবের আপিল বিবেচনায় বোর্ড সভাটি পেছাতে পারে আরও সপ্তাহ খানেক, ‘আট তারিখে একটা সভা ডাকা হবে, এ ব্যাপারে আমরা আজ কথাও বলেছি। তবে এটাও ঠিক যে, খুব তাড়াহুড়ার কারণ নেই। কারণ ও তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যেতে পারছেই না। সে ক্ষেত্রে আরও সপ্তাহ খানেক পরে হতে পারে মিটিংটা।’
তবে পাপন পরিষ্কার বলে দিলেন, জিম্বাবুয়ে সিরিজ তো বটেই, এশিয়ান গেমস দলেও সাকিবকে রাখতে চান তিনি, ‘সাকিবের বর্তমান ব্যবহারে বিসিবি খুশি। তাই বিসিবির এখন বিবেচনার বিষয় হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পরে আরও দু’টি সিরিজ আছে, একটি (আগামী মাসে) এশিয়ান গেমস অন্যটি ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। সে দু’টি সিরিজে সাকিব যাতে খেলতে পারে সে বিষয়েই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
যদিও বোর্ড সভার বাইরে সভাপতি সিদ্ধান্ত জানাতে রাজি নন। তবে কোনো রাখঢাক না করেই সভাপতি বলে দিলেন সাকিব প্রিমিয়ার লিগও খেলবেন, ‘প্রিমিয়ার লিগে তার খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। সাকিব যদি জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলে তাহলে প্রিমিয়ার লিগও খেলতে পারবে। তবে এসব বিষয়ে বোর্ডে মিটিংয়েই সিদ্ধান্ত হবে। সব মিলে আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে সাকিবের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত আসবে।’
এর আগে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলতে যাওয়া, অনাপত্তিপত্র না নেয়া, কোচের সঙ্গে আপত্তিকর বাক্য বিনিময়সহ নানা কারণে বিসিবি সাকিবকে ছয় মাসের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে এবং দেড় বছরের জন্য বাতিল করা হয় তার অনাপত্তিপত্র।
এরপর সাকিব তার শাস্তি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন, ক্ষমা চেয়েছেন। তবে সেই শাস্তি কমলেও তার ক্যারিবিয় সফরে যে যাওয়া হচ্ছে না, তাতে সন্দেহ নেই। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সোনালী সব পারফরম্যান্স তো আছেই, সাকিবের ক্যারিয়ারেরই অন্যতম প্রিয় প্রতিপক্ষ সবসময়ই যেন এই ক্যারিবিয়রা।
মাশরাফির হঠাত্ ইনজুরিতে ২০০৯ সালের সেই সফরে হঠাত্ পেয়েছিলেন অধিনায়কত্ব। তারপর যা করেছিলেন সেটা তো ইতিহাস। একেবারে সামনে থেকে ব্যাটে-বলে অসাধারণ পারফরম করে দলকে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জিতিয়েছিলেন। ওয়ানডে সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন।
এরপর ২০১২ সালে আবার যখন বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকাখচিত দলের বিপক্ষে অসাধারণ এক টেস্ট সিরিজ কাটালো; সেখানেও সামনে থাকা নায়ক এই সাকিব।
শুধু পরিসংখ্যান দেখলেও ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। এমনিতে সাকিবের টেস্ট ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড় হল ৩৭.৯৬; সেটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৩.২০। টেস্টে ক্যারিয়ার বোলিং গড় সাকিবের ৩৩.৩৯; ক্যারিবিয়দের বিপক্ষে ২০.০৩! টেস্টে চার বার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেটের খুব কাছে গেছেন; ৫ বার ফিফটি ও ৪ উইকেট নিয়েছেন।
ওয়ানডেতেও পরিসংখ্যানটা প্রায় একইরকম।
আফসোস এখন একটাই ক্যারিবিয়দের এই ঘাতক সাকিবকে এবার পাবে না বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের জন্য একটু অনুপ্রেরণার তথ্য আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে ইনজুরির কারণে দলে ছিলেন না সাকিব। সেবার সতীর্থরা তাকে একটা সিরিজ জয় উপহার দিয়েছিল। এবারও কী তাই হবে?