দৈনিক বার্তা- চাঁপাইনবাবগঞ্জ,৩আগষ্ট : চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মহানন্দা নদীরধার হতে পারে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র৷ উপজেলাটিতে রযেছে বিশাল ও পুরোনো আমের বেশ কিছু বাগান৷ সিল্ক উত্পাদনের জন্যও বিখ্যাত এ এলাকা৷
দেশের উত্তরাঞ্চলের একদিকের শেষ প্রানত্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সব দিক দিয়ে অবহেলিত প্রত্যনত্ম এই উপজেলা ভোলাহাট৷ একেবারেই তিনদিক নদীবেষ্টিত ভারতীয় সীমানত্মবর্তী উপজেলাটি মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত৷ আর বিন্দু বিন্দু করে সিন্ধু গড়তে দরকার সরকারের সুদৃষ্টি আর দীর্ঘমেয়াদের সঠিক পরিকল্পনা৷ সঠিক সিদ্ধানত্মটি সরকারীভাবে বাসত্মবায়িত হলে ভোলাহাট উপজেলার সোয়া লাখ মানুষের মধ্যে হাজার বেকারদের হতে পারে কর্মসংস্থানের পন্থা ও আনন্দ-বিনোদনসহ পর্যটকদের পদচারণার সৌখিন ভূমিস্থল৷ মূল সেই স্থানটি উপজেলা শহরের প্রানত্মের ‘বজরাটেক’- আলীসাহাসপুর-মুন্সিগঞ্জ গ্রামের পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীর পশ্চিম পাশের ৫’শ মিটার এলাকা৷ এ এলাকা জুড়ে সুপরিকল্পিতভাবে যদি তৈরী হয় একটি ‘পার্ক’ বা সেই ধরণের আধুনিক পর্ষটকদের বিনোদন স্থান তবে ভোলাহাট উপজেলার হাজার মানুষের এটি হবে কর্মসংস্থানের কেন্দ্রস্থল৷ সেইসাথে মোটা ধরণের আয় হতে পারে সরকারের৷
এ ব্যাপারে সর্বপ্রথম যার কথাটি স্মরণ করতে হয় তিনি হলেন ভোলাহাট উপজেলায় অবস্থানরত সে সময়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম আজমের কথা৷ ২০০৯ সালের বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ পালনের জন্য এলাকার পুরোনো আমলের প্রায় এক-দেড়শ গরুর গাড়ীতে করে একটি র্যালী উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদে এসে শেষ হয়৷ পরে উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন এনজিও’র প্রধানগণ বজরাটেক গ্রাম দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর শাখা মহানন্দা নদীর ধারে সবার উপস্থিতির মাধ্যমে ঘটে বিশাল মিলনমেলা৷ যা এলাকার মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে৷
সেই থেকে বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে বিশেষ করে দু’ঈদের দিন ও অন্যান্য দিনগুলিতে নদীর ধারে বসে একটু মুক্ত আকাশের বিশুদ্ধ হাওয়া পেতে খোলামেলা বেড়ানো, চাতক-চাতকীর প্রেম-ভালবাসা এমনকি স্বামী-স্ত্রীসহ ছেলেমেয়েদের নিয়ে আনন্দ-বিনোদনের জন্য উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত আবালবৃদ্ধবণিতা এসে জমায়েত হয়ে থাকে এ স্থানে৷ যে দৃশ্যটি এ বছর পরিলক্ষিত হয়েছে তা হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন বিকাল হতে সন্ধ্যা পর্যনত্ম সকল সত্মরের মানুষের ঢল৷ যে ঢলের স্রোতে ভেসে এসেছে পায়ে হেঁটে চলা মানুষ, রিঙ্া-অটোরিঙ্া, ভুটভুটি, সাইকেল-মটরসাইকেল,মাইক্রোবাস এমনকি বাস পর্যনত্ম৷ ভিড়ে যেন পা রাখার জায়গাটি পর্যনত্ম নেই৷
২৯ জুলাই মঙ্গলবার সকালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষ করেই শুরু হয় উপজেলার দুর-দুরানত্ম থেকে আসা মানুষের ঢল নামে মহানন্দা নদীর ধারে একটু মুক্ত বাতাসের আশায় আর সেই যুগের নৌকা-লঞ্চে ভ্রমণের লোভনীয় দৃশ্যও চোখে পড়ে৷ উলেস্নখ্য, আগে ক্ষমতায় থাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যাকে এলাকায় ভ্যান চেয়ারম্যান নামে জানেন, তিনি তার ক্ষমতায় থাকাকালীণ ঐস্থানটিতে সকলের আরাম-আয়েসের জন্য ৫ টি টাইলস্ খচিত স্থায়ী চেয়ার করেছিলেন৷ যা এলাকার মানুষের কাছে স্মরনীয় এবং বরণীয় হয়ে রয়েছে এখনো৷ বজরাটেক গ্রামে অবস্থিত ৫০০ মিটার নদীর পাড় পুন:খনন করে বাধাই করে পরিকল্পিতভাবে আনন্দ-বিনোদনের জন্য একটি পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র তৈরী করা সময়ের দাবী এখন৷ আর সে ভাবনা রয়েছে বর্তমান সরকারের৷ কথাগুলি বললেন এলাকার বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞজন৷ তারা আরো বলছেন পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রটি তৈরী হলে সেখানে আসবে দেশ-বিদেশের পর্যটকবৃন্দ৷ সেই সাথে সাথে দেশের মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষা সফরসহ সাধারণের জন্যে উন্মুক্ত থাকতে পারে পিকনিক বা বনভোজনের জন্য স্থান৷ যা পর্যায়ক্রমে সরকারের একটি মোটা অংকের আয়ের উত্স হতে পারে বলে সচেতনমহল তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন৷
মহানন্দা নদীরধারে ঘুরতে আসা স্বামী-স্ত্রী ছোট্ট বাচ্চাটিকে নিয়ে আসা এনজিও উদ্দীপনের কোষাধ্যক্ষ রওশন আলীর কাছে মহানন্দা নদীরধারে পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সুপরিকল্পিত ভাবে তৈরী হলে নি:সন্দেহে উপজেলার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং লাখ মানুষের আনন্দ-বিনোদনসহ বনভোজনের জন্য নামীদামী পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি৷
উপজেলার কানারহাট এলাকার ওয়েন আইসক্রীম ফ্যাক্টরীর সত্বাধিকারী উদীয়মান যুবক সাবিরুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, আমাদের উপজেলাটি সার্বিক দিকদিয়ে একেবারেই অবহেলিত৷ মহানন্দার নদীর পাড়ে এ পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রটি বর্তমান সরকার বাসত্মবায়ন করলে যেমন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে, তেমনই দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষের আনন্দ-বিনোদনের জন্য একটা স্থায়ী জায়গা হবে নি:সন্দেহে এটা আশা করা যায় ৷ আর ভোলাহাটের সিল্কের,সীমানত্মের বড় আমবাগানগুলির আকর্ষন তো রয়েছেই৷
Photo – Collected ( Sharif Ripon)