দৈনিক বার্তা- স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর মালিবাগ রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের শ্যালক সোনারগাঁও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলমকে ধরতে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে পুলিশ। রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেটকার থেকে নূর হোসেনের নামে লাইসেন্সকৃত একটি পিস্তল উদ্ধার হয় যেটির কোনো খোঁজ পাচ্ছিলো না পুলিশ।
এ ঘটনার পর নূর হোসেনের লাইসেন্সকৃত সন্ধান না পাওয়া দশমিক ২২ বোরের আরেকটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে এবং তার শ্যালক নূরে আলমকে গ্রেফতার করতে রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে পুলিশ। তবে প্রাইভেটকারটি কোথায় যাচ্ছিলো সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।গতকাল রোববার কমলাপুর জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘নূর হোসেনের লাইসেন্সকৃত ১১ অস্ত্রের মধ্যে ৯টি পুলিশের কাছে জমা থাকলেও দুটির কোনো হদিস ছিল না। ক্ষতিগ্রস্ত প্রাইভেটকারটি থেকে উদ্ধারকৃত পিস্তলটির সঙ্গে ২২ বোর রাইফেলের গুলী উদ্ধার হওয়াতে পুলিশ ধারণা করছে রাইফেলটিও এই চক্রের কাছেই রয়েছে। মাইক্রোবাসে থাকা যাত্রীদের গ্রেফতার করতে পারলেই অস্ত্রটি উদ্ধার করা যাবে। তাই শনিবার রাতভর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। ওসি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি নূর হোসেনের যে দুটি অস্ত্রের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না সেগুলোর মধ্যে একটি আমরা উদ্ধার করেছি। বাকি দশমিক ২২ বোরের রাইফেলটিও তাদের নিকট রয়েছে। কেননা সেটির গুলী আমরা ইতোমধ্যে উদ্ধার করেছি। তাদের সঙ্গেই ওই ২২ বোরের রাইফেলটি রয়েছে। সেটিও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মালিবাগ রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেটকার থেকে রিভলবার এবং গুলী উদ্ধারের ঘটনায় রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) বাদী হয়ে একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করেছে। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে নূর হোসেনের শ্যালক সোনারগাঁও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলমকে। তাকে গ্রেফতারে রাজধানীসহ নারায়াণগঞ্জে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ ওসি আরো বলেন, ‘গাড়ি এবং অস্ত্রের মালিক চিহ্নিত হয়েছে। তবে গাড়ির ভেতরে এম এ রহমান ছাড়া আর কে কে ছিল তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদšেত আরো অগ্রগতি হলে জানা যাবে আসলে কি উদ্দেশ্যে তারা কোথায় যাচ্ছিলেন। তাছাড়া আইসিউতে ভর্তি এম এ রহমান একটু সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি জানা যাবে।
তিনি বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল এমনকি শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নূরে আলম খানকে আটক করতে আমরা অভিযান চালিয়েছি। সোর্স লাগানো রয়েছে। শিগগিরই তাকে আটক করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’ জিআরপি থানা সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া পিস্তলটির মালিকের সন্ধান জানতে শুক্রবার রাতে জিআরপি থানা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার থানায় বেতারবার্তা পাঠানো হয়। ওই বার্তা পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ শনিবার ঢাকা জিআরপি থানায় আসে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ পিস্তলের গায়ে লেখা নম্বরের সঙ্গে তাদের কাছে থাকা কাগজপত্র মিলিয়ে নিশ্চিত হয়, এটি নারায়ণগঞ্জের নূর হোসেনের। তিনি সেখানকার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি। তিনি ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের প্রতিনিধি কলকাতায় গিয়ে পৌঁছেছেন। শিগগিরই নূর হোসেনের পক্ষে আদালতে জামিনের আবেদন করবেন তিনি। শনিবার কোর্ট লকআপে যাওয়ার পথে নূর হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তাই প্রাইভেটকারে থাকা যাত্রীরা কলকাতা যাচ্ছিলেন কিনা এমনটাও মিলাতে পারছে না পুলিশ। ওসি আব্দুল মজিদ বলেন , ‘নূর হোসেন ও তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি এখন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের হেফাজতে আছে। বাকি দুটির হদিস ছিল না। শুক্রবার দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোবাস থেকে উদ্ধার হওয়া পিস্তলটি এর একটি। খোয়া যাওয়া দুটি অস্ত্রেরই লাইসেন্স পুলিশ ইতোমধ্যে বাজেয়াপ্ত করেছে।’
এর আগে শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে মালিবাগ রেলক্রসিংয়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে থেকে আসা চট্টলা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় একটি প্রাইভেটকার দুমড়ে-মুচড়ে যায়। রেলক্রসিংয়ের প্রতিবন্ধক ফেলার সময় বিপরীত দিক দিয়ে ঢুকে দ্রুত প্রাইভেটকারটি বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পরে প্রাইভেটকার থেকে গুলী ভর্তি একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয় যা পরে নূর হোসেনের বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। আর ওই প্রাইভেটকারটি ছিল নূর হোসেনের শ্যালক নূরে আলমের।